চাঁদপুরে মেঘনার দু’পাড়ে ভাঙন আতংক

আশিক বিন রহিম :
উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পনির সৃষ্ট স্রোতে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর দুই তীরে আবারো ভাঙনের ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তহ ধরে এই ভাঙনে ইতোমধ্যেই নদীর পশ্চিমে প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও পাশের আলুরবাজার ফেরিঘাট এলাকা। এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ছোট মাছের আড়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিআইডবিøউটিসির টার্মিনালের একাংশ। ভাঙন চলছে সদর উজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নেও।

পাশ্ববর্তি শরিয়তপুর জেলার তারাবুনিয়া চেয়ারমম্যান স্টেশনঘাটের বহু দোকানপার্ট নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সবশেষ ৭ জুলাই মঙ্গলবার চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকাতে বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এই এলাকার বসতবাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙনরোধে গেলো কয়েক দিন ধরেই সেখানে বালিভর্তি বস্তা ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।


সরেজমিনে পুরাণবাজার ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উজান থেকে নেমে আসা মেঘনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধি ও প্রচন্ড স্রোতের কারণে শহর রক্ষা বাঁধের হরিসভা এলাকার কয়েকটি স্থানে ফাঁটল ও বøক দেবে গেছে। বর্তমানে বাঁধের নদী তীরবর্তী দুইশ মিটার তীর এলাকা যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন।
তারাবুনিয়া চেয়ারমম্যান স্টেশনঘাট এলাকার মিনির জানান, সেমবার এক রাতের হঠাৎ ভাঙনে বহু দোকানপার্ট নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখানের অনেক ক্ষুদ্র দোকানি নিঃশ্ব হয়ে গেছে।
আলুরবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন গাজী বলেন, ‘এ নিয়ে প্রায় ১২ বার আমাগে নদী ভাঙছে। বারবার জায়গা বদলাইছি। অহন আবার ভাঙতাছে। কি করমু, বুঝতাছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে আছি।’
তিনি জানান, তার স্ত্রী, চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আগে নদীর পূর্ব পাড়ে ছিলেন। সেখানে কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এরপর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিলেও নদী তার সব কেড়ে নিয়েছে।
একই এলাকার ভাঙনের শিকার মো. সানাউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘বয়স অইছে বাবা। অনেকবার নদী ভাঙনের শিকার অইছি। অহন ভাঙতাছে। বউ, পোলাপাইন নিয়া কোথায় যামু? আমাগো তো জায়গা কিননের মতো পয়সা নাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান ব্যাপারী বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় মেঘনায় ভাঙনের শিকার কয়েকশ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
ইব্রাহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, ‘২০১৬ সালে আলুরবাজার ফেরিঘাটের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করার পর থেকেই দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এ ভাঙন চলছে। তবে বর্ষা এলে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। কয়েক দিনের ভাঙনে অনেক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙনে রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, বন্যার পানি নামছে। তাই স্রোত বেড়ে গেছে। এ কারণে শহর রক্ষা বাধে ঝুকি আছে।
তিনি বলেন, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন এবং পুরাণবাজার মেঘনার দুপাড়ে অবস্থিত। ইব্রাহীমপুর এলাকার ভাঙনরোধে কাজ করার জন্য ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জিও ব্যাগের সংকট রয়েছে। ঢাকা থেকে জিও ব্যাগ আনা হচ্ছে। আশাকরি, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে ইব্রাহীমপুরের ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে।
আর পুরাণবাজার অংশে জিওব্যাগ ফেলার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply