চাঁদপুরে বখাটে যুবকদের হামলায় ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যু

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ বখাটে যুবকদের হামলায় আহত ব্যাংকের সিকিউটিরিটি গার্ড মো. সুমন খান (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
৯ এপ্রিল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ময়না তদন্ত শেষে আজই তার মরদেহ চাঁদপুরে নিজ বাড়ীতে আনা হবে। এর আগে গত ৫ এপ্রিল রাতে ৫০ টাকা হাওলাদ না দেয়াকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ বখাটে যুবকরা রাতে ডিউটিতে যাবার পথে সুমনকে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। মারাত্মক আহত সুমন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর মিডল্যন্ড হাসপাতাল এবং সবশেষে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে হেরে যায়।
সুমন রঘুনাথপুর খান বাড়ির মৃত আঃ কাদির খানের ছেলে। সে চাঁদপুর শহরে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করতেন। স্ত্রী রুনা ও শুভ (৮) নামে তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
এদিকে সুমনের মৃত্যুর ঘবর পেয়ে তার আত্মীয় স্বজন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘটনার সাথে জড়িত বেপারী বাজার এলাকার তোফায়েলের বসতঘর ভাংচুর করেছে।

খবর পেয়ে শুক্রবার বেলা ১১টায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ নিহত সুমনের বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে পুরাণবাজার ফাঁড়ির পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত সুমনের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবদুল হক খান মিন্টু ও আরেক ভাই বেলায়েত খান বলেন, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওয়াবদা রাস্তার উপরে আমার ছোট ভাই নিহত সুমনের কাছ থেকে একই এলাকার গাজী বাড়ির দেলোয়ার গাজীর ছেলে নাজমুল গাজী ৫০ টাকা হাওলাত চায়। টাকা হাওলাত না দেয়ার কারণে তাদের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাদেরকে শান্ত করে বিদায়। পরে নাজমুল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সাড়ে ৭টার দিকে সুমন টিফিন ক্যারিয়ারে রাতের খাবার নিয়ে ডিউটিতে যাবার সময় নাজমুলের নেতৃত্বে রগুনাথপুর এলাকার গাজী বাড়ির মিজান গাজীর পুত্র সুফিয়ান, খোকন গাজীর পুত্র তামিম, ভাঙ্গাপোল এলাকার মোস্তফা হাজীর পুত্র জিহাদ, বেপারী বাজার এলাকার বাচ্চু গাজীর ছেলে তোফায়েলসহ ১৫/২০ জনের একদল সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক তার উপর হামলা চালায়। তারা লোহার পাইপ, লাঠি দিয়ে সুমনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
তিনি বলেন, আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাপসালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর মিডল্যান্ড হসপিটালে দু’দিন চিকিৎসা নেয়া অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল হসপিটালের চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে। সেখানে দুইদিন চিকিৎসা থাকার পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
রঘুনাথপুর এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঘটনার সাথে জড়িত যুবকরা এর আগেও এলাকায় এই ধরণের হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। দুই মাস আগর দোকান ঘর এলাকায় রজমান নামে এক রাজমিস্ত্রি যুবকবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ওই হত্যা মামলার আসামীও। তারা অনেকে মাদকের সাথে জড়িত। প্রায় সময় তারা ছোট খাট বিষয় নিয়ে এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি করে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার সাংবাদিকদের জানান, সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছি। এই ঘটনায় অবশ্যই মামলা দায়ের করা হবে এবং দোষিদের আটক করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যাকে অরাজকতার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারী থাকবে

শেয়ার করুন

Leave a Reply