চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে মেঘনা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
মেঘনা নদীর ওপর চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ও এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই সাথে গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা ব্যয়ে ছয়টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত কয়েক মাস ধরেই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে মেঘনা সেতু বা টানেল নির্মাণের ঘোষণা দেন।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভার্চুয়াল এ সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।
বর্তমানে চাঁদপুর-শরীয়তপুর পথে মেঘনা নদীর ওপর ফেরি চালু রয়েছে। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট আর অন্য প্রান্তে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট। দুই ফেরিঘাটের মধ্যে দূরত্ব নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার। এখানে সেতু নির্মাণের সমীক্ষার জন্য দরপত্রও আহ্বান করেছে সেতু বিভাগ। এ দুই ঘাটের দুই প্রান্তেই আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। জানা গেছে, ২০০১ সালে জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) দেশে যে পাঁচটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা দেয় তার মধ্যে শরীয়তপুরের আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এ সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ (বুধবার) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১২তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চারটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি এবং সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল।’
এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি ক্রয় প্রস্তাবে কমিটি অনুমোদন দেয়নি। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতর অন্য একটি প্রস্তাবে পুনঃদরপত্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫৬৬ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ১৬০ টাকা।
বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, ‘সেতু বিভাগের অধীন সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর ও গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়েকটস এস.এ, জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস এবং ডেভ কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। এছাড়া- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক স্পট মার্কেট থেকে ১১তম এলএনজি এওটি ট্রেডিং এজি, সুইজারল্যান্ড এর কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৮ টাকা।
তবে ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের ডব্লিউডি-০১ প্যাকেজের পূর্ত কাজ টিইসির সুপারিশ বাতিল করে পুনর্মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরেই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে মেঘনা টানেল বা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের ১১ নম্বর ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের আলুর বাজার এলাকায় নদী ভাঙন প্রতিরোধে সাতশ’ ২০ মিটার সতর্কতামূলক প্রতিরক্ষা কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টেলিকনফারেন্সে এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে।’ তিনি বলেন, চাঁদপুর-শরীয়তপুর মেঘনা টানেল বা সেতু করার পরিকল্পনা চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের সঙ্গে চাঁদপুর-শরীয়তপুরের যোগাযোগ সহজ হবে। ইনশাআল্লাহ পদ্মাসেতুর মতো এই স্বপ্নপূরণের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply