তিন বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ না নিয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে, উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বছরের পর বছর নিজের প্রথম স্ত্রী ও চার সন্তানের খোঁজ-খবর না রেখে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুদী ছৈয়াল বাড়ির মো. শফিকুল ইসলাম। এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময় স্ত্রী নূরজাহান বেগমকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেন। অবশেষে গত মার্চ মাসে চাঁদপুর মডেল থানায় স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শফিকুল ইসলাম থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। মামলার প্রথম আসামী তারই স্ত্রী নূরজাহান বেগম দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। মূলত সে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের হয়রানি এবং জমিজমা দখল করার লক্ষ্যেই এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা জানায়, ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ১৯৮৪ সালে বিয়ে হয় শফিকুল ইসলাম ও নূরজাহানের। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই নির্যাতনের শিকার হন নূরজাহান। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করে স্বামীর সংসার আগলে রাখেন। এক পর্যায়ে নূরজাহান বেগমের জেঠা ইদ্রিস খা কিছু জমি লিখে দিলে তারা সেখানেই বসবাস শুরু করে। এরপর জন্ম হয় কন্যা সুমি ও ফারুকের। এরপর থেকে স্বামী সফিক জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। তখন ইদ্রিস খা নূরজাহানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে একটা দোকান কিনে দেন। আর শফিকুল ইসলাম সৌদি আরব চলে যান। সেখানে গিয়েও অপরাধমূলক কাজে জড়ানোর কারণে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেশে আসার পর আয়েশা আক্তার নামের আরেক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শফিক-নূরজাহান দম্পতি। এরপর নূরজাহানের চাচা আব্দুর রহমান খান তাদের নামে কিছু জমি লিখে দেন। এরপর শফিক ও তার ছেলে নূরে আলম ডুবাই যায়। সেখানে ছেলের চাকরি করে যে টাকা উপার্জন করতে তার প্রায় সবটাই নিজে নিয়ে নিতেন। একপর্যায়ে ২০১৮ সালে আবার দেশে এসে তিনি তার প্রথম স্ত্রী নূরজাহানকে বলেন, ১৮ বছরের এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের উপযুক্ত দু’টি মেয়ে এবং দুটি ছেলের ভবিষ্যত ধ্বংস করে বাবার এমন কর্মকাণ্ড শুনে স্ত্রী নূরজাহান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর পর থেকে নূরজাহানকে বিভিন্ন সময় মারধর করে সবকিছু সফিকুল ইসলামের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করতে থাকে। এতে তিনি রাজি না হলে গভীর রাতে বাসায় বহিরাগতদের পাঠিয়ে তার মেয়েদের নানাভাবে হুমকি দেয়। মেয়েরা বাবার এ ধরনের কর্মকান্ডে লজ্জায় কাউকে কিছু না বলে অন্য আত্মীয়দের বাসায় কিছুদিন থাকে। এর মধ্যে গত তিন বছর ধরে নূরজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত হন করোনায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে মেয়েরা তাকে ভর্তি করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। এর মধ্যেই গত ১৬ আগস্ট তারা জানতে পারেন, তাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং তার সমন এসেছে।
এদিকে শফিকুল মারধরের কথা বলে একটি অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। পরে তা তদন্ত করেন চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই জ্ঞানময় চাকমা। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার দাবি করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে এ তদন্ত তিনি কবে কোথায় করেছেন তার কিছুই জানে না হয়রানির শিকার অসহায় স্ত্রী ও তার সন্তানরা। তাদের দাবি, অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।
মেয়ে সুমি বলেন, পুরো মামলাটাই মিথ্যা। কিভাবে পুলিশ এটির সত্যতা পেল তা আমরা বুঝতে পারছি না। তাছাড়া পুলিশ আমাদের সাথে কোন কথাই বলে না। বিভিন্ন সময় এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকের সহযোগিতায় আমাদেরকে হয়রানি করছে। এ অবস্থায় আমি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনের সযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে ডেল্টাসনসহ দু’টি টেবলেট খাইয়ে তাকে পুরোপুরি অসুস্থ করে ফেলে। ২০১৮ সালে বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করার কথা বলে। এরপর থেকে তাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে। তিনি টাকা পয়সা দিয়ে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী লোকজনদের দিয়ে ডিভোর্স লেটার দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এরপর বাবা আমাদের দিকেও নজর দেয়। এরপরই আমার মা স্ট্রোক করেন।
ছেলে নূরে আলম বলেন, আমার বাবা দেশে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করে। তিনি গত সাড়ে তিন বছর ধরে কোন খোজ নেন না। দুবাই চাকরি করে যত টাকা উপার্জন করেছি তার সবাই বাবার হাতে তুলে দিয়েছি। কিন্তুতার কোন হিসাব নেই। এছাড়া আমার দু’টি বোন বিয়ের উপযুুক্ত। তাদের কি হবে? তিনি তার দ্বিতীয় বউয়ের জন্য নিজের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। গত ৬ বছর ধরে আমার মা অসুস্থ হলেও কোন চিকিৎসা করেন না। আমাদের সামনেই আমার মাকে তিনি নির্যাতন করেছেন। তিনি বলেন, আমার মায়ের নামে তিনি অর্থ আত্মসাত ও মারধরের মামলা দিয়েছে যা পুরোপুরি মিথ্যা।
অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ভুক্তভোগী নূরজাহান বেগম বলেন, আমাকে সে বিভিন্ন সময় মারধর করতো। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের পাশে নেই। আসলে আমার স্বামীর চরিত্র খারাপ। শুনেছি, সে তার মেয়ের বয়সী এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেছে। সে আমার মেয়েদের দিকেও খারাপ নজর দিতো। এলাকার কিছু লোক দিয়ে আমাদের উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। এখন নাকি মামলা দিয়েছে। কি কারণে মামলা দিলো তা-ই বুঝতে পারছি না। আমরা খুব অসহায়। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
এ বিষয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারাও আমার কোন খোজ রাখে না। তারা যত কথা বলে তাদের বেশিরভাগই মিথ্যা। বহু মানুষ আপোষ করানোর জন্য তাদের কাছে গেছে। কিন্তু তারা মানেনি। আমি বিদেশ থেকে বাড়ি করেছি। তারা বিভিন্ন জিনিস খাইয়ে আমাকে পাগল বানিয়েছে। আমার উপর তিন থেকে চারবার হামলা হয়েছে। তারাই এগুলো করেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply