বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল : শিক্ষামন্ত্রী

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাস করার কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল সোমবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গণপরিষদে সংবিধান পাস করার সময় বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন ধর্ম পবিত্র, একে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বক্তব্য এবং তার পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশকে আমরা দেখেছি, তা দেখে আমরা বুঝতে পারি- বঙ্গবন্ধুর একমাত্র অপরাধ ছিল তিনি বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্ম নিরপেক্ষতা হলো- বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি। আর এই জন্যই আজ আমরা বলতে পারি, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন- সমাজতন্ত্র, প্রগতি ও সাম্প্রদায়িকতা পাশাপাশি চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু কোনও নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির সমাজতন্ত্রের অন্ধ অনুকরণ করতেন না। তিনি বাঙালি সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব রকমের শোষণ, বৈষম্য ও কুপমণ্ডুকতাহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এটাই ছিল তার অপরাধ। তাকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আদর্শের মৃত্যু হয় না। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। শত প্রতিকূলতার মধ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজ আমাদেরকে পথ দেখায়। খণ্ডিত সভ্যতা নয়, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ও সভ্যতার সমন্বয়ে গঠিত একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন। আর এজন্যই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।’
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘উপমহাদেশে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সব দাঙ্গার বিরুদ্ধে। পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করেছিল, বঙ্গবন্ধু তার প্রতিবাদ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন— আমরা হিন্দু বা মুসলিম যেমন সত্য, তার চেয়ে বড় সত্য হলো আমরা বাঙালি।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য খন্দকার ইফতেখার হায়দারের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ইউজিসি অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য ড. ফখরুল আলম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply