চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের নতুন প্রার্থী ওচমান গণি পাটওয়ারী

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিদায়ী চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটওয়ারীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের উদৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারীকে দলের প্রার্থী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের মনোনীত প্রার্থী করা হয়েছে ওচমান গনি পাটওয়ারীকে। দলের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারকেও জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী বলেন, আমাকে দলের মনোনীত প্রার্থী করার বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক ওবায়েদুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ওচমান গণি পাটওয়ারী ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার বদলে এবার চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউসূফ গাজীকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে প্রতারণার মামলায় আদালত তাকে ৫ বছরের দাÐাদেশ দেয়ায় যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী চাইলে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আগামী তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
জানা গেছে, দিয়াশলাই ফ্যাক্টরিতে কাঠ সরবরাহের যৌথ ব্যবসার প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে ২০০৪ খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন স্থানীয় হুমায়ুন কবির।
ওই মামলায় আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিলেও ২০০৮ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খুলনা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আপিল শুনানি শেষে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ রায় তিনি গ্রেফতার তথা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে সাজা ভোগের জন্য খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করে দণ্ডাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১৭ সালে রিট পিটিশনটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে বিচারপতি মাইনুল হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালত দণ্ডাদেশের স্থগিতাদেশ বাতিল করে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর ইউসুফ গাজী উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ২০১৭ সালে একটি পিটিশন দায়ের করলেও আদালত দণ্ডাদেশ স্থগিত না করে ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু পিটিশন দায়ের করার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তা খারিজ হবে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে লিভ টু আপিল করেন।
তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী চাঁদপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী ওসমান গনি পাটওয়ারী। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া ওসমান গনি পাটওয়ারী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, যেহেতু আসামি আপিল আদালতের রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণ না করে পলাতক থাকে এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে সাজা পরোয়ানা জারি করতে দেননি- তাই তিনি বর্তমানে আইনের চোখে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে চিহ্নিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ৬(২)ঘ ধারা অনুযায়ী ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধের কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার যোগ্য হবেন না।’ এ অবস্থায় তার নির্বাচনি মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য ও তিনি নির্বাচন করার অযোগ্য।
এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন ইউসুফ গাজী। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে এক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। ইউসুফ গাজী বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা পরিষদ নির্বাচন- ২০২২ এ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্ত রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। বাতিলের বিরুদ্ধে আমি আপিল করব এবং আশা করি ন্যায় বিচার পাব- ইনশাআল্লাহ। তবে তার আগেই নতুন প্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারীকে মনোনীত করার কথা জানালো।
উল্লেখ্য, আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন সাবেক প্রশাসক লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী। কিন্তু তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলীয়ভাবে কাউকে আর সমর্থন দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের ৩ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
গত ২৩ আগস্ট আসন্ন চাঁদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শেয়ার করুন