আগামির অনলাইন শিক্ষায় পড়ানো ও মুল্যায়ন পরীক্ষা ওপেন বুকে হবে!

নাদিম ভূঁইয়া ::
বর্তমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসে করোনা থাকুক আর যাই সামনে আসুক বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে অবর্ণনীয় প্রতিবন্ধকতায় আছে, যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে তা দূর করতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা জরুরী। এর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে দূরশিক্ষনে (যা আগেও সীমিতভাবে ছিল) বা অনলাইনের সাময়িক বিভিন্ন ব্যবস্থায় বা সামনে সরকারি নির্ধারিত অনলাইন ব্যবস্থায় শিক্ষকগণ ও শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দিয়ে যুগোপযোগী করে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ও অচল অবস্থা কেটে গিয়ে পৃথিবীর উন্নত দেশের কাতারে অবস্থান হবে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য এবং অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের নিবন্ধনে ১৫ জুন, ২০২০ কালের কন্ঠে ’অনলাইন শিক্ষার অপরিহার্যতা’ নিয়ে বর্তমান সময়ে দ্রুত শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বাভাবিকতা আনার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। উল্লেখ করেন, ‘অনলাইন শিক্ষায় অর্জিত ডিগ্রি যে কিউএসএস র‌্যাংকিং এ উপরের স্থানে ক্রমশঃ এসে গেছে এবং নিয়োগ কর্তাগণ এসব ডিগ্রিকে যথার্য গুরুত্বও দিচ্ছেন। কারণ, এ শিক্ষায় ‘অল সার্ভিস লার্নিং’ এর বদলে সেলফ সার্ভিস লার্নিং এর সুযোগ বিদ্যমান। ..অজুহাত ধরে শুভ দিনের অপেক্ষায় বসে থেকে গতানুগতিক শিক্ষা নিতে চাইলে আমরা পিছিয়ে যাব।…অব্যবহৃত বিদ্যুৎ.. ব্রডব্যান্ড সুবিধা নাকি বহুলাংশে অব্যবহৃত.. গচ্ছা যখন দিতেই হচ্ছে তা গরীব বা সামর্থহীন শিক্ষার্থীদের বিনা ব্যয়ে বা স্বল্প ব্যয়ে দেয়া যেতে পারে। সহসাই অনলাইন শিক্ষায় মূল্যায়ণের সমস্যাগুলো বিতাড়নে নতুন পদ্ধতির উদ্ভব হবে। টোফেল বা জিআই পরীক্ষায় বা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার সময়ে যে ধরনের ইনভিজিলেশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, আমাদের অনলাইন পরীক্ষাগুলোর ধরনে যদি পরিবর্তন না আনা যায়, ভার্চুয়াল ভার্সনে যদি ল্যাবগুলো সম্পূর্ণ করা না যায়, তাহলে স্বল্প সময়ের জন্য মিশ্র পাঠদান ও পরীক্ষা ব্যবস্থা ধরে রাখা যেতে পারে।’
অনলাইন পরীক্ষা কাঠামো নিয়ে মো. জাহিদুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যশনাল বিজনেস এন্ড ইকোনমিক্স, বেইজিং, চীন থেকে ০৫ জুলাই ২০২০ দি ডেইলি ক্যাম্পাসে ‘অনলাইন পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি: একটি প্রস্তাবনা’ নিবন্ধনে বিশদ বর্ণনা থেকে উল্ল্যেখ করা যায়; ‘ক্লাসে শিক্ষক লেকচার দেবেন আর শিক্ষার্থীরা শুধু শুনবে কিংবা পরীক্ষায় গদবাধা রচনা লিখবে, এই সংস্কৃতি ২০০০ সালের আগেই পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশ বাতিল করেছে।
বেঞ্জামিন স্যামুয়েল (১৯১৩-১৯৯৯) সর্ব প্রথম ১৯৫৬ সালে শিক্ষার গুনগত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক টেক্সোনমির (Blooms Taxonomy) প্রণয়ন করেন যা ১৯৯৯ সালের পর আবার রিভাইস করা হয়। যেখানে অনলাইনে ওপেন বুক পরীক্ষা হলেও পরীক্ষার্থীরা তাদের বই থেকে ২০-৩০% এর বেশি কপি করতে পারবে না। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম আছে যার মাধ্যমে সহজেই সময় বেধে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। সৃষ্টিশীল প্রশ্ন (Creating Question), মূল্যায়ন প্রশ্ন (Evaluating Question), বিশ্লেষণ প্রশ্ন (Analyzing Question), প্রয়োগ করা প্রশ্ন (Applying Question), বুঝতে পারা প্রশ্ন (Understanding Question), মুখস্থ করা প্রশ্ন (Remembering Question) এই মোট ছয়টি ধাপে উন্নত দেশগুলোতে Blooms Taxonomy অনুসরণ করে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে। যার মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থীর মেধা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় সবচেয়ে সহজ থেকে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে।’ যদিও বর্তমানে এদেশে এই পদ্ধতির সীমিত প্রয়োগ ও গতানুগতিক আগের নিয়মের সাথে মিলিয়ে সমষ্টিগত মুখস্থবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষা চলছে যা দূরশিক্ষনে বা অনলাইনে প্রযুক্তিগত নিরবিচ্ছিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতির বিপরীত।
সকল ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বিশাল সংগ্রহের ও সহজ সুবিধার ই-বুক দিয়ে দুরশিক্ষন তথা অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। আবার আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধায় তথা ডিজিটাল আদলে অনলাইন পরীক্ষা ব্যবস্থাও শুরু করে দিতে হবে। আমাদের দেশ উন্নত শিক্ষায় না এগোয়, সামনে কিভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পৌছাবে, আর কোন সময়ের ক্ষেপণ আমরা না করি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply