মতলব পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদকের বিস্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। এই উপজেলার পৌর এলাকাসহ নায়েরগাঁও উত্তর, নায়েরগাঁও দক্ষিণ, খাদেরগাঁও, নারায়নপুর, উপাদী উত্তর ও উপাদী দক্ষিণসহ প্রত্যেকটি ইউনিয়ন মাদকের স্বর্গরাজ্য। হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদক। বর্তমানে মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা মানুষের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মতলবের মাদক সম্রাট বিমলের মৃত্যুর পর অসংখ্য বিমলের জন্ম হয়েছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মরণনেশা ইয়াবা পৌঁছায়নি। এর ছোঁবলে যুব সমাজ ও সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মেও একটা অংশ হারিয়ে যাচ্ছে কালো জগতে। পরিবারকে ফেলছে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায়। আসক্ত তরুনরা ধর্ষণসহ নানা নৃশংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মতলবের সচেতন সমাজের মন্তব্য ইয়াবা ট্যাবলেট না পেয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ায়। এছাড়া গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ মাদকের আসক্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সূত্র জানায়, দাউদকান্দি, কচুয়া, হাজীগঞ্জ এই তিনটি উপজেলা মতলব দক্ষিণের সীমান্ত হওয়ার কারণে সহজেই ঢুকে পড়ছে মদ, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। চাঁদপুর থেকে এসব মাদক শহর ও গ্রাম এলাকায় বিক্রি এবং সেবন করছে একটি সিন্ডিকেট। আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ী আটক হলেও থামছেই না মাদকের চোরাচালান। নিয়মিত চাঁদা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতের আধাঁরে আনা হয় মাদকের বড় বড় চালান। এসব বড় ধরনের চালান কখনো আইনশৃংখলা বাহিনী আটক করতে না পারলেও মাঝে মধ্যে ছোট ছোট চালান আটক করে থাকে। এক সময় শুধু ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজার রাজত্ব ছিল এখানে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ইয়াবার রাজত্ব শুরু হয়েছে সম্প্রতি। আর এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অজানা কারণে মূল হোতাদের আটক করতে পারছে না পুলিশ। নিয়মিত বখরা নেয়ায় পুলিশ তেমন ধরনের মাদকের চালান আটক করছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। স্থানীয়রা জানান, এখনও মাদকের মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না এই প্রশ্ন সচেতন মহলের। এই বিষয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন রিপন মীর, আব্দুস সালাম মৃধা, গোলাম মোস্তফা মাদকের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিক ফেডারেশনের মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার সভাপতি গোলাম হায়দার মোল্লা বলেন, মতলব পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদকের আগ্রাসনে মারাত্বকভাবে আক্রান্ত। থানা পুলিশ ২/৩ মাস পর পর একটা করে অভিযান চালায়। যাদেরকে ধরে তারা আবার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায়। তখন তারা আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নায়েরগাঁও বাজার, নায়েরগাঁও ব্রীজ, পিতাম্বরদী, পেয়ারীখোলা, পাটন, মাছুয়াখাল, নারায়নপুর বাজার, কাশিমপুর জোড়পুল, মাষ্টার বাজার, বোয়ালিয়া বাজার, দীপ্ত বাংলা এলাকা, টিএন্ডটি মোড়, বরদিয়া এলাকা, কাজীর বাজার, ধলাইতলী, পিংড়া, উপাদী ও দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কানাছোয়াসহ বিভিন্ন এলাকার গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব মাদক বিক্রি ও সেবন করে এক শ্রেনির যুবকরা নেশাগ্রস্থ হয়ে সমাজকে ধ্বংস করছে। এ সমস্ত কারনে কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা দেশ ও সমাজের শত্রু। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবক এবং মাদক ব্যবসায়ে সহায়তাকারীদের যেখানেই পাওয়া যাবে তাদের কোন ছাড় নেই। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ তথ্য না দিলে তো পুলিশের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কষ্টকর। তাই আপনাদের সার্বিক সহযোগীতা চাই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply