মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, ১৫৩ জেলে আটক

আশিক বিন রহিম :
সরকার ঘোষিত মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভয়াশ্রম সফল করনে এবারে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে প্রশাসন। নদী এবং সড়ক পথে অভিযানের পাশাপাশি এবারে আকাশপথেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মেঘনার পশ্চিম পাড়ের দুর্গম চর এলাকায় একের পর এক ত্রিমুখী সাঁড়াশি অভিযানে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে অসাধু জেলেরা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চলমান অভিযানে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২২৬টি অভিযানে ১৫৩ জেলেকে আটক করে ৫৫টি মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়া হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ৪৬টি। এছাড়াও ৬৬৩. ১৪ মিটার কারেন্ট জাল ও ৫শতাধিক মাছ ধরার নৌকা বিনষ্ট করে দেয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৪৬৬৫ মে. টন ইলিশ।
এদিকে নৌপুলিশের এই বড় ধরনের সাঁড়াশি অভিযানগুলো কেবলমাত্র মেঘনার পশ্চিম পাড়ে হওয়ায় এবং পূর্ব পারে না হওয়া নিয়ে জেলেপাড়ার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী মেঘনা পশ্চিমপাড়ের মানুষেরা কেবলমাত্র কৃষি কাজ এবং নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অথচ পূর্বপাড়ের মানুষদের অন্য কাজ করার সুযোগ থাকলেও তারা এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ নিধনের মহোৎসবে মেতে ওঠেন। বিশেষ করে এই পাড়ের বিষ্ণপুর, তরপুরচন্ডি, আনন্দবাজার, যমুনা রোড়, পুরাণবাজার রনাগোয়াল, দোকান ঘর, গুচ্ছগ্রাম, বহরিয়া বাজার, হরিনা ফেরিঘাট ও এখনের হাট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে মা ইলিশ বেচাবিক্রির হাট বসলেও প্রশাসন এসব বাজারগুলোতে তেমন একটা অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।
৩০ অক্টোবর শুক্রবার আবারো চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে এবং দুর্গম চরাঞ্চলের জেলে পল্লীতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। এতে আকাশ পথে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার এবং নদীতে লঞ্চ, স্পিডবোটসহ একাধিক নৌযান অংশ নেয়। ভোর ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৮ ঘন্টাব্যাপী চলা এই অভিযানে ২৬৮টি মাছ ধরার নৌকা এবং প্রায় পাঁচ কোটি মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। তবে বরাবরের মতো এবারও অভিযান টের পেয়ে কয়েক হাজার জেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম (অপারেশন), পুলিশ সুপার আ ক ম আক্তারুজ্জামান বসুনিয়া, পুলিশ সুপার মাসুমা আক্তার, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের প্রধান পুলিশ সুপার ফরিদ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভীনসহ (মিডিয়া) চাঁদপুর জেলা পুলিশ এবং মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই শতাধিক সদস্য।
ভোর ৪টায় এই অভিযানে অংশ নেওয়া সদস্যরা চাঁদপুর সদরের দুর্গম চর রাজরাজেশ্বর এবং পাশে মতলব উত্তরের বোরোরচর এলাকায় পৌঁছে কয়েকশ’ মাছ ধরা নৌকা এবং জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।
অভিযান শেষে পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার একদিনে মাত্র আট ঘণ্টার অভিযানে ২৬৮টি মাছ ধরার নৌকা এবং প্রায় পাঁচ কোটি মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। পরে আগুনে পুড়িয়ে এসব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও এমন অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ভোররাতে এমন সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার আগেই এসব এলাকার কয়েক হাজার জেলে তাদের জাল, নৌকা এবং বসতবাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দেয়। একটানা দীর্ঘ আট ঘণ্টা অভিযান শেষে সকাল ১১টায় তা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান, মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে অসাধু জেলেদের নদীতে নামা থেকে বিরত রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেসব জেলেরা আইন অমান্য করে নদীতে মাছ শিকারে নামছে তাদের জেল জরিমানা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, রবিবার চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে নৌপুলিশের ওপর হামলা করে সংঘবদ্ধ জেলেরা। এতে কর্মকর্তাসহ ২০ পুলিশ সদস্য আহত হন।
গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply