চাঁদপুরের ময়ূর লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি, ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নি বার্ড নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, লঞ্চে আড়াই থেকে তিনশ’ যাত্রী ছিল। দু’টি লঞ্চের সংঘর্ষের পর এ দুর্ঘটনা ঘটে। আরও অনেকে এখনও নিখোঁজ আছেন। তাদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের সদস্য ও স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ৫০ জন যাত্রী নিয়ে মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট লঞ্চ ঢাকায় আসছিল। শ্যামবাজার এলাকায় চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের সঙ্গে এর সংঘর্ষ হয়। এ সময় মনিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ নারী ও ৩ শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি রেজাউল করিম ভূঁইয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, লাশগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতলে নেওয়া হবে।
সোমবার সকালের এ দুর্ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচয় মিলেছে ৩০ মরদেহের। তারা হলেন- ১. সত্যরঞ্জন বনিক (৬৫), ২. মিজানুর রহমান (৩২), ৩. শহিদুল (৬১), ৪. সুফিয়া বেগম (৫০), ৫. মনিরুজ্জামান (৪২), ৬. সুবর্ণা আক্তার (২৮), ৭. মুক্তা (১২), ৮. গোলাম হোসেন ভুইয়া (৫০), ৯. আফজাল শেখ (৪৮), ১০. বিউটি (৩৮), ১১. ছানা (৩৫), ১২. আমির হোসেন (৫৫), ১৩. মো. মহিম (১৭), ১৪. শাহাদাৎ (৪৪), ১৫. শামীম ব্যাপারী (৪৭), ১৬. মিল্লাত (৩৫), ১৭. আবু তাহের (৫৮), ১৮. দিদার হোসেন (৪৫), ১৯. হাফেজ খাতুন (৩৮), ২০. সুমন তালুকদার (৩৫), ২১. আয়শা বেগম (৩৫), ২২. হাসিনা রহমান (৪০), ২৩. আলম বেপারী (৩৮), ২৪. মোসা. মারুফা (২৮), ২৫. শহিদুল হোসেন (৪০), ২৬. তালহা (২), ২৭. ইসমাইল শরীফ (৩৫), ২৮. সাইফুল ইলাম (৪২), ২৯. তামিম ও ৩০. সুমনা আক্তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটে চলাচলকারী মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাটে নোঙর করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ওই সময় ঘাটে নোঙর করে থাকা ময়ূর-২ নামের আরেকটি লঞ্চ ঘুরানোর সময় সেটি মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে মার্নিং বার্ড ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই ভেতরে আটকা পড়েন।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচারক একেএম আরিফ উদ্দিন জানান, বেশিরভাগ যাত্রী উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে ডুবুরিরা কাজ করছে।
নিহতদের স্বজনরা জানান, ‘মর্নিং বার্ড’ টঙ্গিবাড়ী এলাকার লঞ্চ। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি এলাকা থেকে প্রতিদিন সকালে ব্যবসায়ী ও অফিসগামীদের নিয়ে সদরঘাট আসে। সন্ধ্যায় আবারও ফিরে যায় কাঠপট্টিতে। লঞ্চের বেশিরভাগ যাত্রীই ছিল টঙ্গিবাড়ী এলাকার।
এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফন বাবদ ২০ হাজার এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, দিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও পিপিপি সেল) মো. রফিকুল ইসলাম খান। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার দিকে খবর পেয়ে এখানে আসি। এসে দেখি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ড্রাইভে রয়েছে। আমাকে তারা কাজ করতে বললো। এরপর আমি নামলাম। লঞ্চটি ৬০-৭০ ফুট পানির নিচে কাত হয়ে রয়েছে। একটু তল্লাশি করার পরই দু’টি মরদেহ পেলাম। এরপর আবার যখন যাই তখন দেখি লঞ্চটি উপুড় হয়ে আছে। এরপর একে একে শিশুসহ আরও সাতটি মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এরমধ্যে দু’জন নারী রয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply