স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চাঁদপুরের লঞ্চে যাত্রী পরিবহণ, দায়িত্ব অবহেলায় বন্দর কর্মকর্তা বরখাস্ত

ইব্রাহীম রনি :
দীর্ঘ দুই মাস পর চাঁদপুর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কম যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে নেয়া হয়নি পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই রবিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৫টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় দুপুরের পর থেকে জেলা প্রশাসন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও নৌ-পুলিশ চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ শুরু করে। এদিকে লঞ্চে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং টার্মিনালে উপস্থিত না থাকার দায়ে চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিআইডাবিøটিএ। তার স্থলে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিআইডবিøউটিএ‘র উপপচিালক মো. আবুল বাশারকে। তিনি প্রধান কার্যালয়ে প্রশাসনিক শাখায় কর্মরত ছিলেন। তার আগে বরিশাল বন্দরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রবিবার বিকেলেই চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তার দায়িত্ব বুঝে নেন মো. আবুল বাশার।


বিআইডাবিøটিএ’র পরিচালক- নৌ-নিরাপত্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কর্তব্য অবহেলার কারণে আজ বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, আজ সকাল ৬টা থেকে বিভিন্ন টার্মিনালে আমাদের লোকজন থাকলেও তার জায়গায় তাকে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নৌপুলিশ ও যাত্রীরা জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মিতালী লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে করোনা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মের বাইরে যাত্রী নিয়ে। এরপর ঘাটে নোঙর করে এমভি রফরফ লঞ্চ যাত্রী উঠাতে থাকে। একপর্যায়ে লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী উঠালে নৌপুলিশ তাদের ৩ জন স্টাফকে আটক করে। এরপর বাড়তি কিছু যাত্রী নামিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে লঞ্চটি। এরপর দেড়টার পর সোনারতরির দু’টি লঞ্চ এবং বিকেল ৫টায় আরেকটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। এ সময় অনেক যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। তাছাড়া লঞ্চকর্তৃপক্ষের নিকট থেকেও দেখা যায়নি বিশেষ কোন ব্যবস্থা। অতীতের সময়ের মত তারা স্বাভাবিকভাবেই যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এ কারণে লঞ্চগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের চাপ সকালে অনেক বেশি ছিল। পরে দুপুরে ২টি লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাটে এনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী দিয়ে ঘাট ত্যাগ করাই। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা ঘাটে নজরদারি করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহণ না করলে আমরা কোন লঞ্চ ছাড়তে দেব না।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাত্রী পরিবহণের জন্য আমরা শনিবার লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছি। এখন তারা যদি তা অমান্য করে তাহলে আমরা আরও কঠোর হবো।
এদিকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলেও টার্মিনালে দায়িত্ব পালনকারী বিআইডবিøউটিএ‘র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারণ, সকালে যখন উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে দুটি লঞ্চ চাঁদপুর টার্মিনাল ত্যাগ করে তখন মাহতাব উদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকা মাহতাব উদ্দিনের উদাসীনতার কারণে রবিবার সকালে ওই দুটি লঞ্চ বাড়তি যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর টার্মিনাল ত্যাগ করেছে।
চাঁদপুর নৌপুলিশের ওসি আবু তাহের বলেন, আজকে যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে লঞ্চগুলো যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধারণ ক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় সেজন্য আমরা তৎপর ছিলাম। এর মধ্যে দুপুরে রফরফ লঞ্চে যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। এ সময় আমরা ৩ জন স্টাফকে ধরে আটকে রাখি। পরবর্তীতে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করার বিষয়টি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply