৬১ লাখ টাকা ফেরতে প্রসংশিত দুই তরুণ : চাকরি অথবা অটোরিক্সা পাচ্ছেন সজীব

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুরে হারানো ৬১ লাখ টাকা ফেরৎ পেয়ে অটোচালক সজিবকে চাকরি, টাকা অথবা অটোরিক্সা পুরস্কার  দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল। সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, তার চাহিদা মোতাবেক তাকে পুরস্কার দেয়া হবে।

বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল বলেন,  আমি বিশাল ক্ষতির থেকে রক্ষা পেয়েছি। পুলিশ, অটোচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন, অটো চালককে নিয়ে আমি আগামীকাল বসবো। সে যদি চাকরি চায় তাহলে তাকে আমার এখানে চাকরি দেব। আর যদি সে টাকা অথবা অটোরিক্সা চায় তাহলে তাকে পুলিশের মাধ্যমে একটি অটোরিক্সা দিয়ে দেব।

এদিকে অটোচালক সজিব ও জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি বাদল গাজীর প্রশংসা এখন জনে জনে। অনেকেই বলছেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রে অন্যতম একটি চরিত্র পার্শ্ব নায়ক। আমরা দর্শকরা স্বভাবগত কারণেই ঘটনাবহুল চলচ্চিত্রেরর কাহিনীর শেষে নায়ককে সকল ক্রেডিট দিয়ে থাকি। আর যত মাতামাতি তার সবটাই মূল নায়ককে নিয়ে। অথচ নায়ক হেরে যাবার সময় বা তার বিপদে (কাহিনী ভিন্নদিকে মোড় নেবার ভয়ে) একজন পার্শ্ব নায়কে ডাকতে থাকি। চাঁদপুরে বিকাশ এজেন্টেন ৬১ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় তেমনই এক পাশ্ব নায়কেরর নাম বাদল গাজী। সে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি। বিকাশ এজেন্টের এতোগুলো টাকা ফিরে পাবার অন্যতম ভূমিকা ছিলো এই বাদল গাজীর। এ দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য হলো : ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। এখান কথা হলো অটোচালক সজীব যদি টাকার ভ্যাগ নিয়ে ভুল মানুষের কাছে যেতো, তবে ঘটনা অন্যরকম হতে পারতো। অটোচালক সজীবের দৃষ্টান্তমূলক উদারতায় মূলত বাদলই পুলিশকে ফোন করে টাকা পাবার বিষয়টি অবগত করে।’
ঘটনার বিষয়ে গাজী বাদল তার ফেসবুক আইডিতে লিখে, রোববার বিকেলে সজীবের আত্মীয় সোহাগ তাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। তারপর সোহাগ এবং সজীব জানায় ফেসবুকে প্রচার হওয়া হারানো ৬১ লাখ টাকা আমাদের কাছে আছে। এখন আমি কি করতে পারি আপনি একটা পরামর্শ দেন। তাৎক্ষণিক আমি চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন সাহেবকে ফোন করি বিষয়টি অবগত করি এবং ঠিকানা দেই। তাৎক্ষণিক তিনি তিনটি মাইক্রো নিয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ পুরাণবাজার অটোরিকশার গ্যারেজে চলে আসেন। এভাবেই সম্পূর্ণ টাকাগুলি উদ্ধার করেন।
একই কথা জানিয়ে অটোচালক সজীব বলেন, তিনজন যাত্রী মনের ভুলে টাকার ভ্যাগটা অটোরিকশার সিটে ফেলে যায়। প্রায় আধা ঘন্টা আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপরেও কেউ না আসায়, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমি তো টাকার মালিকের ঠিকানা জানি না। আর সরাসরি থানায় যেতেও ভয় পাচ্ছিলাম। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসি এবং টাকার ভ্যাগটি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে বোনজামাইর সাথে আলাপ করি। বোনজামাই বিষয়টি প্রতিবেশী বাদল ভাইকে জানায়। এরপর বাদল ভাই চাঁদপুর মডেল থানার ওসি স্যারকে জানায়।
এই ঘটনাটি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর এটি ছিলো রোববারের টপ অব দ্যা টাউন। ফলে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অটোচালক সজীবকে নিয়ে প্রশংসার ঝড় উঠে। ওইদিন রাতেই চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান এই সততার জন্যে তাৎক্ষণিক অটোচালক সজীববে ৫ হাজার টাকা পুরুস্কার দেন। পরদিন সকালে (সোমবার) চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও সজীবকে খাদ্যসহায়তা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
তবে অনেকেই প্রশ্ন রাখছেন বাদল গাজী কী পেল? কারণ, তাৎক্ষনাৎ ভালো পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে সে-ও কী ন্যুনতম পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে।
জানা গেল, পুরাণবাজারের একটি চক্র টাকাটা মেরে দিতেও চেয়েছিলো। কিন্তু সজীবের সততা এবং বাদলের বুদ্ধিমত্তায় তারা সফল হয়নি। তাই বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েলের প্রতি অনেকেই দাবি জানিয়ে বলেছেন, সততা, বুদ্ধিমত্তার জন্যে বাদল গাজীকেও সামান্যতম হলেও পুরস্কৃত করুন।
উল্লেখ্য, এ মহতি কাজের জন্য চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অটোচালক সজীবসহ জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি বাদলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply