চাঁদপুরে বেসরকারি পর্যায়ে ৫০ বেড বাড়ালে করোনা রোগীরা উপকৃত হবে

* সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ
* অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় সংকট কমছে
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর জেলার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা জুম অ্যাপের মাধ্যমে ৮ আগষ্ট রোববার সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার শুরুতেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম গতসভার কার্যবিবরী পাঠ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়। পরে বর্তমান জেলার আইনশৃংখলা পর্যালোচনা করে আগের তুলনায় সন্তোষজনক বলে জানানো হয়।
পরে জেলা প্রশাসক সদস্যদের বক্তব্য দেয়ার ফ্লোর দিলে কমিটির সদস্য সিভিল সার্জন ডাঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জেলার করোনা পরিস্থিতি, আক্রান্ত মৃত্যু, গণটিকা হাসপাতালের রোগীভর্তিসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, গতকাল গনক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে ৯২ টি ইউনিয়ন এবং ২ টি পৌরসভার ১১৭টি কেন্দ্রের ৩০৩ টি বুথে ৬১২০০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বাকি ১০ হাজার টিকা আমাদের কাছে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরের আদেশে আমরা সেগুলো দেবো। আর প্রথম পর্যায়ে যারা অক্সফোর্ড কোভিসিল্ড প্রথম ডোজ নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমান, তাদের জন্য ১২ হাজার ডোজ টিকা আছে। আমরা শহর এলাকায় তাদের জন্য টিকাটা আলাদা একটি কেন্দ্রে নিতে চাই। আর তখনই হাউজ থেকে প্রস্তাব করেন, হাসপাতালের পাশে রোটারী ক্লাবসংলগ্ন যে সরকারি প্রাইমারি স্কুলটি আছে, সেই স্কুলটি ঐ টিকার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হবে। ঐ স্কুলের সভাপতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি এডঃ সাইফুদ্দিন বাবু এতে সম্মতি দেন।
সিভি ল সার্জন আরো জানান, চাঁদপুরে করোনায় মৃত্যু আগের থেকে তুলনায় কমে এসেছে। কিন্তু হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেড়ে চলছে। তিনি জানান, রোবার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ২২২ জন কোভিড রোগীসহ এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছে। সিভিল সার্জন জানান, অক্সিজেন প্লান্ট থেকে আর ৫০ টি মিটার সংযোগ দেয়ায় এখন ১০০ হয়ে গেছে। আর ৫০টি ১/২ দিনের মধ্যে লেগে যাবে। তিনি বলেন, এই অক্সিজেন সাপ্লাই, আবুল খায়ের গ্রুপসহ ব্যক্তি সাংগঠনিক পর্যায়ে অক্সিজেন সরবরাহ করায় এর সংকট কমে যাচ্ছে। আর ৫০ টি লাগলে সংকট থাকবে না।
সভায় উঠে আসে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়কের সমন্বয়হীনতার অভাব। তিনি এসব গুরুত্বপূর্ণ সভায় হাজির থাকেন না, আবার হাজির থাকলে কথা বলেন না। কি চাহিদা বা কি কি সমস্যা বা যা যা হাসপাতালে করনীয়, তা উপস্থাপন করার কথা তত্ত্বাবধায়কের। কিন্তু তিনি তা করেন না। এতো সুবিশাল হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল কর্তার এমন উদাসীনতায় সভায় চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক বলেন, আমি উনাকে একাধিক বার খোঁজ নিয়েছি, বলেছি আপনার কি রকম সহযোগিতার প্রয়োজন বলুন, একটা তালিকা পাঠান। আমাদের সাথে সমন্বয় করুন। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বা উনার বড় ভাই, যিনি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং তাঁরা ২ জনই এখানের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভাবেন, কাজ করেন। তাহলে আপনার সংকোচটা কোথায়?
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি উনাকে ফোন করি ধরেন না। অথচ তিনি এতো বড় পোষ্টে আছেন, যার গুরু দায়িত্ব এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করা। এই হাসপাতাল নিয়ে কথা বলতে হয় সিভিল সার্জনের কেন? সভার একপর্যায়ে জানা গেলো, তত্তাবধায়ক ছুটিতে আছেন। হাসানুজ্জামান নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, কিন্তু উনি যুক্ত হননি। আধাঘন্টা পরে যুক্ত হন হাসপাতালের আরএমও সোজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি জানান, হাসপাতালের বারান্দাতেও করোনা রোগিকে জায়গা করে দিতে হচ্ছে ফ্লোরে।
এড. সাইফুদ্দিন বাবু জানান, পিসিআর ল্যাবে দ্রুত টেস্ট করানোর নামে দালাল তৈরি হচ্ছে। আগে টেস্ট করে দেয়ার নাম করে রোগীর কাছ থেকে ৫ শ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ আসছে। পুরান বাজারের এক ছেলে এই কাজটি করছে। তার সাথে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে। পরে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানালেন, ঐ ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরো কারা আছে জড়িত তাদের খোঁজা হচ্ছে।
সভায় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, যেভাবেই হোক আমরা টিকা কেন্দ্রে আমরা পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগী ভর্তি নেয়ার বিষয়ে এগিয়ে আসা জরুরী। তিনি বলেন, আপনারা বসুন এ ব্যাপারে। একটা পন্থা বের করুন। নাহয় এমনও হতে পারে আপনাদের আসতে সংশ্লিষ্টরাই বাধ্য করবে। পুলিশ সুপার বলেন, ব্যাপারগুলো পজেটিভ ওয়েতে দেখুন।
সিভিল সার্জন এ বিষয়ে জানান, বেসরকারি পর্যায়ে অন্ততঃ ৫০ টা বেডও যদি বাড়ানো যায়, তাহলে করোনা রোগীরা উপকৃত হবেন। এ ব্যাপারে তিনি বেসরকারি হাসপাতালের ইউনিটি উনাকে একটা আপডেট দেবেন বলে জানিয়েছেন কাল। চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, জেলার বাইরের রোগী ভর্তির প্রবনতা কমাতে হবে। পাশাপাশি উপজেলার রোগিরা যেন উপজেলাতেই চিকিৎসা নেন সে ব্যবস্থা করা। খুব জরুরি ছাড়া সদরে আনার কোন যুক্তিকতা নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় থাকতে হবে। সমন্বয় ছাড়া ভালো কিছু হয় না।
এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়াম্যান, আঃ কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি, ফরিদা ইলিয়াছ প্রমুখ। সভার শেষাংশে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, তাহলে কোন বাহিনী বা কঠোর কোন ব্যবস্থা নিয়ে লাভ হবে না। যারা জেগে ঘুমায় তারা মানবতার জন্য নিবেদিত না। অনেকে জেনে শুনে নিয়ম ভাঙছেন। আশা করি এসব করবেন না। তিনি বলেন, আমরা হতাশ নই, সবসময়ই আশাবাদী।
এছাড়া এ সভার সাথেই আদালত সহায়তা কমিটির, জেলা পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে, জেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির, মাদক নিরোধে টাস্কফোর্সের, জেলা চোরাচালান মামলা সম্পর্কিত মনিটরিং কমিটির, জেলা মানব পাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলা মনিটরিং কমিটির এবং জেলা আইন-শৃঙ্খলা রিভিউ কমিটির সভা অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় অংশ নেন পুলিশ সুপার চাঁদপুর, সিভিল সার্জন চাঁদপুর, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সকল, চাঁদপুর জেলার সকল সরকারি দফতরের প্রধানগণ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যগণ।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply