উন্নয়ন ও সমস্যার কথাগুলো নিরপেক্ষ লিখনীতে তুলে ধরুন : সাংবাদিকদের প্রতি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

* চাঁদপুর-শরিয়তপুর সেতুটি হলে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কটি আন্তর্জাতিক মহাসড়কে সংযোগ দেয়া যাবে
: আশিক বিন রহিম :
একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও সরকারের নব-নিযুক্ত পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, আমি কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে মন্ত্রী হইনি। মাননীয় প্রধামন্ত্রী সরাসরি আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন । এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞত। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। তিনি বলেন,আমি সারা দেশের প্রতিমন্ত্রী, সারা দেশ থেকে জনগনের টাকায় আমার বেতন হবে । তাই সারা দেশ নিয়েই আমাকে কাজ করতে হবে। তবে চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে নিজ জেলার প্রতি আমার ভালোবাসা একটু বেশি থাকবে।

২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন নবনিযুক্ত পরিকল্পনা ড. প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ প্রেসক্লাব নেতৃৃবৃন্দ।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী। উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, এনএসআই ডিডি শাহ্ আরমান আহমেদ। এছাড়া মন্ত্রীর কাছে চাঁদপুরের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে প্রশ্নবানে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, জালাল চৌধুরী, শরীফ চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সহসভাপতি এইচএম আহসান উল্লাহ ও সোহেল রুশদী, অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক আল ইমরান শোভন, রিয়াদ ফেরদৌস, ক্রীড়া সম্পাদক ফারুক আহমদ প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরো বলেন , চাঁদপুর আধুনিক নৌ-টার্মিনালটি এখনো হচ্ছে না কেন তা আমি খোঁজ নিয়ে জানবো। দেশের দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর হিসেবে এটি অবশ্যই করা দরকার। এ ব্যাপারে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন করার জন্যে জায়গা দেখছি। তবে এই স্থাপনাগুলো উপযুক্ত কোন জায়গায় করতে হবে যাতে এই স্থাপনা টিকে থাকে বহুকাল। আমাদের আগামী ১০০ বছরের কথা চিন্তায় রেখে কাজ করতে হবে। পর্যটন নিয়ে চাঁদপুরে একটি সুন্দর জায়গা। উদ্যোগ নিয়ে এই খাতটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। চাঁদপুরের বহু ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন, যারা এখানকার পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে পারেন। তাদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকার নিজে খেলোয়াড় হলে হবে না। রেফারি হয়ে খেলোয়াড়দের জন্যে সরকার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, একটা সময় যে কোন কাজে আমরা সরকারের উপর নির্ভর ছিলাম। সবকিছুই কেবল সরকারের কাছে চাইতাম। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে বেসরকারি খাতও শক্তিশালী হয়েছে। দেশের অনেক বড় বড় কাজ বেসরকারি খাত থেকে হচ্ছে। এক সময় এদেশে ৮৭ ভাগ বিনিয়োগ বিনিয়োগ ছিলো সরকারের, আর এখন ৮১ ভাগ বিনিয়োগ আসে বেসরকারি খ্যাত থেকে। এটি সম্ভব হয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় দেশের অগ্রযাত্রার কারণে। বর্তমানে দেশের প্রবৃদ্ধির যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে সেটি ধরে রাখতে হবে। এ জন্য আমরা কৃষি ও শিল্প উন্নয়নে বিশেষ নজর দেব। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরি করতে পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে পরিকল্পিতভাবে সমন্বয় করে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করবো।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, অনেকেই চাঁদপুর টু ঢাকার রেলযোগাযোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু এই খাতে সরকারের বিশাল অর্থ লোকসান হয়। রেললাইনে ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়, অথচ সড়ক হলে ৪শ’ কোটি টাকা। তাই রেললাইন না করে সড়কের বাইপাস নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি। চাঁদপুর-শরিয়তপুর ব্রিজ করার চিন্তা নিয়ে নিরীক্ষা চলছে। টানেল নিরাপদ হলেও এতে খরচ তিনগুণ হয়। এই সেতুটি হয়ে গেলে চাঁদপৃর রায়পুর সড়কটি আন্তর্জাতিক মহাসড়কে সংযোগ দেয়া যাবে। চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত আরেকটি বাইপাস সড়ক করার প্রস্তাব এসেছে। এ বিষয়ে আমরা গভীরভাবে ভাববো। ফিজিভিলিটি স্ট্যাডি ছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি কোন প্রকল্প নেয়া ঠিক না। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি মন্ত্রী আমার সিনিয়র। তিনি একজন রাজনীতিবিদও। তাই আমি মনে করি যে, কোন কাজ করার ক্ষেত্রে তার সাথে সমন্বয় করেই আমি করবো। তাছাড়া এই মন্ত্রনালয়ে আমারও একজন সিনিয়র মন্ত্রী রয়েছেন।
ড. শামসুল আলম আরো বলেন, চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। যদিও সাময়িকভাবে মানুষের ঘরবাড়ি রক্ষা পাচ্ছে। আমি মনে করি আগে নদীর ব্যবহারটা সঠিক করার দরকার। নদীর চলার পথ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বুঝে না বুঝে নদীর ক্ষতি করছি। তাই নদীর স্রোত নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। নদীর মাঝে যেসব অপ্রয়োজনীয় চর রয়েছে তা কেটে দিতে হবে। তাহলে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ে ভাঙন কমে আসবে। চাঁদপুরে একটি শিশুপার্ক করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদিও শিশুপার্ক করা সরকারের দায়িত্ব, তবে আমার পরামর্শ হলো এখানে একটি আধুনিক বিনোদন পার্ক করার জন্যে আপনারা বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান। আমাদের পার্শবর্তী জেলা কুমিল্লাতেও এমন অসংখ্য বিনোদন পার্ক গড়ে উঠছে।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের করার প্রস্তাবে তিনি বলেন, তালাবন্ধ স্টেডিয়ামের পক্ষে আমি না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বছরের দু’একটা খেলা হয়। আমি মনে করি স্টেডিয়াম হবে উন্মুক্ত। যেখানে ছেলেমেয়েরা ফ্রি ভাবে খেলতে পারবে। তিনি বলেন, আপনাদের হয়ে যেন দেশের কাজ করতে পারি। আপনারা যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছেন, তারা নিজ এলাকার সমস্যা ও উন্নয়নের কথা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরবেন। এতে আমার জন্য কাজ করতে সহজ হবে। আমিও আপনাদের পরিবারের একজন। আমার অনেক লেখা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে আসছে। এছাড়া আমি একসময় একটা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম। মতবিনিময় সভার শুরুতে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ ক্লাবের নেতৃবৃন্দ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং প্রেসক্লাবের ৫০ বছর পূর্তির উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম চাঁদপুরে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। পরে মন্ত্রী প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান এবং চাঁদপুর বড়স্টেশন এলাকায় শহররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। অন্জনা খান মজলিশ। পরে মন্ত্রী প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান এবং চাঁদপুর বড়স্টেশন এলাকায় শহররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। বিকেলে তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply