নারী লাঞ্ছনাকারীরা ক্ষমতায় গেলে জঙ্গিবাদ ফিরবে : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ থেকে ছয় লাখ নারী অসম্মানিত, লাঞ্ছিত, ধর্ষিত, বিধবা ও সন্তানহারা হয়েছেন অথবা নানাভাবে আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের পর তাদের লাঞ্ছনাকারী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের এ দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়েছে এবং তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছে। তারা ক্ষমতায় বসে দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করেছে। নারীর অসম্মানকারীরা আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসলে দেশে জঙ্গিবাদ ফিরে আসবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, প্রেস ক্লাবের প্রবীণ নারী সদস্য মাহমুদা চৌধুরী এবং নারী নেত্রী কাজী সুফিয়া আখতার। সেমিনারে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রীতা ভৌমিক।
ডা. দীপু মনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর ক্ষেত্রে অনেকেই বলেন সম্ভ্রমহানি হয়েছে। অথচ সম্ভ্রমহানি হওয়ার কথা ধর্ষকের। ধর্ষণের শিকার নারীর সম্ভ্রমহানি হয় না। বিভিন্ন ধরনের ভাষা ব্যবহার করে নারীদের পিছিয়ে রাখা হয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে; যা আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নারী উন্নয়ন নীতিমালা তৈরি করেন। এ সময় তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী নির্যাতনে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বীরাঙ্গনাদের অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে। তিনি পাঠ্যসূচিতে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি নির্মাণের প্রতি নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, তারামন বিবিকে খুঁজে বের করতে আমাদের ৩৫ বছর লেগেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্তত ছয় লাখ নারী নিগৃহীত হয়েছেন। তাদের অবদান পাঠ্যবইয়ে থাকা দরকার। পিরোজপুরের ভাগীরথি, মাগুরার লুৎফুন্নাহার হেলেনের অবদানের কথা আমরা ক’জন জানি? ঢাকায় নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন তিনি।
মাহমুদা চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল সময়ের সাক্ষী ছিলাম। নয় মাস কীভাবে নারীদের কেটেছে, তা শুধু তারাই জানেন। ইলিয়াস খান বলেন, তৃতীয় বিশ্বে নারীর অবস্থান আজও পিছিয়ে। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি হাসান হাফিজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রেস ক্লাবের নারী সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সঙ্গে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। এতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নারী সদস্যরা অংশ নেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply