বাগাদীতে মসজিদের অনুদান বিতরণকালে হট্টগোল, ইফার বিরুদ্ধে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেমদের অনুদান বিতরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৩ জুন বুধবার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদে অনুদানের টাকা বিতরণকালে এই অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক হট্টঘোলের সৃষ্টি হয়। এই অভিযোগ উঠে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাধারণ কেয়ারটেকার মাওলানা গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসির তোপের মুখে পরেন তিনি। পরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল পরিস্থিতি শান্ত করেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আর্থিত অস্বচ্ছলতা দূরীকরণে মামনীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চাঁদপুরে ৪৮৯৫টি মসজিদের অনুকুলে ইমাম মোয়াজ্জেনদের ২ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। চাঁদপুরে ৭ উপজেলায় এই অনুদানের টাকা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে (চেক) বিতরণ করা হলেও কেবলমাত্র চাঁদপুর সদরে (পৌরসভার সহ) ৬৭৯টি মসজিদে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান নিজে উপস্থিত থেকে এই অনুদানের নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। ফলে ৭ উপজেলায় চেক এবং সদর উজেলায় নগদ অর্থ দেয়া এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা না থাকা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদে অনুদানের টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় বেশকিছু মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেন ও কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, এই অভিযোগ উঠে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাধারণ কেয়ারটেকার মাওলানা গোলাম মোস্তফার কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে মনমত মসজিদের তালিকা করেছেন। এখানে বহু গায়েবি নাম তালিকা করেছে যেসব মসজিদ বা ইমাম মোয়াজ্জেনকে কেউ চিনে না। অথচ বহু পুরানো ও প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নাম তালিকায় নেই।
তারা আরো অভিযোগ করেন, যে তালিকা করার সময় ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেননি, কিংবা তাদেরকে অবগতও করেননি। যার ফলে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান পরিস্থিতি শান্ত করতে বলেন, বাগাদী ইউনিয়নে অনেক মসজিদের নাম বাদ পড়েছে। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে আমাদের সমন্বয় করা হয়নি, তাই সবকিছু এলোমেলো হয়েছে, এই জন্য আমি দুঃখিত। আমাদের সাধারণ কেয়ারটেকার মাওলানা গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ উঠেছে, তার বিষয়ে অমরা ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়নে ১০৫টি মসজিদের মধ্যে ৭১টি মসজিদে অনুদান দেওয়া হয়। বাকী মসজিদগুলো পরবর্তী দেওয়া হবে।
৭ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে চেক দেয়া এবং সদর উজেলায় নগদ অর্থ দেয়া বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ৭ উপজেলায় আমাদের অফিস এবং মাঠকর্মী নেই। তাই সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে চেকে টাকা দেয়া হয়েছ। আর সদরে নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
এসময় বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল ক্ষোভ জানিয়ে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে বক্তব্যে বলেন, আমাদের জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামাদের অনেক সম্মান করেন। এজন্যই এই মহামারী দুর্যোগ এ পরিস্থিতিতে তিনি ইমাম মোয়াজ্জেমকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। অথচ ইসলামী ফাউন্ডেশনে মাঠকর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকারের এমন একটি সুন্দর কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, আমার ইউনিয়নে ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারে বহু সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনোরূপ বিতর্ক হয়নি। ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীলরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। কিছুদিন আগেও আমাদের মাননীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রতিটি মসজিদের ইমামদের ১ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। সে তালিকাটি ফলো করলেও এমন বিতর্কের সৃষ্টি হতো না।
এদিকে সবশেষে ইউনিয়নে ৭১টি মসজিদের মধ্যে প্রায় ৬০টির মতো মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেনকে ৫ হজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। ত্রæটিপূর্ণ নাম ঠিকানা হওয়ায় বাকী মসজিদ গুলো অনুদান দেয়া হয়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply