রাত পোহালেই ঈদ

আশিক বিন রহিম :
বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- ‘মনের পশুরে করো জবাই,/পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই’। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ নামের যে পশু মনের মাঝে বাস করে, তাকে জবাই করার প্রেরণা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। রাত পোহালেই পহেলা আগস্ট ত্যাগের ঈদ। পবিত্র ঈদুল আজহা। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এটি। তবে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে। ঈদুল আজহার নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। তবে এবারের কোরবানির ঈদটি বিশ্ব মুসলমাদের একটু ভিন্নভাবেই পালন করতে হবে। কারণ, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থবিধি মেনে সমাজিক দূরত্বের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বেই এবারের ঈদুল আজহা পালন করবে মুসলমানরা। করোনা সংক্রমণরোধে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সেরকমই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। পাশাপাশি চাঁদপুর পৌরসভার থেকেও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চাঁদপুরে পশুরহাটে জনসমাগম, জালটাকা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালনার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি ঈদের জামায়াতে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানেও তৎপর রয়েছে পুলিশ বিভাগ।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে মসজিদে ঈদ জামাত আয়োজনের ক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিরা প্রবেশ করবে মসজিদে। নামাজ শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলানো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থবিধী মেনে পশু কোরবানি দেবার কথাও বলা হয়েছে।
করোানা সংকটের মধ্যেই আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় পশুরহাঁট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মােহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, একই হাটে যাতে বেশি সংখ্যক জনসমাগম না হয় সে কারণে এ বছর ১৯৯টি অস্থায়ী গরুরহাঁট অনুমোাদন দিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। প্রত্যেকটি হাঁটেই প্রবেশপথ এবং বাহির হওয়ার পথ আলাদা করা হয়েছে। হাটের প্রবেশপথে হাত ধােয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ থাকবে, স্বেচ্ছাসেবক থাকবে যাতে মাস্ক ছাড়া কেউ গরুর হাঁটে প্রবেশ করতে না পারে। জেলার বাইরে থেকে গরু আসার বিষয়ে আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি। এরপরও যারা আসবে তাদের কেউ অসুস্থ কীনা, জ্বর আছে কীনা, হাঁচি-কাশি আছে কীনা সার্বিক বিষয়ে দেখেশুনে তারপর হাঁটে প্রবেশের অনুমতি দেবাে।
তিনি আরো বলেন, এবছর গরু বিক্রির জন্য অনলাইন ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ইতোামধ্যে ৫০টির বেশি গরুর ছবিসহ মালিকের তথ্য আপলোাড করা হয়েছে সেখানে। অনলাইনে গরু ক্রয়ে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply