চাঁদপুরে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে ডিএনসি সহকারী পচিালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলমসহ ৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার চাঁদপুর আমলি আদালতে মামলাটি করেন কাপড় ব্যবসায়ী জহির মিজি। আদালত মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে দিয়ে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার বাখরপুর গ্রামের মো. জামাল গাজী, চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিদর্শক বাপন সেন, উপপরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান, মো. পিয়ার হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক মো. আশ্রাফ আলী ও সিপাহী মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর জহির মিজি বাড়ি থেকে বের হয়ে চান্দ্রা চৌরাস্তায় এলে তাকে ঘেরাও করে মারধর করেন আসামিরা। তার কাছে থাকা ব্যাগে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। এরপর পরিকল্পিতভাবে জহিরের কাছ থেকে ৪২০টি ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে দেখিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। পরে জহিরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান সাক্ষী মোক্তার আহম্মেদ জহিরকে ফাঁসানোর বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি অভিযোগ দেন। মহাপরিচালক চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আসামিদের জবানবন্দি ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির আখন্দ তদন্ত করে ২৪ জুন বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী জহির মিজি ঘটনার শিকার বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িত করানোর ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়।
মামলা বাদী জহির মিজি বলেন, আমার তথ্যের ভিত্তিতে এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আটক করেন। পরে ওই মাদক ব্যবসায়ী জেল থেকে বেরিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার যোগসাজসে ষড়যন্ত্র করে আমাকে মাদক দিয়ে ফাসিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে। পরে তার অফিসে আনার পর তিনি আমাকে প্রস্তাব দেন ৫ লাখ টাকা দিলে মাদক কম দেখানো হবে। টাকা না দেয়ায় আমার বাবা এবং ছোট ভাইকে গ্রেফতার করে। এক সপ্তাহ কারাগারে থাকার পর তিনি জেল থেকে জামিনে মুক্ত হন। সেই সাথে পরবর্তীতে ওই মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি টাকাটা আমাকে দিয়ে দিতি তাহলে তোর এতোবড় বিপদ হতো না।’
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোথাও এর আগে একটি মামলাও হয়নি। প্রয়োজনে আমার ডোপ টেস্ট করা হোক। তিনি আমাকে অযথা মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছেন। এ ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ল, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেই। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত হয়। ওই তদন্তে চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলমকে দায়ি করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসার পর আমি মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, অনিয়মের মাধ্যমে আমার পরিবারকে হয়রানি করেছে। আমাদেরকে জেল খাটিয়েছে। তিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে, তা আমি শুনেছি। তবে ইতিমধ্যে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। এ কারণে নতুন করে আরও একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম একজন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে হাত মিলিয়ে অন্যায়ভাবে জহির মিজিকে ফাসিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্তে জহির মিজি নির্দোশ প্রমাণিত হয়েছে। যার কারণে দিদারুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply