চাঁদপুরে মানহীন মাস্ক বিক্রি হচ্ছে যত্রতত্র

৫ টাকার মাস্ক বিক্রি হয় ১০ টাকায়
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের মুদি দোকান, চা স্টল, ফার্মেসীসহ বিভিন্ন রকম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাচ্ছে মাস্ক। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০, ১৫০ বা তারও বেশি দামে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। মহামারি করোনাকে কিছুটা ঠেকাতে অত্যাবশকীয় এবং বাধ্যতামূলক এই মাস্কে আছে বড় ধরনের কারসাজি। আছে ভয়ানক আতংক। কারণ, পয়সা দিয়ে কেনা এই মাস্কের বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সম্মত তথা ভাইরাস প্রতিরোধী হিসাবে এটি কাজ করে কিনা বা আদৌ কোন্ মাস্কটা ব্যবহার করা উত্তম, তার জন্য স্থানীয় কোন নির্দেশনা নেই, খবরদারি নেই, নেই মনিটরিং। ফলে ক্রেতারে হচ্ছে প্রতারিত এবং এক শ্রেনির ব্যবসায়ী এসব মাস্ক বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো, চাঁদপুরের সর্বত্র মাস্ক বিক্রি হচ্ছে হরদম। জেলা পর্যায় থেকে শুরু ৮ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আর এই মাস্ক বিক্রি করে অধিক মুনাফা লুটছেন এক শ্রেনির ব্যবসায়ীরা। এখানে বেশির ভাগ মাস্কই ব্যবহার করা হয় ৫, ১০, ২০ জোর ১০০ টাকার। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, এই মাস্ক খুচরা বাজারে অর্ধেক লাভে বিক্রি করে দোকানিরা। চলতে গেলেই দেখা যায়, ছোটবড় পলিথিনের মধ্যে নীল রঙের মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছে মুদি দোকানী বা ঔষধের দোকানী। যে মাস্কটির প্রকৃত মূল্য ৫ টাকা। আর সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়! ১০ টাকার টা ২০ টাকায় এমন সবরকমের মাস্কের বেলাতেই। অথচ ৫ টাকার মাস্কটি ঐ টাকায় বিক্রি করলেও দোকানির লাভ ২ টাকারও বেশি থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে – এই মাস্কই কেউবা বাক্স ভরে নিয়ে যাচ্ছেন।
এখন সচেতন মানুষের মনে এবং কোন কোন চিকিৎসকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই মাস্ক আসলেই কতোটুকু প্রটেকশন দিচ্ছে? এর উত্তর মিলছে না। এই প্রতিবেদক গতকাল জনৈক ক্রেতাকে মুদি দোকান থেকে মাস্ক কিনে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলেন- এক ডজন মাস্ক যে কিনলেন কতো? আর এতোগুলো? বললেন-৷ পরিবারের সবার লাগে, আর আমরা সবাই মাস্ক ব্যবহার করি! এগুলো ১০ টাকা করে প্রতিটি ১২০ টাকা ডজন কিনলাম। কিন্তু এটা যে, ভাইরাস আক্রান্ত থেকে বা নাক মুখ দিয়ে না ঢুকবে সেটা কিভাবে শিউর হলেন? -উত্তর সহজ! সরকারিভাবে বলছে মাস্ক পরতাম, তাই পরছি, কিন্তু এইডা যে আসল বা নকল ভাই হেইডা কমু কেমনে!
দোকানির কথা – ভাই আমরা পাইকারি কিন্না আনি, খুচরা বেচি। কিনা পরে বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে – একই ধরনের মাস্ক কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হয় ৫ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো, মাস্ক না পড়ার কারনে মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট হয়, জরিমানা হয়। এটি এখনো চলোমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মাস্কের মান বা দামের উঠানামা এসব বিষয়ে কোনরকম নজরদারি নেই। যার ফলে মানুষ একদিকে মাস্ক কিনে ধোকা খাচ্ছে অন্যদিকে শুধুই ব্যবহার আর বিধিকে সম্মান করে মানুষ মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকছে।
ডা. পিযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, বাজারে পাওয়া বেশিরভাগ মাস্কই ভংচং। পরার জন্য পড়া। যেহেতু মাস্ক বাধ্যতামূলক তাই সার্জিক্যাল মাস্ক পড়াই উত্তম। এটির মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক যেটির দাম ৭০০ টাকার মতো সেটি ব্যবহার করা যায়। তা সম্ভব না হলে কেএন-৯৫ যেটির দাম ৩০ টাকা সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পেরে। এগুলোও ভাইরাস প্রটেকশন দিতে পারে। এসব দেখার জন্য প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ দেখা দরকার।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম বলেন, ৫-১০ টাকায় যে মাস্কগুলো বিক্রি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, বাজারে যে মাস্কগুলো আছে তা সার্জিক্যাল মাস্ক কি না, এগুলো মান সম্পন্ন কি না তা যাচাই-বাছাই করে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সার্জিক্যাল মাস্কগুলো চাইনিজ হলে ভালো। কিন্তু তা না হলে তা কতটুকু কার্যকরী তা দেখার বিষয় রয়েছে। আবার কাপড়ের মাস্কগুলোও ভালো। এগুলোতে সেফটি আছে। তবে এর মধ্যে বাজারে কিছু ভেজাল মাস্ক ঢুকে গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করার করা যাচ্ছে না। তবে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাস্ক যাচাই-বাছাই করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply