সাফল্যের সুউচ্চ ধাপে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার ::
২০১৯ সাল, জানুয়ারি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন ডা. দীপু মনি, একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালনের পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা এবার তাঁর ওপর ন্যস্ত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
রাজনীতি করতে হলে মানুষের মনের গহীনে আসন করে নিতে হয়। স্বকীয়তা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করার মধ্যেই নিজেকে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে তুলে ধরা যায়।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা এমন রাজনীতি করা মানুষগুলোকেই তুলে এনে স্থান করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধু যেমন চিনে নিয়েছিলেন জাতীয় চার নেতাকে, তেমনি বঙ্গবন্ধু-কন্যাও কয়েকজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করা মানুষকে তাঁর সাহচর্যে রেখেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বেশ কিছু অভূতপূর্ব সাফল্য দেখান। গত দেড় বছরে যে সাফল্যগুলো এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে-
১. জাতীয় জীবনে এক বিভীষিকা হয়ে চেপে বসেছিল একটি অশুভ ঘটনা, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকলের তাণ্ডব।
ডা. দীপু মনি ২০১৯ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকলমুক্ত পরিবেশে সম্পন্ন করে সারাদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
২. ২০১০ সালের পর এই প্রথম তিনি প্রায় ২৭০০ স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও-ভুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার আঞ্চলিক অফিসগুলো এবং মাউশি অসামান্য দক্ষতায় করোনার ছুটির মধ্যেও এমপিও-ভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও ছাড় দিয়েছেন যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
এমপিও-ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো তদবির এখানে কাজে আসেনি। নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি কঠোর অবস্থানে ছিলেন। আর নীতিমালা মেনেই তিনি প্রতিষ্ঠান এমপিও-ভুক্ত করেছেন।
৩. সারা বিশ্বে একযোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন হবে। ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে তিনি বিষয়টি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অনুমোদন করাতে সমর্থ হন।
৪. সরকারি কলেজের শিক্ষকদের পদোন্নতি, পদ আপগ্রেডেশন, নতুন পদ সৃজন ও পদ-সোপান সৃষ্টিসহ নানা জটিল বিষয়গুলো নিরসন করার জন্য বিশ্লেষণ করে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেসব বাস্তবায়নের পথে। এসব পদক্ষেপ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।
৫. দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা জাতীয়করণকৃত কলেজের জনবল যাতে অতি দ্রুত ও সহজে আত্তীকৃত হতে পারে সে বিষয়ে তিনি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে সরজমিনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে এ কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়েছে বলে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন।
৬. দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি শিক্ষা ক্যাডারে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেন। শিক্ষাপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে তিনি শিক্ষার সর্বস্তর থেকে জামাত-শিবিরের দৌরাত্ম্য দূরীকরণ ও দুর্নীতিমুক্ত করেছেন, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ ধারা চলমান রয়েছে।
৭. শিক্ষা উন্নয়নে যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলো তিনি স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি মাউশিতে গিয়ে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
৮. মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালযয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা তিনি দক্ষতার সাথে প্রশমণ করতে সমর্থ হয়েছেন। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
৯. গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে ভিসিকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী দক্ষতার সাথে এ সংকট দ্রুত সমাধান করতে সমর্থ হয়েছেন।
১০. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে কাজ করছেন। কারিকুলাম এবং পাঠ্যসূচিতে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন সাধনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বছরই প্রথম ঢাকার বাইরে একটি উপজেলায় পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মতো একটি জাতীয় উৎসব উদযাপন করেন, যা অতীতে কখনো হয়নি।
১১. বর্তমান প্যানডেমিক সিচুয়েশনে যখন সব কিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তখন তিনি তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব এবং নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন। যা একটি কষ্টসাধ্য বিরল ঘটনা। যা ছিল অনেকের ধারণার অতীত, তা-ই তিনি করে দেখালেন।
১২. উন্নত বিশ্বে যেখানে অনলাইন শিক্ষা অনেক আগেই চালু হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশেও এটি চালু হয়তো হতো। এ দুর্যোগময় করোনা মহামারির সময়ে অনলাইনে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে অসাধারণ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
১৩. বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-এর উপর নির্ভরশীল। করোনা মহামারির সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তিনি এসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন।
১৪. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথা একটি অন্যতম বাধা। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, তিনি অনুপাত প্রথার একটি যৌক্তিক সমাধান করবেন।
১৫. নন-এমপিও শিক্ষকগণ যখন প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশণ করছিলেন তখন তিনি সেখানে উপিস্থিত হয়ে মায়ের মমতা দিয়ে তাদের মন জয় করে ঘরে ফিরিয়েছেন।
উজ্জ্বল সোনালি প্রত্যুষ সামনে। অসমসাহসী এ নেতৃত্বের দৃঢ়, কঠোর হাতে এগিয়ে যাবে আমার প্রিয় স্বদেশ।
লেখক : পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply