করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শাহরাস্তির এক মাদ্রাসায় চলছে ক্লাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারিতে সরকার সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং পরীক্ষা না নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আসা বারণ করলেও চাঁদপুরের একটি মাদ্রাসায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে প্রতিষ্ঠানে আসছে। তাদের কলকাকলিতে মাদ্রাসা প্রাঙ্গন গত দু’দিনে গত আট মাস আগের তথা করোনাকালীন আগের চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে। মাদ্রাসা সুপারের নির্দেশে জেলার শাহরাস্তি উপজেলার কামতা উত্তর ইউনিয়নের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা আলিম মাদ্রাসায় কয়েকশত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাস করতে এবং পাঠদান করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতেও দেখা যায়নি। কারো মুখেই মাস্ক চোখে পড়েনি। শিক্ষকদেরও অনেকেরই তা ছিল না। সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনার দ্বিতীয় ধাপের আতঙ্ক সামনে রেখে একটি প্রতিষ্ঠানে এমন ক্লাস পরিচালনা ও শিক্ষকদের শতভাগ আসা যাওয়ার বিষয়টি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।


প্রায় সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থীর এই মাদ্রাসায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস শুরু হয়ে প্রায় ১টা পর্যন্ত চলেছে। সেখানে ৫ম থেকে আলিম ক্লাসের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে উপস্থিত থেকেছে। বিজ্ঞানের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হলে তিনি ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি আমাদের সুপারের নির্দেশে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান, আইসিটি এবং ৯ম শ্রেণির গণিত ক্লাসটি নিয়েছি। সেখানে প্রতি ক্লাসেই শিক্ষার্থী ছিল। তিনি বলেন, সুপার ্বলেছেন, অ্যাসাইনমেন্ট পরে আগে নিয়মিত ক্লাস নেন, পরে আমি দেখব। কিন্তু তিনি বলেন, এভাবে ক্লাস নেওয়া এক ধরনের ঝুঁকি হয়ে পড়ছে। গণিতের শিক্ষক আবদুল কাদের বি.এস.সি-কে দেখা গেল ৯ম ও ১০ম শ্রেণির গণিত ক্লাসে টিচিং দিচ্ছেন। ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার ্ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনা হয়েছে। সেখানে তাদের বই থেকে কিছু পড়ার বিষয়ে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কথা বলার জন্য বলেন।
নাজমূল নামে আরেকজন শিক্ষক বললেন, আমি ৫ম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়ে। তবে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি শিক্ষার্থীকে ক্লাসে উপস্থিত করানো যাবে না।
ঝর্ণা নামে আরেকজন শিক্ষিকা তার মুঠোফোনে বলেন, এখনকার নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাজির করে এমন ক্লাস নেওয়া ঠিক না। তবে তিনি বলেন, আমি আসলে যে শিক্ষার্থীরা এসেছে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি।
সহ-সুপারিন্টেডেন্ট তাফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থী, তাই তারা অনেক কিছুই বুঝে না। তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই মাদ্রাসায় আনা। তবে তিনিও বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস না করানোর জন্য আমি সুপারকে বলেছি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার মাও. আমিনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসছে। তবে আমার প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে কেন? আমি কোন ক্লাসের কথা বলি ন্ইা বলে তিনি অস্বীকার করেন। পরে তিনি আর কথা না বলে তার মোবাইলটি কেটে দেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসাইনমেন্টের নামে বা ক্লাসের নামে ভিড় করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জেলা সদরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামাল হোসেন জানান, কোনভাবেই শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে হাজির করা যাবে না। অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হলে অভিভাবক বা তার প্রতিনিধি আসতে হবে।
শাহরাস্তি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহসান উল্লাহ চৌধুরী জানান, ক্লাসে ঢুকানো নিষেধ। ক্লাস করাও নিষেধ। বড়জোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী যদি কেউ তাদের অভিভাবকের সাথে আসেও তাহলে তাকে ক্লাসে ঢুকানো উচিত না। যদি এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জমিয়ে থাকে অ্যাসাইমেন্টের নামে ক্লাসে শিক্ষার্থী ঢোকার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম না মেনে কাজ করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসা ২০০১ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ইবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যায়ে এই মাদ্রাসাটি আলিম এমপিওভুক্ত না হলেও আলিম ক্লাস করার অনুমতি নিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply