সরকারের সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জনসম্মুখে উপস্থাপন করা আমাদের দায়িত্ব : ডিসি অঞ্জনা খান মজলিস

মৎস্য কর্মকর্তার অনুপস্থিতি, চরম অসন্তোষ প্রকাশ
এইচ.এম নিজাম :
চাঁদপুরে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে চাঁদপুর জেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্য জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আপনাদের কাছে যখন কোনো বরাদ্দ আসে সেটা আপনারা জনসম্মুখে প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন। জনসম্মুখে প্রকাশ হলে সরকারের ভালো দিকগুলো প্রকাশ পাবে। কিন্তু যদি এগুলো প্রকাশ না করেন তাহলে জনসাধারনের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
কাজেই সরকারের এ সমস্ত প্রকল্পগুলো জনসম্মুখে আনা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
আরেকটি বিষয় এখানে আলোচিত হয়েছে, রাত্রিবেলায় নদীবন্দরে বা নদীপথে যে ধরনের যানবাহন চলাচল করার জন্য যে ধরনের নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। নৌযানগুলোতে লাইটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো মনিটর করার জন্য আমি সকল ইউএনওদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এসময় তিনি আরও বলেন, পর্যটনকেন্দ্রে যেসকল পর্যটকরা আসে সেটার দায়দায়িত্ব কিন্তু পর্যটন  কেন্দ্রের যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকেই নিতে হবে। সকল পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন তারা নিশ্চিত করে সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসমস্ত বিষয় জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে।  মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে এখনো একজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে  আমাদের কোস্টগার্ড ফায়ার সার্ভিস এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোঁজার চেষ্টা করেছে। এইসব ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে আমাদেরকে তীক্ষè নজর দিতে হবে।
অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যপারে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটগন কাজ করেছে।  আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সাথে আমার প্রত্যেকটা উপজেলার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড বিষয় গুলো দেখভাল করতে হবে। সামনে পয়লা মার্চ থেকে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, সেখানে জেলেদের জন্য যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলেরা যাতে তাদের প্রণোদনা সুষ্ঠুভাবে পায় সেটার প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ সভায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা তার কোন প্রতিনিধি না থাকায় তিনি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দিন কয়েক পরই মেঘনা-পদ্মা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু তারা আজকে কেউই এসভায় থাকবেন না-এটি উচিৎ নয়। অষন্তোষের এ বিষয়টি সভার কার্যবিবরণীতে আনার জন্য নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, জেলেরা জীবিকা অর্জন করছে মাছ ধরে, কিন্তু তাদের মাছধরা থেকে আমরা বিরত রাখছি। সুতরাং তাদের পরিবার পরিজন রয়েছে। সঠিকভাবে প্রণোদনা পেলে তাদের ভরনপোষণ হবে। কাজেই এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ।
বালু মহালের ব্যাপারে বিভিন্ন কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা সেটা তদারকি করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মকর্তাদেরকে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাঁদপুরে কোন বালুমহাল রাখা হবে না। বালু মহলের লোকজন তালবাহানা করে হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও আইনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছি, সময়ের ব্যাপার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন  পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সিভিল সার্জন মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ , চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হাবিব উল করিম, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, চাঁদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল খায়ের, চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান।
মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, মাত্র তিন মাস সময় হয়েছে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি আমার নির্বাচনী ইশতিহারে যা ঘোষণা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একটু সময় দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৌর এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও তিনি বলেন, কারও টেলিফোন বিভাগের অকেজো খুটি পড়ে আছে সেগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কে কিছু বিদ্যতের খুটি লাগানো হয়েছে- কিন্তু এসব খুটির মালিক কারা? কেইউ এসব খুটির দায়িত্ব নিচ্ছেন না। ওইসভাতেও পল্লী বিদ্যুতের যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও এ বিষয়ে কোন উত্তর দিতে পারেননি।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, আমাদের ৭২ হাজার ভ্যাকসিনের মধ্যে ২৮ হাজার ভ্যকসিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন নিতে আহ্বান জানালেও এখনো জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ ভাইয়েরা এখনো পিছিয়ে আছেন। ভ্যাকসিন নিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, কোন কোন জায়গায় চাল বা প্রণোদনা দেয়ার নাম করে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়। বিষয়টি দেখার জন্য জেলা প্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান।
আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মার্কেটিং অফিসার এন এম রেজাউল ইসলাম, আমার বাড়ি আমার খামার জেলা সমন্বয়কারী জীবন চন্দ্র রায় , জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের এডি রজত শুভ্র, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ, চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুলের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম,  আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা ইব্রাহিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজিম হোসেন, জেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা  মোহাম্মদ ফয়সাল, জেলা শিশু বিষয় কর্মকর্কা মো. কাউসার আহমেদ, ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply