চাঁবিপ্রবির জমি অধিগ্রহণ মামলার রায় ২০ এপ্রিল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে করা পৃথক দুই রিটের রায় ২০ এপ্রিল। এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়ের এই দিন ধার্য করেন। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট এ তারিখটা চুড়ান্ত করেছেন বলে আমরাও জেনেছি।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য সাড়ে ৬২ একর জমি অধিগ্রহণে ১৮২টি দাগের জমির মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর বাজারদর যাচাই করে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন দেখতে পান ১৮২টির মধ্যে ১৩৯টি দলিলের মূল্য বাজারমূল্যের চেয়ে বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে। ওই ১৩৯টি দলিল বিবেচনায় নিলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। ১৩৯টি বাদ দিয়ে অন্য ৪৩টি দলিলের গড় মূল্য বিবেচনা করলে ব্যয়
দাঁড়ায় ১৯৩ কোটি টাকা। এ কারণে ১৩৯টি দলিল বিবেচনায় না নিয়ে জেলা প্রশাসক অন্যান্য দলিলের জমি বিবেচনায় নিয়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের (অধিগ্রহণ বডির) কাছে। এরপরই সরব হয়ে ওঠে স্বার্থান্বেষী মহল। মাত্র চার-পাঁচজনের একটি সিন্ডিকেট সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে প্রথমে প্রশাসনিকভাবে চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। স্বার্থান্বেষী মহলের মূল হোতা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাদেরই একজন মো. জুয়েল বাদী হয়ে পৃথক দুটি রিট করেন।
রিট আবেদনে অধিগ্রহণের জন্য ১৯৩ কোটি টাকা চেয়ে ডিসির দেওয়া চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং আইন অনুযায়ী নতুন করে অধিগ্রহণের জমির প্রাক্কলন নির্ধারণ করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ।
গত বুধবার সেলিম খানের করা রিটের শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘রিটের প্রথমিক শুনানি নিয়ে যে রুল জারি হয়েছে, সেই রুলটা সঠিক হয়নি। রুলটি অকার্যকর হয়ে গেছে। উনি বলছেন অধিগ্রহণের জন্য ১৯৩ কোটি টাকা চাওয়ার বিষয়টি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। এটা উনি চ্যালেঞ্জই করতে পারেন না। কারণ কত টাকা চাইব অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষের (রিক্যুয়ারিং বডির) কাছে সেটা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) ও অধিগ্রহণ বডির বিষয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা এখানে দেখাব উনারা কী করেছেন? ধরেন বাবা ৫ হাজার টাকায় জমি কিনে তার মেয়ের কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটা ১০ বার, ২০ বার, ৩০ বার বিক্রি করেছে। আর জমি নিজের মেয়ের কাছে বিক্রি করতে হবে কেন? অল্প সময়েই বা এত দাম বাড়ল কেন? সরকারের কাছ থেকে অবৈধ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খেলায় নেমে এটা প্রতারণার চর্চা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেলিম খান তার নিজের ছেলের নামে জমি কিনেছেন, মেয়ের নামে কিনেছেন, নিজের বউয়ের নামে কিনেছেন। এই ১৩৯টি দলিল হয়েছে এক বছরের মধ্যে। যে জায়গাটা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, সেই জায়গাতেই এই কেনাবেচা হচ্ছে, অন্য জায়গায় না। ফ্যাক্ট তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, দুটি রিট আবেদনকারীদের নাম দেখেন। এর মধ্যে একটির বাদী সেলিম খানের। এবার দেখাব যে সেলিম খান কীভাবে জমি কিনেছেন তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী ও নিজের নামে এবং কীভাবে দাম বাড়িয়েছে। তিনি আদালতকে বলেন, সেলিম খানের মেয়ে পিংকি আক্তার ২০২০ সালের ২ জুন জমি কিনলেন। তখন ওই মৌজার সরকারি রেট ছিল ১৩ হাজার ৮০২ টাকা। তখন কিনলেন ৯৮ হাজার ৫১০ টাকা প্রতি শতাংশ। এরপর ৮ জুন একই মৌজায় পিংকি আক্তারের নামেই কেনা হলো ২ লাখ টাকা করে শতাংশ। ৯ জুন কিনলেন আরেকটা। এবার শতাংশপ্রতি দাম দেখালেন ৩ লাখ টাকা। একদিনের ব্যবধানে শতাংশে এক লাখ বেড়ে গেল, জমির শ্রেণিও কিন্তু একই ছিল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply