নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তর

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তারই অংশ হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যশা করা হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থার এই রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতের স্মাট শিক্ষার্থীর বুনিয়াদ রচিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম প্রণনয়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধারাকে বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রূপরেখা প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে বিস্তারিত শিক্ষাক্রম, শিখন শেখানো সামগ্রী এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে যা এর আগে কখনোই অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পূর্বে ২০১৭-২০১৮ সালে এনসিটিব কর্তৃক ০৬টি গবেষণা পরিচালিত হয়। যার ভিত্তিতে এই রূপরেখা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বা¯তবতা অনেকটাই পালটে যাচ্ছে। শ্রমনির্ভর যে অর্থনীতির মডেল সামনে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভবিষ্যতে নতুন অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে যার কারণে বর্তমান সময়ের অনেক পেশা ও শ্রম অচিরেই প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিক হল এদেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, যার জনমিতিক সুফল পেতে হলে অনতিবিলম্বে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন ছিল। Brookings Report (2016) on Skills for a Changing World এ দেখা যায় ১০২টি দেশের মধ্যে ৭৬ টি দেশের শিক্ষাক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতাকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ৫১টি দেশের শিক্ষাক্রম স¤পূর্ণরুপে রুপাšতরমুলক দক্ষতাভিত্তিক করা হয়েছে। OECD (২০১৮) ভুক্ত দেশগুলোও এই পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একটা সাধারণ শিক্ষাক্রম রূপরেখা তৈরি করেছে, বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশও যার অংশীদার। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায়, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশও তাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশও একইভাবে শিক্ষাব্যাবস্থায় একটি সার্বিক পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করছিল যা একই সাথে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য, শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশ, শিখন উপকরণ, শিক্ষা ব্যাবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকার জনগনসহ সকল উপাদানের মাঝে আšতঃস¤পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একই পরিবর্তনের ধারায় নিয়ে আসবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ সেই দীর্ঘ তাগিদ, পরিকল্পনা, গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ফসল। কাজেই নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উলে-খযোগ্য মাইলফলক।
কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপু¯তক নিয়ে মিথ্যাচারে হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে এরা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার লক্ষে বই নিয়ে মিথ্যাচার করেছিলো। এরা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিšতা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিšতার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক।
তাই নিচের অপপ্রচারগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুনঃ
প্রশ্ন ১: ‘হঠাৎ করে কোনো গবেষণা ছাড়াই বিদেশি শিক্ষাক্রম অনুসারে আমাদের দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে; এটি প্রণয়নের পূর্বে নীতিনির্ধারকেরা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেননি’- এই অভিযোগ কতটা সত্যি?
উত্তর: নতুন শিক্ষাক্রম হঠাৎ করে চালু হয়েছে এই ধারণাটি সঠিক নয়। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন একটি ধারাবাহিক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়। এবারের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনার পূর্বে ২০১৭ সাল থেকে শরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬টি সরেজমিন গবেষণা পরিচালনা করা হয়। উক্ত গবেষণাগুলোতে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট, শিক্ষার্থীদের চাহিদা, পুরাতন শিক্ষাক্রমের কার্যকারিতা যাচাই, অন্যান্য প্রায় ১০২টি দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা, চতুর্থ শিল্পবিপ-বের সাথে অভিযোজনের উপায় ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্নসভা ও কর্মশালার মাধ্যমে প্রায় ১৫০ এর অধিক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ/ব্যক্তিবর্গের মতামত এবং সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাধারার মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ ৮০০ এর অধিক অংশীজনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। দেশের ৫টি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনসিটিবি’র ওয়েব সাইটে উক্ত খসড়ার উপর মতামত সংগ্রহের জন্য জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করা হয় এবং তাদের মতামত পর্যালোচনার ভিত্তিতে খসড়া পরিমার্জন করা হয়। জাতীয় সংসদের শিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সম্মানীত সদস্যদের নিকট খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করে তাদের মতামত গ্রহণ করা হয়। অতঃপর খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি দেশের শিক্ষাক্রম উন্নয়নের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার জন্য তাঁর নিকট উপস্থাপন করা হয়। সেই আলোকে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ চূড়ান্ত করা হয়। এরপর শিক্ষা বিষয়ক সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির যৌথ সভায় এই রূপরেখা অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর আলোকেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ উন্নয়ন ও অনুমোদন করা হয়। এই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন সামগ্রী (পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক সহায়িকা ও অন্যান্য উপকরণ) প্রস্তুত করা হয়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ দেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরির (যেমন সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক বছর ধরে পাইলটিং করা হয়। পাইলটিং এ প্রাপ্ত সুপারিশ অনুযায়ী পরিমার্জন করে সারাদেশে ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রবর্তন করা হয়। প্রাক-প্রথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যšত ধাপে ধাপে এই শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা হবে। সুতরাং, হঠাৎ করেই নতুন শিক্ষাক্রমটি প্রবর্তন করে হয়েছে অভিযোগটি সঠিক নয়।
প্রশ্ন ২: ঘন ঘন শিক্ষাক্রম বদলানোর কী দরকার?
উত্তর: সময়ের সাথে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দীর্ঘ সময় শিক্ষাক্রম যদি পরিবর্তন না হয়, তবে সেটিই একটি অস্বাভাবিক বিষয়। কারণ, শিক্ষাক্রম যুগের চাহিদা মেটাতে না পারলে শিক্ষার্থীরাও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না। উন্নত দেশসমূহে প্রতি ৫ বছর পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়। আমাদের দেশে এবারের শিক্ষাক্রমটি পরিবর্তন প্রায় ১০ বছর পর করা হলো, যা যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে।
প্রশ্ন ৩: শিল্পবিল্পবের এই যুগে অন্যান্য দেশ শিক্ষার্থীদের যখন রোবট বানানো শেখাচ্ছে, সেখানে নতুন শিক্ষাক্রমে কাগজ কাটাকাটি, গৃহস্থালির কাজ, রান্নাবান্না ইত্যাদি কাজ শিখিয়ে বাবুর্চি আর মিস্ত্রি বানানো হচ্ছে কেন? এসব গৃহস্থালির কাজ মানুষ স্বভাবজাতভাবে পরিবারেই শিখতে পারে, ঘরের কাজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?
উত্তর: নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি থেকেই গণিত, বিজ্ঞান ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে কোডিং, প্রোগ্রামিং এবং রোবট বানানোর কাজ শেখানো হচ্ছে। জীবন ও জীবিকা বিষয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পেশায় শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
পৃথিবীর সকল দেশেই ব্যক্তিগত পরিচর্যা, গৃহস্থালির কাজ, রান্নাবান্না ইত্যাদি সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখানো হয়। রান্নার মাধ্যমে গণিতের অনুপাত ও পরিমাপ, বিজ্ঞানের রাসায়নিক বিক্রিয়া, স্বাস্থ্য-সুরক্ষার পুষ্টির ধারণা এবং দলগত আয়োজনের মধ্য দিয়ে সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ ও দায়িত্ব বন্টনের দক্ষতাগুলো অর্জিত হয়। আমাদের দেশেও “গার্হস্থ্য বিজ্ঞান” বিষয়টিতে রান্না প্রচলিত ছিল, যা দৃষ্টিভঙ্গিজনিত কারণে শুধুমাত্র মেয়েরাই ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নির্বাচন করত, কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই বিষয়গুলো প্রতিটিই অপরিহার্য, এগুলো হলো জীবন দক্ষতা। সুতরাং নতুন করে এগুলো আনা হয়নি, বরং অনেক বাছাই করে জীবনধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে ছেলে-মেয়ে নির্বিশষে সকল শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪: নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের ডিভাইসমুখী করে তুলছে বলে অভিভাবকগণ মনে করছেন, বিষয়টি সত্যি কিনা?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের ডিভাইস নির্ভরতা বেড়েছে কোভিডের সময়ে, যা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পূর্বের একটি বাস্তবতা। এর আরেকটি দিক হলো যুগের চাহিদা, প্রযুক্তির প্রসার ও ব্যবহার আজ অপরিহার্য যা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এর যেমন ইতিবাচক দিক আছে, আবার নেতিবাচক দিকও আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি অভিজ্ঞতানির্ভর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি চারপাশের পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিখবে, ফলে এটি ডিভাইস নির্ভরতা কমাবে। বরং ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নৈতিক বিষয় ও ঝুঁকিসমূহ জেনে ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করার মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারবে। উল্লেখ্য যে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহকে বাধ্যতামূলক করা হয় নাই। বিভিন্ন মাধ্যম যেমন, পাঠ্যপুস্তক, অন্যান্য পুস্ত ক, পত্রপত্রিকা, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তির নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। শিক্ষার্থী এগুলোর এক বা একাধিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
প্রশ্ন ৫: ব্যাপক পরিবর্তন আনা এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য শিক্ষক ও অবকাঠামো আছে কিনা?
উত্তর: নতুন এই শিক্ষাক্রম অনেক নমনীয়, তাই বিদ্যমান অবকাঠামোতে এর বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। বাস্তবায়নের জন্য পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছার আগেই সারা দেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনলাইন এবং সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং বিদ্যালয়ে অবস্থানকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অনলাইন মেন্টরিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। দ্বিতীয় পর্যায়েও সারাদেশে সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তোলার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। হাতেকলমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চায় পরিবর্তন আসবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কার্যক্রম গত একদশক ধরে ব্যাপকহারে চলছে। বিষয় ও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের প্রস্তুতি চলছে।
প্রশ্ন ৬: পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার ফলে উপরের শ্রেণিতে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসমূহে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি তৈরি হবে, এই অভিযোগ সত্যি কিনা?
উত্তর: পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়নি, বরং প্রতিদিন শিক্ষার্থী যা শিখছে, তার মূল্যায়ন হচ্ছে। ফলে তার মধ্যে পরীক্ষা ভীতি দূর হয়ে মূল্যায়নও যে শিখনের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সেই ধারণা তৈরি হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়া পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীর মুখস্থ নির্ভর পরীক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীর প্রবণতা, ভাষাদক্ষতা, পূর্বের পারদর্শীতার রেকর্ড প্রভৃতির ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হবে। ফলে ২০২৭ সালের পর নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নতুন পদ্ধতিতেই উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে।
প্রশ্ন ৭: শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে বিভিন্ন মডেল, উপস্থাপন, প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন করা হয়েছে, যা অভিভাবকদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা সহজেই কোনো সৃজনশীলতা ছাড়াই গুগল কিংবা নিজেদের তৈরি করা গ্রুপ থেকে অনুকরণ বা কপি করে সম্পন্ন করতে পারছে, ফলে নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশে আদৌ কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে কিনা?
উত্তর: অভিভাবক সচেতন না হলে তার সন্তানের ক্ষতি হবে- এই বিষয়টি অভিভাবকদের ভালোভাবে বুঝতে হবে । এখানে পাশ ফেলের বিষয় নেই বরং যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপার রয়েছে। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে শিক্ষার্থী যে কাজগুলো নিজে তৈরি করার কথা, যেমন মডেল, উপস্থাপন দক্ষতা, প্রজেক্ট, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি, সেকাজগুলো যদি অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের জন্য সম্পন্ন করে দেয়, তাহলে তার সন্তান উক্ত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং আগামী পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে। শিক্ষকদেরও শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুসারে কপি করা অ্যাসাইনমেন্ট, প্রতিবেদন বা যেকোনো কাজ গ্রহণ না করার নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। কিছু সময় পার করলে অভিভাবকগণ যখন এই শিক্ষাক্রমের ভালো দিকগুলো অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, তখন শিক্ষার্থীদের শিখন নিশ্চিত করতে তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে শুরু করবেন। পাশাপাশি মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। একইসাথে, শিখন অভিজ্ঞতাগুলো শিক্ষার্থীর নিজস্ব পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে করে অনলাইন কন্টেন্ট নির্মাতাদের সারাদেশের জন্য একই ধরনের সমাধান বের করার সুযোগ না থাকে। শিক্ষার্থীরা তাদের উপর অর্পিত কাজগুলো নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সম্পন্ন করবে তাই এই কাজগুলো তাদের সৃজনশীলতা বিকাশে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
প্রশ্ন ৮: নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো পড়াশুনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না’- অভিভাকদের এই উপলব্ধি সত্যি কিনা?
উত্তর: আগে না বুঝেই শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করে লিখে প্রকাশ করতো, এটাই ছিল পড়াশুনার ধারণা। শিক্ষার্থীরা যেহেতু এখন শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় হয়ে বুঝে পড়বে, ফলে তা অনেক বেশি মনে থাকবে এবং জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে। দলগত কাজ করে আবার তা নিজেরাই উপস্থাপন করবে। শুধু জ্ঞান নয়, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ও দক্ষতাও অর্জন করবে। আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। এছাড়া, ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই মূল্যায়ন বা পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। মূল্যায়নের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়ার বিষয়টিও আছে; শুধু তাই নয়, পারদর্শিতার ৭টি স্কেলে তাদের রিপোর্ট কার্ডও দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
প্রশ্ন ৯: নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের বিষয়ব¯তুকমিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৪০০ নম্বর থেকে কমিয়ে ১০০ নম্বর করা হয়েছে- এটি সত্য কিনা?
উত্তর: নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ নেই। এখানে রয়েছে পারদর্শিতার পর্যায়। কাজেই এই বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত সকল শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সময় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়ের আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। একারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও গণিত বিষয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার অনেক বিষয়বস্তু সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে সার্বিক দিক দিয়ে আগের চেয়ে বিজ্ঞানের গুরুত্ব বেড়েছে, বিষয়বস্তুর পরিধিও বেড়েছে। বিজ্ঞান পাঠ যুক্তিনির্ভর যা যৌক্তিক চিন্তাভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। আর যেহেতু এবারে অভিজ্ঞতানির্ভর শিখনকে উৎসাহিত করা হয়েছে, তাই সব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সে সব বিষয়ে একজন যৌক্তিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ হয়ে উঠবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে আগে প্রায় ২০% শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তো, এখন সকল শিক্ষার্থী বিজ্ঞান পড়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্ক, অনুসন্ধিৎসু, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করবে। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটবে।
প্রশ্ন ১০: ব্যাবহারিক কাজের জন্য প্রচুর উপকরণ প্রয়োজন হওয়ায়, নতুন শিক্ষাক্রমে অভিভাবকদের শিক্ষা ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কিনা?
উত্তর: ব্যাবহারিক কাজের জন্য দামি উপকরণ, চাকচিক্য বা সৌর্ন্দয এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং স্থানীয়, সহজলভ্য ও পুনঃব্যবহারযোগ্য কাগজ ও উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা বার বার দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন নিয়মিত কার্যক্রমনির্ভর হওয়ায় নোট বই কিংবা কোচিংয়ের খরচ কমে যাবে। এসব কাজের ক্ষেত্রে যে ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হচ্ছে ,তার অধিকাংশই বিনামূল্যের অথবা স্বল্পমূল্যের। এছাড়াও উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুনঃব্যবহারকে (রিসাইকেল) উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- রঙ্গিন পোস্টারের পরিবর্তে বাড়িতে থাকা পুরোনো ক্যালেন্ডারের পাতা, সাধারণ কাগজ জোড়া দিয়ে বানানো শিট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া, অনেক উপকরণ বিনামূল্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকেই পাওয়া সম্ভব। তাই অভিভাবকদের খরচ বেড়ে গেছে –এই অভিযোগটি মোটেও সঠিক নয়।
প্রশ্ন ১১: গ্রামের স্কুল উপকরণ পাবে না বা দরিদ্র জনগোষ্ঠির উপকরণ কেনার সামর্থ্য নেই ফলে বৈষম্য বাড়ছে, এটা কতখানি যৌক্তিক?
উত্তর: তৃণমূল পর্যায়ে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেই উপকরণ, শিখন-শেখানো পদ্ধতি ইত্যাদি নির্বাচন করা হয়েছে এবং প্রতি ক্ষেত্রেই বিকল্প উপায় রাখা হয়েছে, ফলে বৈষম্য তো নয়ই বরং গ্রামের বিদ্যালয়গুলো ভালো করছে। তাছাড়া কোচিং, গাইড বইয়ের ব্যয় লাগছে না বলে বৈষম্য কমছে এবং গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে।
প্রশ্ন ১২: ক্লাসে শিক্ষককে কিছুই পড়াতে হয় না, বাড়িতে দলগত কাজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং বিদ্যালয়/শিক্ষকগণ বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসতে বলছেন, এই বিষয়গুলো কেন উঠে আসছে?
উত্তর: অভিজ্ঞতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখবে এবং শিক্ষক তাদেরকে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব, তথ্য এবং ক্লু দিয়ে কাজগুলো এগিয়ে নিতে সহায়তা করবেন- এভাবেই পাঠ্যবইগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে । শিক্ষকদের কাজগুলো পরিচালনার সুবিধার্থে শিক্ষক সহায়িকা প্রণয়ন করে সকল বিষয়ের শিক্ষকদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে। সেখানে সকল দলগত কাজ বিদ্যালয়ে করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। বাড়িতে কোনো দলগত কাজ দেওয়ার কথা নয়। বাড়ি থেকে রান্না করা কোনো খাবার আনার নির্দেশনা কোথাও নেই। জীবন দক্ষতার অংশ হিসেবে শুধুমাত্র একটি অভিজ্ঞতায় নির্দিষ্ট একটি ক্লাসে রান্নার কাজ আছে, যা শিক্ষার্থীরা অন্য একটি যোগ্যতা ‘সঞ্চয় করতে পারা’ এর মাধ্যমে সঞ্চিত টাকা থেকেই সামগ্রী কিনে নিজেরা রান্না করবে । সুতরাং বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্রমের নয়, বরং কতিপয় শিক্ষকের ভুল নির্দেশনা।
প্রশ্ন ১৩: শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণ পড়ানো হয় না, লেখালেখির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ফলে বানান, ব্যাকরণ ইত্যাদি শিখছে না- এই ধরণের অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?
উত্তর: যেকোনো সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের এখন বেশি লিখতে হচ্ছে, কারণ প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতায় তাদের বিভিন্নভাবে প্রায়োগিক লেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীকে কোনো পাঠ্যপুস্তক বা নোট গাইড থেকে নয়, বরং নিজে থেকেই নিজের ভাষায় লেখতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীকে এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের প্রয়োজনে বানান ও ব্যাকরণ শিখতে হচ্ছে। মূল টেক্সটের সাথে সাথে ব্যাকরণের অংশটুকূও পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে। ব্যাকরণকে প্রয়োগমুখী করার ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাকরণ শেখাও সহজ হয়েছে।
প্রশ্ন ১৪: শিক্ষাক্রম চালুর পূর্বে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিনা ? তাদের প্রশিক্ষণ মানসম্মত বা পর্যাপ্ত হয়েছে কিনা?
উত্তর : নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পূর্বেই শিক্ষকগণকে অনলাইন এবং মূখোমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ভিডিও টিউটোরিয়াল, বিষয়ভিত্তিক অনলাইন টিউটোরিয়াল, লিখিত নির্দেশনা, শিক্ষক সহায়িকা, মূল্যায়ন সংক্রান্ত অনলাইন টিউটোরিয়াল, বছরব্যাপী বিষয়ভিত্তিক অনলাইন মেন্টরিং গ্রুপ পরিচালনার মাধ্যমে সকল শিক্ষককে বছরব্যাপী ব্যপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। তদুপরি এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে চলছে।
প্রশ্ন ১৫ : এতো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্লাসে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠপরিচালনা করা সম্ভব কিনা?
উত্তর: ব্যানবেইজের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ৪০ এর কাছাকাছি। কাজেই অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর সমস্যাটি খুব বেশি নয়। শহরের কিছু তথাকথিত নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষের ধারণ ক্ষমতার বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে, যা কাম্য নয়। এটি নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো সমস্যা নয়, বরং বিশ্বের যেকোনো শিক্ষাক্রমের জন্য এটি একটি সমস্যা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৫৫ এর বেশি না হয়, সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তা মনিটরিং করা হচ্ছে।
প্রশ্ন ১৬: শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এবং অভিভাবকের পক্ষে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষকের মূল্যায়নসংক্রাšত কাজ বেড়ে গেছে- এসব অভিযোগ সঠিক কিনা?
উত্তর: পূর্বে শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার (পেপার-পেন্সিল) মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হতো। সেই মূল্যায়ন বছরে দুই বার করা হতো এবং সেই দুইবারের লিখিত ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মূল্যায়ন নম্বর বা গ্রেডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীর প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সেই মূল্যায়নে শিক্ষক ছাড়াও সহপাঠী ও অভিভাবক অংশ নিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এই মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর অগোচরে সংঘটিত হয়ে চলেছে। ফলে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন বা পরীক্ষাভীতি যেমন কমছে, তেমনি অযাচিত প্রতিযোগিতাও কমে আসছে। শিক্ষার্থীকে নম্বর বা গ্রেড দেওয়ার পরিবর্তে সে কতটুকু পারদর্শিতা অর্জন করেছে, তার বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। এটি থেকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক তার অবস্থান বা পর্যায় বুঝতে পারবেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীর অবস্থান বা পর্যায় বিবেচনা করে শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর পরবর্তী উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন। তাই আপাতভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি দৃষ্টিগোচর না হলেও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথভাবেই চলমান রয়েছে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সহজ ও সাবলীল করার জন্য মূল্যায়ন অ্যাপ ‘নৈপুণ্য’ চালু করা হয়েছে। ‘নৈপুণ্য’তে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন ও অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর সারাবছরের মূল্যায়ন রেকর্ড ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনদ তৈরি হবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। ফলে শিক্ষকের কাজের পরিমাণ অনেক কমে আসবে এবং ধীরে ধীরে সবাই প্রক্রিয়াটি বুঝতে সক্ষম হবেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে একইসাথে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন ১৭: বিদেশি কারিকুলাম জোড়াতালি দিয়ে বানানো হয়েছে- অভিযোগটি সত্য কিনা?
উত্তর: ব্রিটিশ কলোনিয়াল শিক্ষা ব্যবস্থা শুরুর পূর্বে এই জনপদের শিক্ষা মডেল ছিল এলাকাভিত্তিক, যা টোল, মক্তব, পাঠশালা নামে পরিচিত। এই মডেল সৃজনশীল গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী তৈরি থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানকারী সৃজনশীল মানুষ ও উদ্যোক্তা তৈরি করেছিল, যার ফলে বাংলা হয়েছিল পৃথিবীতে সমৃদ্ধ। এই শিক্ষাক্রম অতীত বাংলার শিক্ষা মডেলের সেই সবল দিকগুলোর সাথে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সাথে খাপ খাওয়ানোর বিষয়বস্তুগুলোর মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি দেশীয় সময়োপোযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে, যা এই দেশের ঐতিহ্য ও স্বপ্নকে একই সাথে ধারন করেছে। সুতরাং এই শিক্ষাক্রম অন্য কোনো দেশের শিক্ষাক্রমকে অনুকরণ করে প্রণয়ন করা হয় নাই। এটা আমাদের বাংলাদেশের নিজস্ব শিক্ষাক্রম।
প্রশ্ন ১৮: দুর্বল শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য কোনো ব্যবস্থা নতুন শিক্ষাক্রমে রাখা হয়েছে কিনা?
উত্তর: এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের দূর্বল ভাবে না, কারণ একদল মানুষের মধ্যে সবাই শিখনের একই পর্যায়ে থাকে না। এটাই স্বাভাবিক। কাজেই শিক্ষার্থীদের সকলকে কাছাকাছি পর্যায়ে আনার উপায় হলো তাদেরকে সহপাঠি-শিখনের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক শিখন পরিবেশে শেখার সুযোগ করে দেয়া। কাজেই এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা অবিরাম একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের শিখন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাবে। একইভাবে শিখনকালীন মূল্যায়ন পরিচালনা করার কারণে শিক্ষকও সহজেই কোন শিক্ষার্থীর কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
প্রশ্ন ১৯: বিজ্ঞান শিক্ষার এপারেটাস নাই- এক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রভাব পড়ছে কিনা?
উত্তর : এই কারিকুলাম বিজ্ঞান শিক্ষাকে ল্যাবরেটরির মধ্যে কেন্দ্রিভূত না রেখে বরং বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে বাস্ত ব ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলছে। উদাহরণস্বরপ বলা যায়, প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘর যে একটি ল্যাবরেটরি হতে পারে এবং চারপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক সকল উপাদান যে বিজ্ঞানের শিখন উপকরণ হতে পারে, সেই ধারণা চর্চার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসু করে তোলা। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের অভিজ্ঞতা সরাসরি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে বিজ্ঞান শিখতে পারবে। তাই স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষায় এপারেটাসের চাইতে বেশি জরুরি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক, অনুসন্ধিৎসু ও নতুন জ্ঞান আহরণে আগ্রহী করে তোলা।
প্রশ্ন ২০: ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা?
উত্তর: এই শিক্ষাক্রমে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে শিখন কার্যক্রম পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে সকল ডিজিটাল ডিভাইস এবং সংযোগ রয়েছে সেগুলোকে হাইটেক, যেখানে ডিভাইস ও সংযোগ সীমিত রয়েছে সেগুলো লো-টেক এবং যেখানে কোনো সুবিধা নেই সেগুলোকে নো-টেক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে শিখন অভিজ্ঞতা সাজানো হয়েছে। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ডিভাইস ও সংযোগ না থাকলেও সেগুলোর ধারণা ও ব্যবহার সম্পর্কে সিমুলেশনের মাধ্যমে জেনে শিখন যোগ্যতা অর্জন করবে। এর ফলে শহর বা গ্রামে ডিভাইস অপ্রাপ্তির কারণে শিখন কোনো ভাবেই বাধাগ্রস্থ হবে না।
প্রশ্ন ২১: ইংরেজি মাধ্যমের পড়ালেখা অনেক বেশি, নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো পড়ালেখাই নাই- এই অভিযোগটি সত্যি কিনা?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী ইংরেজী মাধ্যমে যে শিক্ষাক্রম চলমান রয়েছে (যেমন ক্যামব্রিজ, নর্থ অ্যামেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান ইত্যাদি) তা তাদের নিজেদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত শিক্ষাক্রম থেকে ভিন্ন। নিজেদের দেশের শিক্ষাক্রম অনেক বেশি শিক্ষার্থী নির্ভর, অভিজ্ঞতাভিত্তিক এবং সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরির উপাদানে ভরপুর, যার ফলে এই দেশগুলো শিক্ষা প্রসার, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশও এই বিদেশী শিক্ষাক্রম দ্বারা পরিচালিত ভোক্তা তৈরির পরিবর্তে সৃজনশীল নাগরিক তৈরি নিশ্চিত করার জন্যই নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করেছে। কাজেই ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষাক্রমে বেশি পড়ালেখা থাকলেই যে তা সৃজনশীল মানুষ তৈরি করবে, তা সঠিক নয়।
প্রশ্ন ২২: গণিত বইয়ে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ নেই- এটি কতখানি সত্য?
উত্তর: গণিত বইটির সকল অভিজ্ঞতাই অনুশীলন নির্ভর, এর উপস্থাপন একটু ভিন্নভাবে করা হয়েছে। গণিতের বাস্তব প্রয়োগকে বিবেচনায় রেখে ব্যাখ্যামূলকভাবে এটি সাজানো হয়েছে। অভিজ্ঞতা চলাকালে বিভিন্ন কার্যক্রমের (একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলগত কাজ) মধ্য দিয়ে গণিতের তত্ত্ব ও সূত্র প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে পুরাতন বইয়ের মতো অনুশীলনীতে প্রচুর গাণিতিক সমস্যা রাখা হয়নি। বরং গাণিতিক সমস্যা সমাধানে বিশেষ দক্ষতা অর্জনের জন্য গণিতে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিককে গুরুত্ব দিয়ে অনেক বিশ্লেষণাত্মক উদাহরণ ও কাজ সংযুক্ত করা হয়েছে; যা শিক্ষার্থীদের গণিত ভীতি কমাতে সাহায্য করবে এবং একইসাথে নিজে নিজে বুঝে তত্ত্ব ও সূত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে সহায়তা করবে। ফলে গণিত মুখস্থ নয়, শিক্ষার্থী সত্যিকার অর্থে বুঝে গাণিতিক সমস্যা নিজেরাই তৈরি করতে এবং তার প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধান করতে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন ২৩: এই শিক্ষাক্রম মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত নয়, এটি তাদের মেধা বিকাশে সহায়ক নয়- অভিভাবকদের এই অভিযোগ সঠিক কিনা?
উত্তর: মেধার বিকাশ ঘটে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে শিখছে। তাই প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার চর্চার মাধ্যমে তাদের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এই সৃজনশীল শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করবে। পূর্বের শিক্ষাক্রম যেহেতু অনেক বেশি মুখস্থনির্ভর ছিল, তাই শিক্ষার্থীরা শুধু চাকুরী প্রত্যাশী হয়ে তৈরি হয়েছে। যারা ব্যাতিক্রম তারা নিজ উদ্যোগে সৃজনশীল বা উদ্যোক্তা হয়েছে।
প্রশ্ন ২৪। নিয়োগ পরীক্ষার জন্য গ্রেড না থাকায় নির্বাচন কীভাবে করবে?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সনদের পরিবর্তে প্রার্থীরা কী পারে, তার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে যেসব ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সের কাজ করছে, তারা কেউ সনদ দেখিয়ে কাজ পায় নাই, বরং তাদের পারদর্শিতা দেখিয়েই কাজ পেয়েছে। বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো (যেমন, গুগল, অ্যাপল ইত্যাদি) সনদ দেখে চাকুরী দেয় না, বরং পারদর্শিতা দেখে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশেও চাকুরীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সনদ দেখার পরিবর্তে পারদর্শিতাকে বেশি মূল্যায়ন করছে (যেমন, নগদ চাকুরীতে নিয়োগে পারদর্শিতা দেখার ঘোষণা দিয়েছে)। সরকারি চাকুরীর বিধিমালাতেও এই পরিবর্তন খুব শীঘ্রই আসতে যাচ্ছে। তদুপরি, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়নে যে সনদ প্রদান করা হচ্ছে তাতে সাত মাত্রার একটি পারদর্শিতার সূচক নির্দেশক একটি স্কেল রয়েছে যা শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা দিবে।
প্রশ্ন ২৫। বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে সার্টিফিকেটের সমমান কীভাবে নিশ্চিত হবে?
উত্তর: বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে সবসময় নিজ দেশের পড়ালেখার সমমান সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হয়। এটি পূর্বেও ছিল, এখনো আছে। যখন বাংলাদেশে প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণিতে ফলাফল দেয়া হতো বা জিপিএ ভিত্তিক ফলাফল দেয়া হতো, তখনও বিদেশে পড়তে গেলে সমমান নির্ধারণ করতে হতো। একইভাবে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে পড়াশুনা করে আসলেও তাকে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে ফিরে এসে সমমান সার্টিফিকেট নিতে হয়। তাই এটি নতুন শিক্ষাক্রম থেকে উদ্ভুত নতুন কোনো সমস্যা নয়। এটি একটি স্বাভাবিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীরা যে সনদ পাবে, তাতে বিদেশে পড়াশোনা করতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন ২৬। ব্রিটেনের কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে বিষয় বাছাইয়ের সুযোগ আছে, কিন্তু বাংলা মাধ্যমে তা রাখা হয়নি কেন? বিজ্ঞান শিক্ষাকে খাটো করতেই কী বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়া হয়েছে?
উত্তর: প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্রম এবং ইংল্যান্ডের জাতীয় শিক্ষাক্রম এক নয়। এবং, ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের শিক্ষাক্রমেই নবম (ক্ষেত্রবিশেষে দশম) শ্রেণি পর্যšত বিষয় নির্বাচনের সুযোগ থাকে না। দশম বা একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে সাধারণত বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়।
২৭। ধর্ম শিক্ষায় লিখিত পরীক্ষা রাখা হয়নি একথা কী সত্যি?
উত্তর: ধর্ম শিক্ষাসহ সকাল বিষয়ের জন্য একই পদ্ধতিতে মূল্যায়ণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে লিখিত মূল্যায়ণও অন্তর্ভূক্ত আছে।
* যে কোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে, খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর রূপাšতরকে মেনে নেয়া আরও কষ্টকর। কিন্তু বুঝতে হবে- এই রূপান্তর এগিয়ে যাবার জন্য অবশ্যম্ভাবী;, এর কোন বিকল্প নেই। একমাত্র বিকল্প হলো পিছিয়ে পড়া, নতুন প্রজন্মের জীবনকে ব্যর্থ করে দেয়া। যা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না।
*অভিভাবকরা সšতানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবুন। তাদের দক্ষ যোগ্য মানুষ হবার কথা ভাবুন। তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে উৎকর্ষ লাভের কথা ভাবুন। একবার ভীষণ প্রতিযোগিতার চিšতা থেকে বেরিয়ে সহযোগিতার, সহমর্মিতার চর্চার মধ্য দিয়ে সšতানের সুখী ভালো মানুষ হবার কথা ভাবুন।
* শিক্ষকদেরও দক্ষতা বাড়াবার জন্য প্রশিক্ষণ চলছে। তাঁদেরও জীবনমান উন্নয়নে সরকার আরও পদক্ষেপ নেবে। কারণ এরও কোনো বিকল্প নেই।
*কাজেই নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানান। নতুন প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার সকল দ্বার উন্মুক্ত করে দিন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আপনার সমর্থনের মাধ্যমে আপনিও শরিক হোন।

সুতরাং অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজে যাচাই করুন, সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন।
স্বার্থান্বেষী কোন মহলের ফাঁদে পা দেবেন না।
শিক্ষায় রূপান্তর একটি বৈশি^ক উদ্যোগ, এর বিকল্প নেই।
সকরার শিক্ষকদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে যা চলমান রয়েছে। সকলের সহযোগিতায় এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার যথাযথ বাস্তবায়ন আমাদের শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।

 

শেয়ার করুন