টানা ১৮ দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে যা করলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক

মানুষ মানুষের জন্যে

: নিজস্ব প্রতিবেদক :
একটানা ১৮ দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কর্মহীন বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ এবং দুঃস্থ ও হতদরিদ্র প্রায় আড়াই হাজার মানুষের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে খাদ্য সহায়তা ৫ কেজি করে চাল তুলে দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে গত ৩ দিনে একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে একই জায়গা চাঁদপুর স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে বসিয়ে ৪ শ ৬৭টি জনকে ৫ কেজি চালের সাথে নগদ ৫ শ টাকা করে দিলেন তিনি। আর একটা হটলাইন ব্যবহার করে নিন্মবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত যারা নিজেদের এই অভাব অনটন বা কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না, তাদের মধ্যে ৯ শ ৫০ জনকে বাসা বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
এই উপহার বিতরনের ১৮ তম দিন সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, এবং দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারসহ ২ শ ৮৪ জনের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ও সমপরিমাণ চাল। এর গত দু’ দিনেও সংবাদকর্মীসেবী (হকার)সহ ১ শ ৮৩ জনকে টাকা ও চাল বিতরণ করেন। লম্বা লকডাউন এবং লকডাউন শেষে ঈদকে সামনে রেখে স্বয়ং একজন ডিসি দাঁড়িয়ে থেকে এমন উপহার বিতরণে এখানের কর্মহীন, অসহায় মানুষ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ দিয়েছে, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা সংবাদসেবী, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারী চালি অটো চালক, বাস, মাইক্রো চালক, বেদে, হিজড়া জনগোষ্ঠী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, দোকান কর্মচারী, নৌযান শ্রমিক কর্মচারি, জেলে, হোটেল রেষ্ট্রুরেন্ট কর্মচারীসহ কর্মহীন আরো শ্রেনিপেশার মানুষ এই কঠোর লকডাউনে ডিসির হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়েছে।
জানা গেছে, এবারের ১৪ দিনের লকডাউন ছিলো আগের একাধিক ঢিলেঢালা লকডাউনের চেয়ে অধিকতর কঠোর! রাস্তায় ছিলো সেনা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার। ছিলো ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের বিপুল সংখ্যক লোকজন। ছিলো কড়কড়ি বিধিনিষেধ। দোকানপাটসহ সবই ছিলো বন্ধ।
এই অবস্থায় দেখা গেলো, রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় কোন ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই কর্মহীন মানুষের পাশে নেই। এ পরিস্থিতি অবলোকন করে, এই মানুষদের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে তাদের মাধ্যমে নিয়ে এই সুশৃঙ্খল ত্রাণকার্যে নেমে পড়েন। প্রতিদিন বেলা ১২ থেকে ১ টার মধ্যে খাদ্য সহায়তা শুরু হয়। সম্পুর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ত্রান কার্য চলার শুরু থেকেই জেলা প্রশাসক ১২ টা পর্যন্ত কাজ সরে তার অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন। এর আগেই সবার হাতে আগে উপহারেরে স্লিপ পাওয়া মানুষগুলোকে সুসজ্জিত জেলা স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নের ছায়া শীতল সেডের ৩ ফুট দূরত্বে বসিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা। জেলা প্রশাসক এবং জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবীদ, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ডিসি সর্বোচ্চ ২/৩ মিনিট জনসচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়ে সবাইকে সহাস্যে বিদায় দেন।
জেলা প্রশাসকের গঠন করা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান ওমর ফারুক জানান, এ কাজটি সরাসরি তদারকিতে জেলা প্রশাসক নিজেই। আরো আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) ইমতিয়াজ আহমেদ। গত বছর থেকে ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক টিমটা গঠন করে দিয়ে গেছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। আমরা ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক বর্তমানে এই ত্রান কার্যে নিয়োজিত রয়েছি। আগে আরো স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন। অনেকে লকডাউনশেষে নিজের কাজে চলে গেছেন। এই লকডাউনে জেলা প্রশাসক প্রায় ২৫ টনের মতো চাল বিতরণ করেছেন। আর ঈদ উপলক্ষে চালের সাথে ৫ শ টাকাও দেয়া হয়েছে। ফারুক বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে একটা দল আছে যারা বাইকে গিয়ে বাড়ি বাড়ি এই খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসেন। আগের লকডাউনেও জেলা প্রশাসক টানা ১০ দিন একই জায়গায় কর্মহীন ও দুঃস্থ অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। হটলাইনের সহায়তা ছিলো। সহায়তা পাওয়া, সংবাদকর্মী সেবী মোঃ শেলিম বলেন, এই সময়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এমন সুন্দর একটা আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমরা এই প্রথম পাইলাম। আমরা অনেক খুশি।
অটোবাইক চালক হারুন বল্লেন, ভাই অনেকদিন গাড়ি আটকানো ছিলো। পোলাপাইন লইয়া কষ্টে আছিলাম। ডিসি সাব এই আয়েজ করনে আমরা কিছু খাওনের ব্যবস্থা করতে পারছি।
এ ব্যাপারে, জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় সরকার লকডাউন দিচ্ছে। আমরা বিধিনিষেধ থাকায় কড়াকড়ি করছি। মানুষজনকে ঘরে থাকার জন্য বলছি। কিন্তু কর্মহীন অসহায় দুস্থ মানুষেরা খাদ্যাভাবে থাকে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায় মানুষগুলোর জন্য চাল টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একটি মানুষও যেন খাদ্যে কষ্ট না পায়। গ্রামে, শহরে সকল উপজেলা ও পৌরসভা আমি জনপ্রতিনিধিদের নামে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ এই সময়ে বন্টন করে দিয়েছি আগেই । এই বন্টন যদি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়, তাহলে কর্মহীম অসহায় দুঃস্থ মানুষদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়। তিনি বলেন, আমি এটিকে আমার চরম একটা দায়িত্ব ও মানবিতার দিক বিবেচনা থেকে করি। তিনি বলেন, আমার এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আসছে কঠোর লকডাউনেও এটি চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা তার সরকারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিত্তবান বা কর্মহীন দুঃস্থ মানুষের নিকট ধনাঢ্য বা স্বচ্ছল প্রতিবেশি এগিয়ে আসেন, তাহলে সবাই একটু ভালো থাকতে পারেন। আমাদের সবার তা ই করা উচিত। আমি সবাইকে আহবান জানাই- করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ান।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার ছাড়াও তার নিজ সভা কক্ষে
জেলারবকর্মহীন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মি, স্থানীয় সংবাদপত্র প্রকাশনাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে লকডাউন এবং অতিমারিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply