কোথাও দাবি করিনি জনাব ফরিদ আহমেদ মানিক আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখল করেছেন, বিষটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে : জুলকারনাইন সায়ের সামি
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দু’দিন আগে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপর সেটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রচারণা চালাতে শুরু হয়। চাঁদপুরসহ দেশ-বিদেশে শুরু হয় তোলপাড়। এরই মধ্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুল-ভ্রান্তি দূর করার জন্য রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার পর সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামী তার ফেসবুক আইডিতে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘একটি সহজ বিষয়কে নানাভাবে টুইস্ট করে বেশ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গতপরশু স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসিনা এবং তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার নূরু — স্থানীয় বিএনপির সমর্থনে চাঁদপুর সদরে আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখল করেছে এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা ফরিদ উদ্দিন মানিকের সাথে আমার চাচারা সাক্ষাত করলে, তাঁদেরকে বলা হয়েছে “আপনিতো আওয়ামী লীগ করতেন, ভিটা থিকা যদি আপনাকে উচ্ছেদ করে দেই তাহলে কি করবেন? আপনাকে ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা আমার আছে।” ব্যাস এতটুকুই।’
‘আমি কোথাওই উল্লেখ করিনি বা দাবি করিনি যে জনাব ফরিদ উদ্দিন মানিক আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখল করেছেন। বরং তার আমন্ত্রণেই আমার চাচা’রা বিষয়টি সুরাহা’র জন্যে বৈঠকে বসেন। এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষে বাক্য বিনিময়ে হয়।’
‘এ বিষয়টি জনসম্মুখে উপস্থাপনের পর বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়, এবং বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি দ্রুত নিরসনে সকল রকমের আশ্বাস দেয়া হয়। বিএনপির সাথে ওই সাবেক ব্রিগেডিয়ার এবং তার স্বামীর কোন সম্পর্ক নেই বলেও নিশ্চিত করা হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন মানিক কেবল মীমাংসার জন্যে এতে জড়িত হয়েছিলেন, তার অন্য কোন উদ্দেশ্যও ছিলোনা।’
‘বিষয়টি পাবলিকলি প্রকাশ করায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা যেভাবে সহায়তার প্রদানে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ, সত্যিকার অর্থে আমার ধারণাও ছিলোনা যে আপনারা এতটা আন্তরিকভাবে ছুটে আসবেন।’
‘যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিষয়টির সুরাহা চলমান। আপনাদের সকলকে আপনাদের ভূমিকার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
এদিকে এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, কিছুদিন আগে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ফোন করেছিলেন। তিনি অনুরোধ জানিয়েছিলেন যে, তার চাঁদপুরের বাড়ির জায়গা কে বা কারা দখল করছে, বিষয়টি যেন আমি দেখি। আমি তার বাড়িটি চিনি। সেই পথ দিয়ে আমার যাতায়াত ছিল।
তিনি আরও বলেন, জুলকারনাইনের অনুরোধে আমি আমাদের জেলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক কমিশনার শাহজাহানকে ফোন করে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানাই। তারই প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার আমার বাড়িতে জুলকারনাইনের চাচা খুরশীদ সাহেবসহ দুই পক্ষ আসে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের কাছ থেকে জানতে পারি, এই জমিগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। তাছাড়া ওইদিন জুমার নামাজের পর আমাদের ছাত্রদলের এক নেতার বাবার জানাজা ছিল। তারই প্রেক্ষিতে আমি উনাদের বলি, আপনার এখন চলে যান। কারণ, বাড়ি থেকে জানাজার স্থান দূরে হওয়ায় সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতির বিষয় ছিল আমার। কিন্তু খুরশীদ সাহেব জুলকারনাইনকে বলেছেন- আমি নাকি তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। তাদের জায়গা নাকি দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছি।
দল আমাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কারণ, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আজকালের মধ্যে শোকজের জবাব দেবো। আশা করছি, দল বিষয়টি বুঝতে পারবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকার কাছে খান বাড়ি জুলকারনাইন সামির পৈত্রিক নিবাস। তার চাচা-জেঠা সম্পর্কের দু’পক্ষের মাঝে পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ বিষয়ে চাঁদপুরের আদালতে মামলা চলছে বলে জানা গেছে।