কচুয়ায় স্কুলছাত্রী মিশু হত্যার এক বছর, ২ আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি চায় স্বজনরা

কচুয়া প্রতিনিধি :
চাঁদপুরে কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নের বড়-হায়াতপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল নাঈম মিশু হত্যার এক বছর পূর্ন হলো আজ। গত বছরের এই দিনে স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল নাইম মিশু বাড়ির পূর্ব দক্ষিন পাশ^বর্তী বিলে সখের বশে ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ওইদিন সে বাড়িতে ফেরত না আসায় তাকে না পেয়ে তার মামা মনপুরা গ্রামের অধিবাসী ডা: ইকবাল হোসেন পরদিন কচুয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। যার নং- ১২। তারিখ: ০১.০৮.২০২০ ইং। সাধারন ডায়েরীর প্রেক্ষিতে কচুয়া থানা পুলিশ সরেজমিনে বড়হায়াতপুর বিলসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেয়।
ঘটনার দুদিন পর ২ আগষ্ট বেলা পৌন ১টার দিকে স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল নাইম মিশুর লাশ খালের ওপর হেলেঞ্চা ঘাসের সাথে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় তার মা ফাতেমা আক্তার শেফালী বাদী হয়ে কচুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং-০২,তা: ০৩.০৮.২০২০ ইং।
পরে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ওই বাড়ির আত্মীয় (ভাগিনা) ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাব্দেরগাঁও গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে সজীব হোসেন (১৯) কে আটক করে। পরে সজীবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একই গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে নুর আলম ওরফে নুরা (২৬) কে আটক করলে সে স্কুল ছাত্রীকে তার গলায় ওড়না পেচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে পানিতে ডুবিয়ে রাখে বলে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দেয়।
পরবর্তীতে পুলিশ গ্রেফতারকৃত দুই আসামী নুরে আলম নুরা ও সজীব হোসেনকে ৪ আগষ্ট বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে চাঁদপুরের জেল হাজতে প্রেরন করেন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কচুয়া থানা উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো. মকবুল হোসেন গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীটপত্র (অভিযোগ পত্র) দাখিল করেন, যার নং- ১৩৬, তারিখ: ২৯.০৯.২০২০ইং।
বাদী ফাতেমা আক্তার সেফালী জানান, আমার মেয়েকে হত্যার এক বছর হলেও আজো আমরা মেয়ের হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছি। আমার মেয়েকে যেভাবে আসামীরা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে আমিও তাদের সেই ভাবে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার মতো যাতে কোনো মা ও বাবা তার সন্তানকে এভাবে হারাতে না হয়। সর্বোচ্চ বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করে দ্রুত রায় দিবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।
নিহত স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল নাইম মিশুর বড় বোন কলেজ ছাত্রী নাজমুন নাহার শিমু বলেন, আমার বোনকে আজো আমরা খুজেঁ বেড়াই। তাকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তারা মানুষরূপী পশু। আমার বোনের হত্যার বদলে তাদের ফাঁসি চাই। আমরা তো কোনো দোষ করেনি। বিনা অপরাধে আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে আমরাও তাদের ফাঁসি চাই।
প্রতিবেশী জেঠা আমির হোসেন ও জেঠি জেসমিন বেগম বলেন, জান্নাতল নাইম মিশু খুবই শান্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ছিলো। তাকে এভাবে হত্যা করা হবে তা আমরা কখনো ভাবিনী। মিশু হত্যাকারীতের দ্রুত শাস্তির দাবি করছি অমরা।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. আহসান হাবীব জুয়েল বলেন, মিশু হত্যা আমার ইউনিয়নের একটি ন্যাক্করজনক ঘটনা। এমন একটি ঘটনা আমার ইউনিয়নে হবে তা কখনো আশা করিনি। বিজ্ঞ আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন এ দাবি জানাচ্ছি।
স্কুল ছাত্রী জান্নাতুল নাইম মিশুর মামা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, মিশু আমার অতি আদরের ভাগনি ছিলো। তার বাবা মো. আবু হানিফ ছেলে ও মেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব রয়েছে।কিন্তু মানুষরূপী অমানুষ নুরে আলম নুরা ও সজীব আমার ভাগনিকে বাঁচতে দিল না। আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই যাতে আর কোনো অমানুষ এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত না হয়।
উল্লেখ্য যে, কচুয়া উপজেলার বড়-হায়াতপুর গ্রামের অধিবাসী ও প্রবাসী আবু হানিফের মেয়ে ও সাদিপুরা চাঁদপুর এম.এ খালেক স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী জান্নাতুল নাঈম মিশু গত বছরের কোরাবনির ঈদের আগের দিন দুপুরে বাড়ির পাশে বিলে ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ঈদের পরের দিন পাশ^বর্তী বিলের খালে তার গলিত লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী।

শেয়ার করুন

Leave a Reply