জনপ্রতিনিধি, বিভাগীয় প্রধানদের প্রতি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঠিক তথ্য ব্যাপক প্রচারের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, যে উদ্দেশ্যে উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় সভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অনুপস্থিতির কারণে। তিনি বলেন, আজকের সভায়ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় প্রধানগণ বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তার উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, আমি উন্নয়ন কমিটির সভার সভাপতি হিসেবে একথা জানান দিতে চাই, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান বা প্রতিনিধিগণ যদি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত না থাকেন, তাহলে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অনুপস্থিতি সর্ম্পকে জানানো হবে।
গতকাল ২৩ মে ২০২১ রবিবার বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনও আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান বা কর্মকর্তাগণ এই লকডাউনে তার কর্মস্থল বা কর্ম এলাকায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা অনেকেই উপস্থিত নেই বা থাকছেন না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন। এর আগের সভাতেও আমি এ বিষয়ে সতর্ক এবং অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেই অনুরোধ কতটুকু কে রেখেছেন বা মেনেছেন তা তারাই ভালো জানেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে খুব শীঘ্রই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তার সরকার দেশের উন্নয়নে এই করোনা কালেও কঠিন ব্যস্ত রয়েছে বা কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যদি প্রচার করা না হয়, তা হলে জনগণ এর সুফল পাবে না বা জানতে পারবে না। এতো কাজ করেও সরকারের সমালোচনা হবে। কিন্তু সরকার সকল কিছুই সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে। আজকে দেশে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম এবং শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। এসকল মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সহজে প্রচার করা যায়। তিনি জনপ্রতিনিধি এবং সকল বিভাগীয় প্রধানদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঠিক তথ্য ব্যাপক প্রচারের আহ্বান জানান। কিন্তু যারা সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিগণ কেন উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচার করছেন না, তা বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের শিক্ষামন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্যগণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দৃষ্টি রাখছেন। বিভিন্ন বিভাগ অনেক বড় বড় প্রকল্প সম্পন্ন হচ্ছে, কিন্তু তা প্রচার বা জনগণের গোচরে তেমনভাবে আসছে না।
উন্নয়ন সমন্বয় সভায় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, চাঁদপুর পৌর এলাকায় রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পৌরবাসী অনেকেই রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা আমি পাচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিভাগের পক্ষ থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক বিদ্যুতের খুঁটি এবং গাসের রাইজার রাস্তার মাঝে বা কয়েক ফুট ভিতরে পড়েছে। এগুলো না সরালে রাস্তা প্রশস্তের কাজ কোন উপকারে আসছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিভাগের সহযোগিতা না পেলে রাস্তা সম্প্রসারণ কাজ করা দুরুহ হয়ে পড়ছে। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা পেলে কাজগুলো খুব সহজে করা যাবে বলে প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে রাস্তা থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে পৌরসভা থেকে এর খরচ বহন করতে হবে এবং গ্যাসের রাইজার সরাতে হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে এর খরচ বহন করতে হবে। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণে অনেক ব্যক্তি নিজের প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়েছে, এতে তারা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্থ এর পর গ্যাসের রাইজার সরানোর খরচ তারা দিতে পারবেন না, এটা সহজে অনুমেয়। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্যে পৌরসভা থেকে খরচ দেয়া সম্ভব নয়। তিনি এ বিষয়ে সভার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করার জন্য সভাপতিকে অনুরোধ জানান।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৩৮ টি ঘর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৯ টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো নির্মানাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, যাদের জমি আছে ঘর নেই তাদেরকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ প্রসঙ্গে বলেন, তালিকার ভূমিহীনদের জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রয়োজনে জমি কিনে বা খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে।
প্রধান নির্বাহী বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী খ শ্রেণির জন্যে ঘর নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে চাঁদপুর জেলার তিনটি প্রবেশ মুখে তিনটি দৃষ্টি নন্দন গেইট স্থাপন করা হয়। যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই গেইটগুলোর সামনে ও পিছনে বা গেইট লাগোয়া স্থানে পোস্টার ব্যানার এবং অনেকে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। যা অবৈধ এবং দৃষ্টিকটু। এতে গেইটগুলোর সৌন্দর্যহানি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, এগুলো হতে দেয়া হবে না। এ গুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করার জন্য জেলা পরিষদকে আহ্বান জানান। তা হলে জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ সাখাওয়াত উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, করোনা দ্বিতীয় চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। এপ্রিল মাসে চাঁদপুরে আক্রান্তের হার ছিলো ২০ ভাগ। সেটি মে মাসে এসে ১৪.১০ ভাগ। এপ্রিল মাসে করোনায় মৃত্যু ছিল ২৩ জনের। মে মাসে মৃত্য এ পর্যন্ত ৩ জন। মে মাসে করোনার মোট আক্রান্ত ২৪৪ জন। তবে তিনি বলেন আক্রান্তের হার নিম্নমুখী হলেও তা সারা বাংলাদেশের চাইতে বেশি। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ইতোমধ্যে অক্সিজেন প্লান্ট ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আইসিইউ বেডের কাজ শেষ করা হয়েছে। আইসিইইউ বেডের জন্যে জনবল সরবরাহের চাহিদা দেয়া হয়েছে। জনবল সরবরাহ পেলে আইসিইউ বেডের কার্যক্রম শুরু করা হবে। বর্তমানে চাঁদপুরে মাত্র ১ হাজার ডোজ করোনার টিকা রয়েছে। যা দিয়ে দু-তিনদিন চালানো যাবে। এর মধ্যে টিকা না আসলে টিকা প্রদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। তিনি করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং চাঁদপুরের পর্যটন স্থানগুলোতে জনসমাগম এড়ানোর পরামর্শ প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, কাল থেকে গণপরিবহণ চলবে, জনচলাচল বাড়বে এতে করে স্বাস্থ্য ঝুকি বেড়ে যাবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গণপরিবহণ পরিচালনা করার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণের জন্যে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে জনগণের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করে তা প্রচার করলে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব মাস্ক পরিধান এবং বিতরণে কাজ করে যাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ এরকম কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের মানুষজন স্বাস্থ্য বিধি মানেন না, মাস্ক পড়েন না। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের ভাঙন বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরীফুল হাসান সভাপতির দৃষ্টি আর্কষণ করে বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙনে যে কাজ হচ্ছে, তা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এলাকাবাসীর অনেকে অভিযোগ করেছেন সেখানে মানসম্মত কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের ১৩ টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বেড়িবাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে অনুরোধ জানান। তা না হলেও বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেক বালু ব্যবসায়ী বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে ড্রেজারের পাইপ ঢুকিয়ে বালু ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এভাবে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে সভাপতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি মতলব উত্তরের মডেল মসজিদ নির্মাণে যথেষ্ট ত্রুটি ধরে বলেন যে, নির্মাণ কাজ নিম্নমানের এবং ধীরগতিতে হচ্ছে। অথচ এই কাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যে গণপূর্ত বিভাগের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
মডেল মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান সভায় বলেন, মডেল মসজিদ পরিচালনার নীতিমালা পাওয়া গেছে। তিনি জানান, চাঁদপুর সদরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে শাহরাস্তি উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম জমি সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে। নয়টি মসজিদের মধ্যে কচুয়া উপজেলার মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। উক্ত মসজিদে ইমাম, মোয়াজ্জিন নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। জেলা প্রশাসক মডেল মসজিদ পরিচালনার নীতিমালা অনুযায়ী মডেল মসজিদ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ তদারকি করার জন্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালককে অনুরোধ জানান। তিনি মডেল মসজিদ নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নির্মাণ কাজে যাতে সঠিক মান বজায় রাখা হয়, সেজন্য নজরদারি করার আহ্বান জানান। প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এক শ্রেণির ঠিকাদারের কাছে দেশের উন্নয়ন কাজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এরা কোন কাজ সঠিক সময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে করতে চায় না। এরকম ঠিকাদারদের তালিকা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের জন্যে নির্দেশনা প্রদান করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে টোল স্থাপন করার জন্যে গত সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আগামী ৭ দিনের মধ্যে উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সভায় বলেন, যে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণ বাজার হরিসভা অংশে এবং চাঁদপুর বড়স্টেশন অংশের মেরামত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জরুরী মেরামতের জন্যে আরো ২ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ মজুদ রয়েছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গণের প্রতিরোধ কাজ চলমান রয়েছে। যা আগামী ২০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করে তা মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থায়ী মেরামতের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী তাঁর বক্তব্যে জেলা পর্যায়ের বিদ্যুৎ বিভাগসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আজকের সভায় অনুপস্থিতি বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য হয়েও অনেকে অনুপস্থিত। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুপস্থিতি হতাশা জনক। আজকের সভায় তিনি উপস্থিত থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যেত। তিনি বলেন, চাঁদপুরের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিগত ১৩ বছরে নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ করিয়েছেন। যার ফলে চাঁদপুর তথা চাঁদপুর সদর ও হাইমচরকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা গেছে। এখনও অনেক কাজ চলমান। কিন্তু এত বিশাল বড় কাজের কোন খতিয়ান বা প্রতিবেদন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রকাশ করা হয়নি। তা অত্যন্ত দুঃখ জনক। কেন এটি করা হলোনা এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রচেষ্টায় কোন গাফিলতী আছে বলে কারোরই মনে হবে না। আর যদি হতো তাহলে চাঁদপুর এতদিনে বিলীন হয়ে যেত। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড বা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এ সকল কার্যক্রম এবং এর সুফল জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা করেননি। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার সময়েও সরকার প্রতিটি পৌরসভা, ইউনিয়নে, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার জনগণের মাঝে বিতরণের জন্যে বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো এসকল সরঞ্জামাদি জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য নেয়া হলেও তা বিতরণ করা হয়েছে কিনা তার কোন প্রচার বা প্রকাশ নেই। কিন্তু জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, চাঁদপুর পৌরসভা এবং কয়েকজন সংসদ সদস্য ছাড়া আর কেউ মাস্ক স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন কি না জানা যায়নি। জাতীয়, স্থানীয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পায় নি। তাহলে এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এখনো গ্রামে গঞ্জে মানুষের মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহ। এ বিষয়গুলো দেখার জন্যে তিনি সভাপতিকে অনুরোধ জানান। সভাপতি এ বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসলেই এ বিষয়ে সহজ সুযোগ থাকার পরেও কেউ প্রচার বা প্রকাশ করছেন না। তিনি এসকল বিষয়ে প্রচারণা চালানো জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান। নদী ভাঙন বিষয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার জন্যে তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল মাহমুদ সভায় প্রেসক্লাব সভাপতির বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, সকল বিভাগ যদি স্ব স্ব কাজের প্রচার ও প্রকাশ করেন তাহলে জনগণ উপকৃত হয়। সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণ জানতে পারে। সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ যেহেতু জনগণের কল্যাণে কাজ করেন, সেহেতু জনকল্যাণের যে কোন কাজই যে কোনো মিডিয়ায় প্রচার করা যায়। তিনি ভারত থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখার জন্যে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, চাঁদপুরের যে সকল এলাকায় করোনা সংক্রমন বেশি যে সকল এলাকায় এলাকা ভিত্তিক লকডাউন দেয়ার প্রস্তাব করেন। এতে করে করোনা সংক্রমন কমতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞ জিপি ও পিপির অবহেলার কারণে সরকার অনেক মামলায় হেরে যায়। অনেক সময় সরকারের অনেক সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়। অনেক সময় তারা মামলার সঠিক তথ্য গোপন করা হয়। এতে করে সরকারি অনেক স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়। যা কাম্য নয়। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং পিপি ও জিপিদেরও এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে এবং মানসম্পন্নভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, এনএসআই এর উপপরিচালক আরমান আহমেদ, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ, মেয়র ফরিদগঞ্জ পৌরসভা, বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, জেলা তথ্য অফিসার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দফতর ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply