মানুষ সচেতন না হলে কোন বাহিনী দিয়েই লাভ হবে না : মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হারুন

চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা

: আশিক বিন রহিম :
করোনা ভাইরাস ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে আরোপিত বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রধান, ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হারুন এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে সভার শুরুতেই চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম তুলে ধরেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব উল করিম, চাঁদপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ। বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুল আলম লিপন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারি।


মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হারুন তার বক্তব্যে বলেন, করোনার এই দুর্যোগ কোন রাষ্ট্রিয় সমস্যা নয়। এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি। গোটা বিশ্বেই এই মহামারি হানা দিয়েছে। গোটা বিশ্বে যুদ্ধ অবস্থা চলছে। বাংলাদেশেও এটি প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। আমরা একটি দুঃসময় পরিস্থিতি পার করছি। কিন্তু জনগণের মাঝে এখনো তেমন কোন সচেতনতা নেই। করোনায়আমিও মরে যাব এই ভয় কারো মাঝে নেই। আমাদের পরিবারের একজন যদি মারা যায় তাহলে কত বড় ক্ষতি হবে সেটি কেউ অনুধাবন করছে না। মানুষ সচেতন না হলে কোন বাহিনী দিয়েই লাভ হবে না। আমরা কার ওপর লাঠিচার্জ করব, এই মানুষগুলো আমাদের ভাই। তারা এদেশের জনগণ। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহে সকল উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। এখানে জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে কে সেটি না দেখে কাকে আগে দিতে হবে সেটি বিবেচনা করতে হবে। এটি নিশ্চিত করবেন জনপ্রতিনিধিগণ। এখন কে কোন দলের বা কোন ধর্মের- জাতের সেটি বিবেচনা না করে দেশের সকল মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভ্যাকসিন সেন্টারে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত সেনাবাহিনীর সদস্য দিবো। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক ভাইদেরকে অনেক বড় দায়িত্ব নিতে হবে।
মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হারুন আরো বলেন, আমাদের দেশটা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে সেবা করতে হলে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। এদেশে করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চমৎকার ভাবে গাইডলান দিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে করোনার দুর্যোগে যখন বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে, সেখানে আমরা এখনো ভালো অস্থানে আছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত অনেক রাষ্টে রোল মডেল।
তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদেরই লোক। কি করতে হবে সেটি আমাদের বলবেন আমরা সকল ধরনের সেবা করতে প্রস্তুত রয়েছি। দেশের সেবা করতে হলে সরকারকে সহযোগীতা করতে হবে।দেশের জণগনের জন্যে কিছু করার মতো আনন্দ আর নেই। অতীতের মতো এখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের জীবনবাজি রেখে মাঠে কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমি করোনার দুর্যোগময় সময়ে চাঁদপুরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। শুরুতে আমরা বিভিন্ন বাহিনীর, জনপ্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে থেকে কাজ করছি। শহর পর্যবেক্ষণ করা, লকডাউন বাস্তবায়নসহ সকল কার্যক্রম করেছি।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে একজন মানুষও না খেয়ে নেই। আমরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিত অসহায়দের ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছি। শুধু মাত্র জুলাও মাসে পর্যন্ত চাঁদপুরে ১০হাজার ৩শ কল রিসিভ করে, তিন হাজার ৫০ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনেককে অর্থ সহায়তাও দেয়া হয়েছে। আমরা চেয়েছি জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সাথে থাকুক। এখানকার মানুষ আধুনিক তাই তাদের শুধুমাত্র খাদ্যসহায়তা দিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখা সম্ভব না। লকডাউন দীর্ঘ হওয়ায় তারা ঘর থেকে বের হতে চায়।
তিনি বলেন, চাঁদপুরে করোনা রুগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোনভাবেই হোক তাদেরকে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা বেসরকারী হাসপাতালকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবার যুক্ত করবো।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা শহরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও গ্রামগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা। কারন জনবল সঙ্কটের কারনে এতো দূরে যাওয়া হয় না। চাঁদপুরে দায়িত্বরত ১ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ লাইনসে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এসময় কুমিল্লা সেনানিবাসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলিদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল আকবর, কর্ণেল ইমরু আল কায়েস, লে. কর্ণেল খায়রুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন সরোয়ার, চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা, র‌্যাব এবং চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, স্বাস্থবিভাগ, কোস্টগার্ড আনসার বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply