চাঁদপুরে করোনা সংক্রণরোধে আবার কঠোর হচ্ছে প্রশাসন, বিকেল ৪টার পর দোকানপাট বন্ধ

ইব্রাহীম রনি :
৫শতাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত জেলা চাঁদপুরে করোনার বিস্তার রোধে আবারও কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। খাবারের দোকান ও ওষুধের দোকান ছাড়া বিকেল ৪টার পর খোলা রাখা যাবে না কোন দোকানপাট। গত ৯ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণার পর এ নির্দেশনা বেশ কিছু দিন মানা হলেও পরবর্তীতে শহরের দোকানপাট রাত অবধি খোলা রাখতে দেখা যায়। তবে ৪টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও শহরে মাইকিং করতে দেখা গেছে। সেই সাথে দোকানপাট বন্ধ করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী, ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের কালিবাড়ি, চিত্রলেখা, ছায়াবাণি মোড়, নতুনবাজারসহ পৌর এলাকার ১৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে দোকানীদের হুশিয়ার করে দেয়া হয়। এছাড়া ৫ জন ব্যবসায়ী আইন অমান্য করায় তাদেরকে ৫০০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, বিকেল ৪টার পর দোকানপাট খোলা রাখা যাবে না- এটি আগের নির্দেশনাই। তবে মাঝখানে কিছু দোকানপাট এ নির্দেশনা অমান্য করতে দেখা গেছে। তাই করোনা সংক্রমণরোধে আমরা আবারও কঠোর হতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী, ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মাঠে নেমেছি। ৪টার পর খাবারের দোকান এবং ফার্মেসি ছাড়া সব বন্ধ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডে একযোগে করোনা প্রতিরোধে গণ সচেতনামূলক প্রচারণা। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টানা আড়াই ঘন্টা এ প্রচারণা চলে।

এই প্রচারণার ফলে বিকেল ৪ টার মধ্যে শহরের দোকান পাট (ফার্মেসী ও কাঁচাবাজার ব্যতীত) সব নিয়ম মেনে সবাই বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীগণ।
এর মধ্যেও ৫ জন ব্যবসায়ী আইন অমান্য করায় তাদেরকে ৫০০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রচারণাকালীন পথচারীদের মাঝে ৩০০ মাস্ক বিতরণ করা হয়। কয়েকজন করোনা রোগীর বাসায় উপহার (ফলমূল)বিতরণ করা হয়।


এতে অংশগ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম ও তার মোবাইল কোর্ট, জেলা প্রশাসনের ৮০ জন ভলান্টিয়ার, পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ, পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, বিকেল ৪টার পর দোকানপাট খোলা রাখা যাবে না- এ নির্দেশনাতো আগেই দেয়া আছে। তাই বিকেল ৪টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হবে।

উল্লেখ্য, জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ০৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন।
ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্ল্যেখ করা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রামক ঝুঁকি মোকাবেলায় ’করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনাক্রমে চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলো।
এ জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত সড়ক ও নৌপথে অন্য কোনো জেলা থেকে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে বা এ জেলা থেকে অন্য কোনো জেলায় যেতে পারবে না। জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃউপজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও একইরূপ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে। সকল ধরনের গণপরিবহন, জনসমাগম পূর্বে ন্যায় বন্ধ থাকবে। তবে জরুরী সেবা তথা চিকিৎসা, খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ ইত্যাদি এর আওতা বহির্ভূত থাকবে।
জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ।
এরপর গত ৮ জুন ভাচুয়াল সভা শেষে নতুন পদ্ধতিতে লকডাউন কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বা উপজেলা লকডাউনের পরিবর্তে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি ও তার আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে ১৮ জুন পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৫১১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত ৪৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪৬ জন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply