চাঁদপুরে বৈধ লাইসেন্সের দ্বিগুণ অবৈধ সিএনজি চলাচল করছে

এইচ.এম নিজাম :
এবার রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার (থ্রি-হুইলার) মালিক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের জন্য গণসচেতনতা সভার আয়োজন করেছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ। ব্যতিক্রমি ব্যনারে পুলিশ সুপারের এই আয়োজন পুরো জেলায় করোনাকালে সড়ক যাতায়াত ব্যবস্থায় একটি নিয়ম শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বলে মন্তব্য পুলিশ সুপারের।
মঙ্গলবার ৩ নভেম্বর সকাল ১১টায় চাঁদপুর পুলিশ লাইনস্-এ গণসচেতনতা সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান পিপিএম-বার।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, নো মাস্ক নো প্যাসেঞ্জার এ নীতিতে চালকরা যদি মাস্ক ছাড়া কোন যাত্রী পরিবহন না করে, তাহলে চালক-যাত্রী উভয়ই করোনা থেকে রক্ষা পাবেন।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা হল সমাজের দর্পণ। সমাজের যেকোনো সমস্যা, সবার আগে চোখে পরে সাংবাদিকদের। তাই আজ লাইসেন্সবিহীন সিএনজি ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদেরকে নিয়ে চাঁদপুরের সম্মানিত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে জেলা পুলিশ গণসচেতনতার আয়োজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের যে পরিচালনা পদ্ধতি রয়েছে, তা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন আসে। আমরা সমাজের বৈধ অবৈধ ভেদাভেদ রাখতে চাই না। কারণ যারা অবৈধ পন্থায় আছে তারাও বৈধ হতে চায়। তাদেরকে বৈধ পথে ফিরিয়ে আনতে পদ্ধতিগুলোকে আরও সহজ করতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বৈধ ও অবৈধ যানবাহন ও চালকদের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সমস্যার উত্তরণ করতে হবে। ২০০৫ সালে চাঁদপুরে সিএনজির লাইসেন্স ছিল ৫ হাজার। তা বর্তমানে হয়েছে ৬ হাজার ৭শ ১টি। এ প্রসঙ্গে পুলিশ বলেন, তবে গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঁদপুরে বৈধ লাইসেন্সের দ্বিগুন অবৈধ সিএনজি চলাচল করে থাকে। আমাদের এসবে আইন প্রয়োগ হলেও অবস্থার উন্নতি হয় কিন্তু এটি আবার ভঙ্গ করা হয়। তিনি বলেন গত ৮ মাসে করোনাকালিন আমরা কোন আইন প্রয়োগ করতে পারিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, চাঁদপুর জেলা পুলিশের কোন সদস্য দ্বারা কেউ জুলুম নির্যাতনের শিকার হলে, আপনারা আমাদেরকে অবহিত করবেন। আমরা জুলুমের প্রয়োগ চাই না। আমরা চাই শান্তি।
তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন সিএনজির মালিক ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভাররা আমাদের সমাজেরই অংশ। তারা প্রত্যেকেই চায় বৈধভাবে লাইসেন্স পেতে। তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্তিতে যে সকল সমস্যাগুলো রয়েছে, আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে এগুলো সহজ করার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, যে সকল ব্যবসায়ীরা সিএনজির লাইসেন্স করে দিবে বলে সাধারণ গ্রাহকের কাছে সিএনজি বিক্রি করে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সুপার জোর দিয়ে বলেন, সড়কে সিএনজিসহ যে কোন যান চলাচলে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। সে ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রগন এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বৈধ যাদের যান চলাচল করে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে সবার সাথে বসার চেষ্টা করার পরিকল্পনা করছি। এই আলোচনা সভায় বিআরটিএর কোন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ না জানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা বৈধ লাইসেন্সধারীকে নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু আমি ডেকেছি অবৈধ লাইসেন্সধারীদের। শুনতে চাই এবং সাংবাদিকরাও শুনলেন তাদের বিষয়গুলো। এখন আমরা আজ আলোচনায় যা পেলাম সেটি তাদের তা জানিয়ে দেবো। তিনি বলেন, আমার প্রচেষ্টা হচ্ছে, রাস্তায় কোন লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলবে না এবং কিভাবে এতো বিপুল পরিমান গাড়ি রাস্তায় ধারন ক্ষমতা বিবেচনা করে রাস্তায় চলে। তবে কোনভাবেই অতিরিক্ত বা লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি রাখা যাবে না। তাদের বৈধভাবে গাড়ি চালাতে হবে, চালকদের ভালো মানসিকতা নিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলোতে আপনাদের সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুর রহিম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মোঃ আসাদুজ্জামান-এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্ল্যাহ, সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, শরিফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আলম পলাশ, সময় টিভির ষ্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ।
উন্মুক্ত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন (২৫০৩) সভাপতি কাজী শাহরিয়ার হোসেন ওমর ফারুক, সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা কামাল হোসেন, সিএনজি মালিক ও চালক আলমগীর হোসেনসহ আরোও কয়েকজন মালিক শ্রমিক।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার, চাঁদপুর জেলা পুলিশের ডিআই-১ তোতা মিয়া, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন, জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় মালিক ও চালকরা বলেন, চাঁদপুর জেলায় স্থায়ী কোন স্ট্র্যান্ড নেই। যা অন্য জেলায় আছে। আর এ স্ট্র্যান্ড না থাকায় আমাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অবৈধ পন্থায় আমরা সিএনজি ক্রয় না করে, সিএনজি বিক্রয়ের ডিলারের কাছ থেকে ক্রয় করে থাকি। তবে আমরা লাইসেন্স করতে পারছি না কেনো। অবৈধ পন্থায় সিএনজি ক্রয় করলে আমাদের ১ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়। তাহলে সিএনজি ডিলারের কাছ থেকে ক্রয় করে কি লাভ। তারা সিএনজির লাইসেন্স করে দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে প্রতারণা করছে। যেসব সিএনজির লাইসেন্স আছে সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোরই ফিটনেস নেই। লক্কর ঝক্করভাবে সড়কে চলছে। এগুলো বাতিল করে নতুন লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সড়কে বিভিন্ন জায়গায় ড্রাইভারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মতলব সেতুতে চাঁদাবাজরা বিভিন্ন সময়ে সিএনজি ড্রাইভারদের সাথে ঝামেলা করে। আমরা এর প্রতিকারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি। সবশেষে লাইসেন্সবিহীন সিএনজির মালিক শ্রমিকরা সরকারের পক্ষ থেকে লাইসেন্সবিহীন সিএনজিগুলোর লাইসেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে জেলার সড়কের নৈরাজ্য, লাইসেন্সবিহীন হোন্ডার দাপট, বিভিন্ন সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং এসবের প্রতিকারের অনুরোধ জানান। পুলিশ সুপার অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্যগুলো শুনেন এবং এসব আরো ব্যাপক পরিসরে উপস্থাপন করবেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply