সুন্দর হাতের লিখার প্রয়োজনীয়তা

প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন ::
মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যের উপাসক। সৌন্দর্যের একটা আকর্ষণ সকলের কাছেই আছে। শিশুরা সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড় পরিধান করতে চায়, যুবকেরা সুন্দর সুন্দর ছবি খুঁেজ লয়, বৃদ্ধেরা বাড়ী-ঘর সুন্দরভাবে সাজায়ে রাখে, প্রকৌশলীরা সুন্দর সুন্দর ভবন নির্মাণ করে, মৌমাছিরা সুন্দর সুন্দর ফুলে ঘুরে বেড়ায় ইত্যাদি। সম্রাট শাহ্জাহান প্রিয়তমা পত্নী মমতাজ বেগমকে চিরস্মরণীয় করার জন্যে সৌন্দর্যের প্রতীক পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। আসল কথাটা হলো, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা হাতের লেখা সুন্দর করে লেখার চেষ্টা করে না। সে জন্যে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পায় না। যদিও কথাটা শিক্ষার্থীরা জানে Good hand writing scores good marks. হাতের লেখা খারাপ হলে পরীক্ষক খাতা পড়তে চান না। পরীক্ষকগণ দৈনিক নির্দিষ্ট সংখ্যক খাতা মুল্যায়ন করে থাকেন, তাই কোন লেখা সহজে পড়তে না পারলে বিরক্ত হয়ে তীর্যক রেখা টেনে কম বা গড় নম্বর দিয়ে রাখেন। হয়ত বিষয়বস্তুটা ঠিকঠাকই লিখা হয়েছে অথচ অসুন্দর হাতের লিখার জন্যে ছাত্ররা নম্বর হারাচ্ছে। পরীক্ষায় ফেল করার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

হাতের লেখা ভাল হলে পরীক্ষক খাতাখানা হাতে পাওয়া মাত্রই পরীক্ষার্থী সম্বন্ধে একটা ধারণা করে নেন। লোকে বলে, First impression is the best impression and it lasts long. হাতের লেখার জন্যে প্রত্যেক প্রশ্নোত্তরে অর্ধ নম্বর বেশি করে পেলে প্রত্যেক বিষয়ে অন্তত: ৫ থেকে ১০ নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এভাবে অধিক নম্বর পেলে সব বিষয়ে ৫০ থেকে ১০০ নম্বর অধিক পাওয়ার সম্ভাবনা। সি গ্রেডের ছাত্র বি গ্রেড, বি গ্রেডের ছাত্র এ গ্রেড পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। তাহলে হাতের লেখা সুন্দর করার প্রয়োজনীয়তা বুঝা গেল। হাতের লেখা সুন্দর করতে পারাটা এটা নিজের এখতিয়ার। আয়নার সামনে বসে নিজের চেহারা কিভাবে সুন্দর দেখায় এই ধরনের চর্চা প্রায় সবাই করে থাকে। হাতের লেখা সুন্দর করার আগ্রহ থাকলে কিছুদিন চর্চা করার পর একদিন দেখা যাবে নিজের হাতের লেখা কতটা সুন্দর দেখায়। এক্ষেত্রে অন্যের লেখায় কোন কোন বর্ণ বা শব্দ দেখতে ও লিখতে যদি ভাল মনে হয় সেগুলো অনুকরণ করা বা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে লেখা সংগ্রহ করে যেটা ভাল দেখায় সেটা অনুকরণ করা যেতে পারে। তখন নিজের মনে আনন্দের সঞ্চার হবে। সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্যে অন্যের বাহবা পাওয়া যাবে। সব চাইতে বড় কথা, নিজেরও সম্পদ হল, ভাল নম্বর পাওয়ার একটি উৎস মিলে গেল। কালো বৌকে সুন্দর শাড়ী পরালে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি নিজের লেখায় সারমর্ম না থাকলেও সুন্দর লেখার আবরণী এটাকে ঢেকে রেখে পরীক্ষকের চোখে সুন্দর করে তুলবে। তাই বলছি সুন্দর লেখা ছাত্রদের জন্যে Good Pass-Port. দৈনিক অনেক সময় গল্প-গুজবে নষ্ট হয়, ঐ সময়টুকুও যদি  হাতের লেখা ভাল করতে ব্যয় করা যায় তাহলে এই মহৎ উদ্দেশ্যটি অর্জন অবশ্যই সম্ভব। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে সারা দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি রয়েছে। এই ছুটিকালীন সময়ে সকল শিক্ষার্থীর উচিত হবে হাতের লেখা সুন্দর করার চর্চা করা, এক্ষেত্রে অভিভাবকগণ তাঁদের সন্তানদের উৎসাহিত করতে পারেন। যে সকল শিক্ষার্থী শিক্ষাক্ষেত্রে কৃতিত্ব লাভ করেছেন, দেখা গেছে তাদের সকলেরই হাতের লেখা অত্যন্ত সুন্দর।

লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply