দ্বন্দ্বের কারণে হাজীগঞ্জে করোনা উপসর্গে মৃত ব্যবসায়ীর দাহ হলো না শ্মশানে

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী রঞ্জিব কুমার রায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ পৌর শ্মশানে নেয়া হলেও সেখানে তার দাফনে কেউ এগিয়ে আসেনি কেউ। দীর্ঘ দুই ঘন্টারও বেশি সময় মরদেহ নিয়ে শ্মশানে অপেক্ষা করলেও দাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। অবশেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা দাহ করা হয়।

এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়।
হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য ও শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ণ জিউড় আখড়ার পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সম্পাদক তপন পাল জানান, হাজীগঞ্জ বাজারের স্বর্ণকার পট্টির বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী রায় কুটির শিল্পের সত্ত্বাধিকারী শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ণ জিউড় আখড়ার কার্যকরী কমিটির সদস্য রঞ্জিব কুমার রায় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে শ্বাসকষ্টে মারা যান। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ্য ছিলেন। সকালে তার মৃতদেহ দাহ করার জন্য হাজীগঞ্জ পৌর মহা শশ্মানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শশ্মান কমিটি মৃতদেহ দাফনে টালবাহানা শুরু করে ৩ ঘন্টা ধরে পরিবারের লোকজন শশ্মান কমিটির পায়ে ধরলেও শশ্মানে মৃতদেহ দাহ করতে দেয়নি কমিটির সভাপতি অপন সাহা।
তিনি আরো জানান, নিহত রঞ্জিব কুমারের ছোট ভাই শশ্মান কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহার কাছে মৃতদেহ দাহর জন্য অনুমতির জন্য গেলে তিনি শশ্মান কমিটির সভাপতি অপন সাহার কাছে যেতে বলেন।
অপন সাহার কাছে অনুমতি চাইলে তিনি জানান, আমি শশ্মান সংস্কারে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখানে সব মৃতদেহ দাহ করা হয় না। সকাল ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মৃতদেহ নিয়ে রঞ্জিবের পরিবার তাদের গ্রামের বাড়ী একই উপজেলার ৬নং বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামে নিয়ে দাহ করে।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ণ জিউড় আখড়ার সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন জানান, একটি মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে একটি পরিবার শশ্মানে বসে থাকলও অপন সাহা লাশ দাহ করতে দেয়নি বিষয়টি খুবই দূঃখজনক। পরবর্তীতে দাহ করা থেকে যেন কেউ বাদ না যায় কমিটি ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি জানান, আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া, পৌর মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম লিপন ও হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শশ্মান কমিটির সভাপতি অপন সাহাকে কয়েকবার ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় তবে
শশ্মান কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা মুঠোফোনে জানান, মৃতদেহ দাহ করার জন্য রঞ্জিব কুমার রায়ের ছোট ভাই আমার কাছে এসেছিল আমি বলেছি সভাপতির সাথে যোগাযোগ করার জন্য। তারা পরে আর কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে আসেনি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাজীগঞ্জ পৌর মহাশ্মশানের সভাপতি অর্পন সাহা। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে আমাদের একটি মিটিং হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে কোন মরদেহ শ্মাশানে আসলে ৪ ঘন্টা পর দাহ করা হবে। কারণ, কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে আবার কেউ উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। এ বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ লুকিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় সবার জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই ৪ ঘন্টা পর মরদেহের সৎকার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, রঞ্জিব কুমার হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যাওয়ার পর তাকে সরাসরি শ্মাশানে নিয়ে আসা হয়। তার স্বজনরাই তাকে দাহ করার কথা বললে সেখানের ঠাকুর তাদেরকে বলেছেন, অপেক্ষা করতে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। পরবর্তীতে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তারা আমার কাছে আসে। আমি তাদেরকে বললাম, আপনারা অপেক্ষা করুন। দাহ হবে। কিন্তু তারা অপেক্ষা না করেই মরদেহ সিএনজিযোগে নিয়ে যায়।
পৌর শ্মশার কমিটির অর্থ সম্পাদক বাবুল সাহা বলেন, সেন্দ্রায় মারা যাওয়া একজনের মরদেহ দাহ করার জন্য শ্মাশানে আনা হচ্ছে। বিকেলের মধ্যেই তার দাহ করা হবে।
এ বিষয়ে অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার- হাজীগঞ্জ সার্কেল আফজাল হোসেন বলেন, রঞ্জিব রায় নামের একজন মারা গেছেন। হাজীগঞ্জ পৌর শ্মশানে দাহ না করার খবর পেয়েছি। তবে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গ্রামের বাড়িতেই দাহ করেছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply