চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার বেহাল, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ
ঘটছে দুর্ঘটনা, হাজীগঞ্জ টু খাজুরিয়া সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি
ইব্রাহীম রনি :
বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে বেহাল অবস্থা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের। কয়েক বছর মেরামত না হওয়ায় প্রায় হাজীগঞ্জ থেকে খাজুরিয়া অংশের প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। দুর্ঘটনায় ঘটছে হতাহতের ঘটনা। গাড়ি চালক ও যাত্রীরা বলছেন, সড়কের ভঙ্গুর অবস্থা, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা যেতে এক ঘণ্টার পথ যেতে লাগছে প্রায় তিন ঘণ্টা। এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কার ও ফোর লেন করার দাবি জানিয়েছেন চালক ও যাত্রীরা। আর সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দ্রুতই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেলো, সড়কটির বিভিন্ন স্থানেই রয়েছে নানা সমস্যা। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ থেকে খাজুরিয়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রাস্তা পড়ে আছে একেবারেই বেহাল দশা অবস্থায়। প্রায় দেড় বছর ধরে উয়ারুক, দোয়াভাঙ্গা, জগতপুর, কালিয়াপাড়া, খাজুয়ারিয়া এলাকার রাস্তায় ছোট বড় গর্ত। একেকটি গর্ত ২ থেকে ৪ ফুট আর গভীরতা ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত। অনেকগুলো বিটুমিন একজায়গায় হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে বহু হাম (টিলা)। রাস্তার দুপাশে জঙ্গলের কারণে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাতও নেই।
চালকরা জানান, বাস, ট্রাক, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কের গর্তের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। পিচ ঢালাই উঠে ছোট পাথরগুড়ো ও ইটের সুরকিগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যার ফলে গাড়ি ব্রেক করলে স্লিপ কেটে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এসব কারণে যানবাহন চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের এ সতের কিলোমিটার রাস্তা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছেন না।
সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর বলেন, সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ি চালানো যায় না, উল্টে পড়ে যায়।
বাস চালক মিজান খান বলেন, সড়কপথে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামের অনেক পরিবহন চাঁদপুর হয়ে বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি এ সড়কটি ব্যবহার করে। তাই সড়কটিতে অনেক চাপ থাকে। তার মধ্যে আবার সড়কটির বেহাল দশার কারণে তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার বহু ফাঁদ।
বোগদাদ বাস চালক রহমান খান বলেন, প্রতিদিন চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে প্রতিদিন চারবার যাত্রী নিয়ে গাড়ি আসা যাওয়া করি। খাজুরিয়া থেকে উয়ারুক পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তায় গর্তে পড়ে গাড়ির স্প্রিং ভেঙে যায়, স্টেয়ারিংয়ের সাথে যে জয়েন্ট থাকে সেখানে ভেঙে যায়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ি অনেক সময় খাদে পড়ে যায়। এতে করে চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই এ রাস্তাটির কাজ করা অত্যন্ত জরুরী।
পিকআপ চালক জহির উদ্দিন বলেন, সড়কের কাজ ভালো করে করে না। তাছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এই সড়কটির সংস্কার কাজও হয়নি। এখন বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক ধরনের গর্ত হয়ে গেছে। খুব সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তারপরও দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাসচালক সফিকুর রহমান জানান, এ সড়কে যানবাহনের অত্যধিক চাপ সব সময়ই থাকে। তাছাড়া চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বোগদাদ, আইদি, পদ্মাসহ বিভিন্ন পরিহন চলাচল করে। পাশাপাশি চলাচল করে পণ্যবাহী প্রচুর গাড়ি। এ কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কটি ফোর লেন করা হলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার মানুষের আরামদায়ক ভ্রমণ হবে।
যাত্রীরা বলছেন, খাজুরিয়া থেকে উয়ারুক পর্যন্ত সড়কটি ঠিক মতো মেনটেইনেন্সও করা হয়নি। সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যাত্রীরা পঙ্গুত্ববরণ করছে। আমরা এই মরণ ফাঁদ থেকে আমরা মুক্তি চাই।
শিক্ষার্থী আপন বলেন, এ সড়কে দিন দিন যান চলাচল বাড়ছে। সড়কটিতে অনেক খানাখন্দ হয়েছে। তাই সময়ের প্রয়োজনে এ সড়কটি চার লেন করা উচিত। তাহলে সবার সুবিধা হবে।
কচুয়া উপজেলা যুবদল নেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘ দিন ধরেই। ২০১৫ সাল থেকে কোন কাজ হয়নি। আমরা সড়ক বিভাগের চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কয়েকবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। সরকার যে সড়কের জন্য এতো টাকা বরাদ্দ দেন এই টাকাগুলো কোথায় যায়?
কচুয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বালুবাহী ট্রাকগুলো মাত্রাতিরিক্ত ওজনের মালামাল নিয়ে চলাচলের কারণে রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এই সকড়কের কুমিল্লা অংশে সব সময় কাজ হওয়ায় সেটুকু ভালো থাকে। কিন্তু চাঁদপুর অংশে খাজুরিয়া থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে বড় গাড়ি চলাচল করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এমনকি রিক্সা বা অটোরিক্সা চালানোটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি, এটি আমাদের প্রতি একটি বৈষম্য। আমাদেরকে তারা ভালো নজরে দেখেন না।
সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের বিভাগীয় জনবল দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করে রাখছি, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট না। রাস্তাটি ঠিক করার জন্য প্রাক্কলন পাঠিয়েছি। তা অনুমোদনও হয়েছে। কুমিল্লা অফিস থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে, তা মূল্যায়ণের পর তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।