হাজীগঞ্জে পঁচা ডিম বিক্রিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের পাল্টা-পাল্টি থানায় অভিযোগ

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর আমির বাজারে দোকানিকে পঁচা ডিম ফেরত দেয়াকে কেন্দ্র করে থানায় দুই পক্ষের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
প্রথমে আমির বাজারের ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাত ৯টায় তার দোকানে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ এনে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর শুক্রবার দুপুরে ভাইদের পক্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ইব্রাহীম খান রনি পণ্য ক্রয় করতে যাওয়ায় হামলার শিকার হবার অভিযোগ এনে দোকানিসহ ৫জনকে বিবাদী করেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় আমির বাজারের ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে প্রবাসী হান্নান খান দোকানে এসে তিন হালি ডিম কিনে নেয়। এর মধ্যে পাঁচটি ডিম পচা পড়েছে বলে দোকানে এসে অভিযোগ করেন। ডিমের দাম কেটে নেয়া হবে বললেও আবারো ডিম ফেরত চায়। তাকে ডিম না দেওয়ায় বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। পরে তার বাবা ও ভাইদের সাথে বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় করে বিকেলে প্রবাসী হান্নান খানের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু রাত ৯ টায় সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা ইব্রাহিম খান রনির ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান দোকানের সামনে এসে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করে।
গিয়াস উদ্দিন অভিযোগে উল্লেখ করেন, হামলার সময় সুমনের সাথে থাকা আরো বেশ কয়েকজন দোকানের ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর ওই যুবলীগ নেতা ও তার ভাই এসে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান আমার স্ত্রী ও মেয়ের উপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে।
অথচ ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনের অভিযোগপত্রে স্বাক্ষী ওলি আহম্মমেদের বক্তব্যের সাথে তার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওলি আহম্মমেদ জানান, ঘটনার সময় আমি দোকানের বাহিরের টেবিলে বসা ছিলাম। তখন সুমনের সাথে ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনের তর্কবিতর্ক চলছিলো। ওই সময় গিয়াস উদ্দিনের পরিধানে একটি স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া ছিলো। এক পর্যায়ে সুমন গিয়াস উদ্দিনের গায়ে হাত তুললে বাজার ভর্তি মানুষ দোকানে ভীড় করে। আমি সুমনের সাথে আর কাউকে দেখেনি।
তিনি আরো বলেন, ফাঁসি হলে হবে সত্য কথা বলবো। দোকানের কোন মালামাল লুট হয়নি। এমনকি ক্যাশ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেয়ার ঘটনাটিও মিথ্যা। কোন ভাঙ্গচুরও করা হয়নি দোকানে। সেখানে কোন মহিলাও ছিলো না, তাহলে পরবর্তিতে গিয়াসউদ্দিনের বউ মেয়ের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি মামলা শক্ত করতেই করা হয়েছে। (দু’জনের জবানবন্দীর ভিডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে)।
গিয়াসউদ্দিন ও ওলি আহম্মমেদের সাথে কথা হয় দু’জনের উপস্থিতিতেই। ওই সময় গিয়াসউদ্দিন আরো জানান, বিকেলে ক্ষমা চাওয়ার পর রাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে আমি ভাবতে পারিনি। তাই হঠাৎ এমন ঘটনায় আমি হতবাক হয়ে যায়। আমি নিজের চোখে ক্যাশ থেকে টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি দেখেনি। অনুমান করেছি কারন ঝামেলাগুলো তাদের সাথে হয়েছে- তারাই নিয়েছে আমার ক্যাশ থেকে টাকা। মামলা মজবুত করতে দোকানরে মালামাল ফলে ছবি তুলে নাটক সাজিয়েছে গয়িাসউদ্দিন অভিযোগ অলি আহম্মদের।
ঘটনাস্থলে ছিলেন পাশের দোকানদার সাইফুদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, শরীফ খান, মাসুদ সহ ২০/২৫ জন। তারা জানান, দোকানে হামলা বা লুটপাট হলে তার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির একটি বর্ণনা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অবগত করা উচিত। কিন্তু ওই দিন গিয়াসউদ্দিনের দোকানে এমন কিছুই ঘটেনি। এমনকি গিয়াসউদ্দিন তার ক্যাশ থেকে টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়েও বলেনি।
পাশের দোকানদার সাইফুদ্দিন আরো বলেন, ঘটনার পর আমি সহ অনেকেই তার দোকানে চা খেয়েছি। তখন দোকানের মালামাল স্বাভাবিক ছিলো। গিয়াসউদ্দিন ভাই একবারো বলেনি তার ক্যাশ থেকে টাকা খোয়া গেছে। আর তর্ক করেছে শুধু সুমনের সাথে, তাহলে বাকী নামগুলো কোথায় থেকে এসেছে?
আমির বাজারের পাহারাদার আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনার সময় থেকে শেষ পর্যন্ত আমি তার দোকানের সামনে ছিলাম। আমি যখন তার দোকানে চা খাচ্ছিলাম, তখন তাকে খুব মনমরা দেখাচ্ছিল। তার হাতের মুঠোয় একটি দলা পাকানো শার্ট ছিলো। শার্টটি নিয়ে তিনি একবার বাড়ির ভিতর যাচ্ছেন, আবার দোকানে আসছেন। এভাবে একাধিকবার করতে দেখেছি। এছাড়া ঘটনার সময় বাড়ির কোন মহিলাই এখানে ছিলো না।
স্থানীয়রা বলেন, সামনে ইউপি নির্বাচন এবং ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা ইব্রাহিম খান রনি বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে ঘটনাটি সাজানো নাটক। দোকানে হামলা ও লুটপাটের কোন ঘটনাই ঘটেনি। এদিকে স্থানীয় (একই বাজারের ব্যাবসায়ী সাইফুল ইসলাম, শাহ আলম, নৈশ প্রহরী আঃ মতিন, গিয়াস উদ্দিনের দোকানের কাষ্টমার জাহাঙ্গীর, খাজা আব্দুল্লাহ, শরীফ, জাবেদ, মতিন, সেলিম সহ অনন্যরা, যারা ঘটনার পর তার দোকানে ১০ টা পর্যন্ত চা আড্ডায় ছিল) তারা জানায় দোকানে ভাংচুর, লুট, হামলা এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাছাড়া যে ঘটনা ঘটেছে তা সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সাড়ে ৭ টার মধ্যে ঘটেছে, তারপর গিয়াস উদ্দিন রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত দোকানদারি করেছে।
থানায় অভিযোগের বাদী ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ইব্রাহীম খান রনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউছুফ পাটওয়ারীর কিছু অনিয়মের খবরা-খবর সাংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম অবহিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান আমাকে সন্দেহ করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পঁচা ডিমের ঘটনাকে থানায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে। দোকানি পঁচা ডিম দিয়েছে, তার প্রতিবাদ করা যাবে না। এটা কোন সমাজ। গিয়াস উদ্দিন নিজেই ভুল বুঝতে পেরে বাসায় গিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলে এসেছে। বিষয়টা সুমন জানতো না। সে বাজার থেকে বাড়ীতে প্রবেশ পথে দোকানি গিয়াসউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি লুটতরাজের অভিযোগ।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবদুর রশিদ জানান, এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply