মন আমার দেহ ঘড়ি, মন ভালো রেখে পরপারে দেই পাড়ি

মোহাম্মদ নাদিম ভুইয়া :
যত নড়াচড়া করবেন, দেহঘড়ি ততো স্বাস্থ্যকর ও সহজ হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যিনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং যিনি মোটেই ব্যায়াম করেন না, উভয় ব্যক্তিই সিটিং ডিজিজে আক্রান্ত হতে পারেন। দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, স্থুলতা, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, কোমড়ে ব্যথা, ডিমেনশিয়া হতে পারে। যা আপনার কোন অসুস্থতায় অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়।

যে কোনো জীবিত সত্বা— তা সেটির গঠন ও আকৃতি যাই হোক না কেন— যদি সূর্য থেকে নিজের শক্তি সংগ্রহ করে তাহলে এটির একটি দেহ ঘড়ি থাকবেই। আলো ও অন্ধকারের সূত্র মেনে এই ঘড়ি কাজ করবে। Circadian Rhythm-সারকেডিয়ান রিদম’ হলো একটি শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া যা প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার চক্র পূরণ করে এবং জীবিত বস্তুর অস্তিত্বকে এক অদৃশ্য ছন্দে বেঁধে দেয়। উল্লেখ্য, ‘বডি ক্লক’-এর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিনজন বিজ্ঞানী জেফ্রি হল, মাইকেল রসবাস এবং মাইকেল ইয়ঙ ২০১৭তে মেডিসিনে নোবেল পুরষ্কার পান। এই দেহ ঘড়ি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে তাল রক্ষা করে এবং মানবদেহের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে এর গভীর যোগাযোগ রয়েছে।সাধারনত এই ‘বডি ক্লক’ এর দৌলতে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা অবধি মানুষের রক্তচাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তার এই সময়ে মানুষ খুব সচেতন থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূলত বেলা ১২টার পর বাড়ে তার ভাববিনিময় ক্ষমতা, এই সময়ে শরীরের তাপমাত্রাও একটু বেশি থাকে। সন্ধে ৬টার পর থেকে শুরু হয় মানুষের মস্তিষ্কে অবস্থিত বিশেষ স্থান পিনিয়াল বডি থেকে আলোক সক্রিয় মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরন। এই হরমোন আপনার ঘুমানো আর জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে। রাত ১২টার পর আসে গভীর ঘুম। সকাল ৬টার পর অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল থেকে নিঃসৃত হয় কোর্টিসল, আবার সচল হয়ে ‌যায় শরীর। এই সব বিভিন্ন হরমোনের সাহা‌য্যেই। যদি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই দেহ ঘড়ি ঠিকঠাক না চলে তাহলেই মানুষের শরীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপ, খাওয়া-ঘুম থেকে আচার আচরণ সব পাল্টে ‌যাবে।
যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিফটের কাজ করে তাদের দেহঘড়িটি অনেক সময় এলোমেলো হয়ে যায়। এই দশাটিকে বলা হয় ‘সোশাল জেট লেগ’ বা সামাজিক পরিস্থিতির কারণে তৈরি হওয়া শারিরীক বিড়ম্বনা। আবার বয়:সন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের শরীরের ভেতর হরমোনের একটা বন্যা বয়ে যায়। এর ফলে, এই বয়সীদের দেহঘড়ি ঘন্টা দু’য়েক পেছানো থাকে।তাই, অতি সাত সকালে তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে না তুলে আরো কিছু সময় ঘুমাতে দেয়া দরকার। অবশ্য বয়স হলে পরে আবার এই দেহঘড়ি পাল্টে যায়। বয়:সন্ধিকালের আগে যেমন ছিল বয়সকালে শরীর আবার সেই অবস্থায় ফিরে যায়।

পৃথিবীর কোনো কিছুই মহান আল্লাহ তায়ালা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল কিছুই মানুষের উপকারের জন্য। মহান আল্লাহ তায়ালার সঠিকভাবে ইবাদত করলে মানুষের জন্য দৈহিক-শারীরিক উপকারিতা। অজু, নামাজ, রোজার তত্ত্ব গবেষণা করতে যেয়ে অনেক বৈজ্ঞানিকদের চোখে এসব অবিশ্বাস্য উপকারিতা বের হয়ে আসে। দৈহিক ইবাদত খুব সহজেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

বর্তমানে সোশাল মিডিয়ায় কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ় দেখতে বসে হিসেব থাকে না সময়ের। আর এই সময় স্ক্রিনে চোখ রাখলে যে ঘুম ভ্যানিশ হয়ে যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য! পরদিন যেহেতু আবার কাজে বেরনোর তাড়া থাকে, তাই ঘুমের কোটা কোনওদিনই পূরণ হয় না। এর সুদূরপ্রসারী ফলটা কিন্তু মারাত্মক হতে পারে, তা জানেন তো? শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে।মস্তিষ্ককে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন শরীরকে প্রয়োজনীয় ঘুমের অবসর দিতেই হবে। যদি সকালে ওঠার পর ঝরঝরে লাগে, তা হলে বুঝবেন যে আপনার ঘুমের কোটা পূরণ হচ্ছে জীবন চক্র সঠিক চলছে।

মানুষের মন এক দেহঘড়ি। এ মনে যাকে জায়গা দিবো সেই ঘড়ির কাটার মতো ঘুরপাক খাবে। শান্তি তার স্মরণ ও তার ধ্যানে।
দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে মহান আল্লাহর স্মরণ। বেশি বেশি করে মহান আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।’ (সূরা আহজাব : ৪১-৪২)। যারা মনে মনে মহান আল্লাহকে স্মরণ ও জিকির করে তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের সর্বোচ্চ চাওয়া হলো তার অন্তরের শান্তি। মানুষের এই চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই পবিত্র কোরআনে জান্নাতের একটি নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘দার আস-সালাম’ (চিরশান্তির আবাস)। যেখানে মানুষ খুঁজে পেতে পারে তার আত্মার শান্তি। এর খুঁজেই ভালো থাকি।
সংকলনে : মোহাম্মদ নাদিম ভুইয়া। ঢাকা থেকে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply