আদিবাসী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনা দুর্গাপুরের কুল্লগড়া ইউনিয়নের ছনগড়া গ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থী শিলা হাজং পরীক্ষা দেওয়ার নিশ্চয়তা পেল। গতকাল রোববার নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ তার হাতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। অর্থের অভারে তার নার্সিং ইন্সিটিউশনের পরীক্ষা দেওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
জানা গেছে, তিন বছরের বেতন ও হোষ্টেল ভাড়ার বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণে পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় ময়মনসিংহ শহরের ব্রাম্মপল্লীর স্কলার নার্সিং ইন্সিটিউশনের শিক্ষার্থী শিলা হাজংয়ের। তিনি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ছনগড়া গ্রাামের রবীন্দ্র্র হাজংয়ের মেয়ে। বেসরকারি ওই স্কলার নার্সিং ইন্সিটিউশনের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শিলা হাজং। অর্থাভাবে তার পরীক্ষা দেওয়ায় অনিশ্চয়তার নিয়ে শনিবার দৈনিক সমকালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে দৃষ্টি পড়ে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশের। তিনি জেলার দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখার নির্দেশ দেন এবং শিক্ষার্থীকে নিয়ে তার সাথে দেখা করার কথা বলেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজিব উল আহসান শিলা হাজংকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে যান। পরে জেলা প্রশাসক ওই শিক্ষার্থীকে বুকে চেনে নেন এবং তার হাতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনির হোসেন, দুর্গাপুর ইউএনও মোহাম্মদ রাজিব উল আহসান, সদর ইউএনও মাহমুদা আক্তার, স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা দেওয়ার সমস্ত চাকা পেয়ে শিক্ষার্থী শিলা হাজং তার ভাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
শিলা হাজং সমকালকে বলেন, আমি কথা বলার ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসক স্যারকে আমার ধন্যবাদ দেওয়া মত কোন ভাষা নেই। তিনি আমাদের কাছে ঈশ^রের মত হয়ে এসেছেন। এই টাকা না পেলে আমার পরীক্ষা দেওয়া হতো না। আমি উনার এই মহানুবভতার কথা জীবনভর মনে রাখব।
শিলা হাজংয়ের ভাই রঘুনাথ হাজং জানান, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জোগার হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখন তার বোনের পরীক্ষা দিতে আর কোন অনুবিধে হবে না।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, দুর্গাপুরের শিক্ষার্থী শিলা হাজং অর্থের অভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে না। বিষয়টি জানতে পেরে দুর্গাপুর ইউএনওকে খোঁজ নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসার জন্য বলেছিলাম। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ ও দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার যাবতীয় খরচ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।
উল্লেখ্য, তিন বছরের বেতন ও হোষ্টেল ভাড়ার বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। আগামী মঙ্গলবার পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ তারিখ। ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে তার পরীক্ষা দেওয়া হবে না। শনিবার দৈনিক সমকালে ‘অর্থ সংকটে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনিশ্চিত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষাে ফরমপূরনের জন্য টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক চাঁদপুরে দায়িত্ব পালনকালেও বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন