কোনভাবেই জাটকা মৌসুমে বালু উত্তোলন করা যাবে না, অবৈধ বাল্কহেড ধ্বংস করা হবে, প্রয়োজনে গ্রেফতার : অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম

জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের মতলবের ষাটনল থেকে মোহনপুর পর্যন্ত র‌্যালি ও মতবিনিময় সভা
অভিজিত রায় :
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সারা বছরই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্ত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারেন্ট জাল উৎপাদন করে থাকে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশ বর্তমানে মাছ উৎপাদনে অনেক অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ্বের ৮৬ শতাংশ ইলিশ দেশে উৎপাদিত হয়। এক সময় ইলিশ শীতকালে হতো না কিন্তু এখন শীতেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের জেলা পুলিশের আয়োজনে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ (মার্চ-৩০ এপ্রিল) উপলক্ষে মতবিনিময় সভা ও নৌ র‌্যালির প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
৯ মার্চ বুধবার সকাল ১০টায় চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল লঞ্চ পর্যটন মাঠের সভায় অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, চাঁদপুরের এ অঞ্চলে একজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান রয়েছেন, আপনি যতই ক্ষমতাশালী হননা কেন আপনি রাষ্ট্রের চাইতে শক্তিশালী নন। ওনাকে আপনারা সবাই চিনেন আমি নাম বলতে চাই না। কোনভাবেই জাটকা মৌসুমে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অবৈধ বাল্কহেড পেলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। আইন না মানলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকেও গ্রেফতার করা হবে। আইন সঙ্গতভাবে যেটুকু বলা হয়েছে সেটুকু জায়গায় বালু উত্তোলন করবেন।
তিনি বলেন, দেশের নদ-নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাবে নৌ-পুলিশ। নদীর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য নদীকে প্রবাহমান রাখতে হবে, নদীকে বাঁচাতে হবে। অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করে নদী ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, নৌ পুলিশের অভিযানে শত শত কোটি টাকার জালও জব্দ করা হয়েছে। আমরা স্থায়ীভাবে কারেন্ট জাল বন্ধ করার চেষ্টা করছি। এখন থেকে নৌ পুলিশ নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে নদীতে নামবে, যাতে করে দুষ্কৃতকারীদের আটক করতে পারে।
নৌ-পুলিশ প্রধান বলেন, ‘নদী ও নদীর সম্পদ রক্ষায় নৌ-পুলিশ ব্যাপক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নামছে। নিয়মিত কারেন্ট জালসহ বেহুন্দি জাল, চরখেশা জাল, চায়না জাল, সিনথেটিক জাল, ফাঁস জাল, মশালী জাল, গোল জাল, পাই জাল, কোনা জাল, ছান্দি জালসহ সব ধরনের অবৈধ জাল জব্দের অভিযান চলছে।
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার শিবলী কায়সারের পরিচালনায় জাটকা রক্ষায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, ১নং ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম, নৌযান শ্রমিক নেতা সবুজ শিকদার, সাংবাদিক সামছুজ্জামান ডলার, জেলা নৌজান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরদার, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান, মতলব উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ওমর আলী প্রধান।
মতবিনিময় সভায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খাঁন মজলিস উল্লেখ করেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত দুই মাসে জাটকা সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ১১৮টি অভিযান চালানো হয়েছে এবং ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০টি মামলা, ৮ জনকে জেল-জরিমানা ও ৬টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত জাটকা না ধরার বিষয়ে সবার সঙ্গে যৌথভাবে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু জেলে খাল কেটে ও অস্থায়ী হাট-বাজার বসিয়ে জাটকা কেনাবেচা করছিল। আমরা এসব বন্ধ করেছি। আমরা জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই। নদীতে জাটকা না ধরলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে জেলেদেরই উপকার হবে।’
এ সময় নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, মোল্যাহ নজরুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলেরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply