চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলনের ফল বাতিল চেয়ে ৭ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলনের ফলাফল বাতিল ও পুনর্র্নিবাচন চেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ সাত নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকালে চাঁদপুর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রাফিউস শাহাদাত ওয়াসীম পাটওয়ারী।
ক্রমানুসারে মামলার আসামিরা হলেন- চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সলিমুল্লাহ সেলিম, সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. শামছুল ইসলাম মন্টু, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া ও বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুল হক সাইদ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ৩নং বিবাদী সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার মো. শামছুল ইসলাম মন্টু ঘোষিত ফল এবং বিজয়ী ১ ও ২নং বিবাদী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের ওপর স্থগিতাদেশ চান মামলার বাদী।
মামলার বাদী বিএনপি নেতা রাফিউস সাহাদাত ওয়াসীম পাটওয়ারী দাবি করেন, ‘জেলা বিএনপির সম্মেলনটি বৈধ হয়নি। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক ব্যক্তি তিনটি পদে থেকে নির্বাচন করতে পারেন না। কিন্তু জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তা করেছেন। এ ছাড়া ওই দিন তারা ১০ ইউনিটকে নিয়ে সম্মেলন করে। অপরপক্ষ ১১ ইউনিটকে নিয়ে আরেকটি স্থানে (হাজীগঞ্জে) সম্মেলন করে। ১১ ইউনিটকে উপেক্ষা করে তারা এটি করতে পারেন না। তাছাড়া জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটারই ছিল ১৫০০। অথচ তারা কাস্টিং ভোট বেশি দেখিয়েছেন। যারা মারা গেছেন তারা কীভাবে ভোট দিলেন?’
তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে অনিয়মের শক্তিশালী এভিডেন্স আছে। দলের মহাসচিবকে আসামি না করলে মামলার মেরিট (যোগ্যতা) থাকে না। আমরা তো মহাসচিবের কাছেই বিচার চাইবো। তাকে যেহেতু মামলা মোকাবিলা করতে হবে— তাই তিনি একটা ফয়সালা দেবেন। নিয়মতান্ত্রিক কারণেই মহাসচিবকে মামলার বিবাদী করা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির দুটি কমিটিতে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। অথচ তারা আমাকে কোনও কমিটিতেই রাখেনি। দল তো স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে চলে না। গণতন্ত্রের চর্চা যদি আমাদের দলেই না থাকে তাহলে বাইরে গণতন্ত্রের কথা বললে সেটি কী হাস্যকর হবে না?’
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিম মিয়া জানান, বাদীর মৌখিক বক্তব্যের আলোকে অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চলতি বছরের ২ এপ্রিল জেলা বিএনপির সম্মেলনে ১৫১৫ জন কাউন্সিলর ছিলেন। এর মধ্যে ৯৮২ জন ভোট প্রয়োগ করলেও ৮০৪ জন ভোট দেননি। যে কারণে বাদী পুরো সম্মেলন বাতিল চান। মামলাটি আদালত আমলে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে আদেশের জন্য আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত ২ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনের ফলাফল বাতিল ও পুনর্নির্বাচন ঘোষণার আদেশ চেয়ে এই মামলা করা হয়।
প্রায় একযুগ পর সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটাভুটি করে চাঁদপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সলিম উল্লাহ। এই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
অপরদিকে, ওই দিন হাজীগঞ্জে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মমিনুল হকের বাড়িতে জেলা বিএনপির আরেকটি অংশ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ভোটাভুটি করে। সেখানে মমিনুল হককে জেলা সভাপতি ও মোস্তফা খান সফরিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন বানচালের চেষ্টার অভিযোগে মমিনুল হককে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তাকে এই ঘটনার ব্যাখ্যা তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে সহযোগিতা না করে তা বানচালের লক্ষ্যে একইদিন পাল্টা কাউন্সিল করেন মমিনুল হক। তা ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ৩০ মার্চ চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এ ঘটনাগুলো গুরুতর অসদাচরণ ও সম্পূর্ণভাবে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না— তা জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

শেয়ার করুন