বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে সমাবেশে হাজীগঞ্জে আ’লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ

মঞ্চ ভাংচুর, ১২২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, আহত ২০
: শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। মঙ্গলবার দুপুরে সমাবেশ শুরুর আগেই মঞ্চ ও একুশে হাসপাতাল, কয়েক সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও বাসের গ্লাস ভাংচুর করে এবং টায়ার, কাঠের টুকরা জ¦ালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের একাংশ। পরে উত্তেজিত আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে গিয়ে রাফা টাওয়ার ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

হামলায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের মহড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে বিকালে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার পেস্টুন হাতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। ওই সমাবেশে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিনের পরিচালনায় মুঠোফোনে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্জ¦ মো নাছির আহম্মেদ ভূঁইয়া ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল। এছাড়া মঞ্চে বক্তৃতা করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্জ মো. হেলাল উদ্দিন মিয়াজী।
বক্তৃতা চলাকালীন সময়ে পুনরায় মঞ্চকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। এতে সভাটি ভূন্ডল হয়ে নেতাকর্মীরা দিকবিদ্বগ ছুটাছুটি শুরু করে। ওইসময় আহত বেশ কয়েকজনকে হাসাতালে পাঠানো হয়। তারপরই গাজী মো. মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় নেতাকর্মীরা।
সাবেক পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলম শুভ বলছেন, ভাংচুর ও হামলাকারীরা সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের নামে মিছিল নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামধারী একাংশ।
জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মাসুদ ইকবাল ও যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন সোহেল বলেন, হাজীগঞ্জে বাজারে এই ঘটনায় যুবলীগের কোন নেতা-কর্মী সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে জানতে পেরেছি, রাহী নামের একজনের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া নিয়ে ফরহাদ নামের এক ছেলের সাথে বাগ-বিতন্ডা হয়। তারই সূত্র ধরে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
তারা আরো জানান, যদি কোন ভিডিও ফুটেজ বা ছবিতে যুবলীগের কোন নেতাকর্মীকে এই হামলায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ কেউ দিতে পারে, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে নেতাকর্মীরা যেন স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে না পারে সেজন্য তারা আমাদের কর্মসূচির প্রথম দিকেই হামলা চালায়। সভামঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার পুড়িয়ে দেয়। তারপরও আমাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে ভাঙা মঞ্চেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি সম্পন্ন করে প্রতিবাদ মিছিল করি।
তিনি বলেন যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা কখনো আওয়ামীলীগের লোক হতে পারে না। তারা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার শত্রু। তিনি বলেন, এখানে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ, একটি সহযোগী সংগঠন এক ক্ষমতাধর নেতার ছত্রছায়ায় একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে। এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম এই হাজীগঞ্জে আর কোনদিন হতে দিবো না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন বলেন, দুপুরের পর থেকেই দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে আড়াইটা থেকে গন্ডগোল শুরু হয়। পরে আমরা খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে আমরা লাঠিচার্জ করি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি জানান, মারধর এবং ঢিলের আঘাতে তাদের অনেকেই আহত হতে পারেন।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ যথা সময়ে দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি চাঁদপুর থেকে দুই প্লাটুন পুলিশ ও দুইটি বিশেষ টিম কাজ করেছে। আমরা দুইপক্ষের সাথে কথা বলেছি। হাজীগঞ্জ বাজারের পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply