রেড জোনে পড়ছে চাঁদপুর পৌর এলাকা, সহসাই হতে পারে পুরোপুরি লকডাউন

করোনাকালে ব্যস্ততম রোববারের শপথ চত্বর এলাকা যানজট। ছবি তুলেছেন আশিক বিন রহীম

ইব্রাহীম রনি :
রেড জোনের আওতায় আসছে চাঁদপুর পৌর এলাকা। সারাদেশেকে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিনজোনে ভাগ করার প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললে জনসংখ্যা এবং আক্রান্তের হিসাবে চাঁদপুর পৌর এলাকা পড়বে রেড জোনের মধ্যে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জোনভিত্তিক বিষয়টি গৃহীতি হলে কোনও এলাকায় প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০-৪০ জন হলে সেই জায়গা রেড জোন হিসেবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত কিংবা প্রজ্ঞাপন পায়নি মাঠপ্রশাসন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, চাঁদপুর জেলা থেকে এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২ হাজার ২৮৬ জনের। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ২ হাজার ৩ জনের। জেলায় এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৬ জন। এর মধ্যে মৃত ২২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬৮ জন। বাকীরা আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে চাঁদপুর পৌর এলাকার ১২৪ জনসহ সদর উপজেলায় ১৩৬ জন, মতলব উত্তরে ১৩ জন, ফরিদগঞ্জে ৪৪, হাইমচরে ৬ জন, হাজীগঞ্জে ২২, কচুয়ায় ১৬, শাহরাস্তিতে ১৯ এবং মতলব দক্ষিণে ২০ জন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর পৌর এলাকার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৩ জন। এ হিসাবে এখানে প্রতি লাখে ৩০ জন আক্রান্ত হলে ৫১ জন এবং লাখে ৪০ জন আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ ৬৮ জন করোনা আক্রান্ত হলেই চাঁদপুর পৌর এলাকা পড়ে যাবে রেড জোনের আওতায়। যদিও ইতোমধ্যেই এ হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ ১২৪ জন হয়ে গেছে চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তারপরও সবকিছু চলছে স্বাভাবিকভাবেই। শহরে দেখা যাচ্ছে যানজট। ব্যাটারি চালিত, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, বাস-লঞ্চ চলছে অনেকটা আগের মতোই। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, চাঁদপুর জেলার উপজেলাগুলো এখনো ভালো আছে। সেখানে এখনো আক্রান্তের হার খুব একটা বেশি না। তবে চাঁদপুর পৌর এলাকায় মানুষের মুভমেন্ট বেশি হওয়ায়সহ নানা কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, রেড জোন কিংবা লকডাউনের কোন সিদ্ধান্ত বা প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দুই-একদিনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি শুরু হবে। এটি সফল হলে পরের সপ্তাহ থেকে সামগ্রিক পরিকল্পনা করে মাঠে নেমে পড়বেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশজুড়ে তা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে, কারণ এক্ষেত্রে রোগীর সংখ্যা কোথায় বেশি তা বের করতে হবে।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, জোন ভাগের খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে দু’একদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। জোন ভাগ করার বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু আমাদের কাছে এখনও আসেনি। গত সপ্তাহের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিটি মন্ত্রণালয় এখন ম্যাপ নির্ধারণে ব্যস্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা এতে যোগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সহযোগিতা করছে সিটি করপোরেশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরেই জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর আগে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে একাধিক সভা করেছি। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাংশ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠিয়েছি। আমাদের তৈরি করা সারাংশতে উল্লিখিত প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তগুলো যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পরীক্ষামূলক বলেন আর চূড়ান্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
জানা গেছে, রেড জোন ঘোষণার পর লকডাউন থাকা এলাকার জনসাধারণের প্রবেশ ও বহির্গমন বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য লকডাউন এলাকার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হবে। ভ্যানে করে এলাকার ভেতরেই সেগুলো কেনাবেচা হবে। নিম্ন-আয়ের মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা থাকবে।

– নিউজের কিছু তথ্য বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply