হাজীগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষে সাবেক শিবির নেতাসহ ২৯ জন গ্রেফতার, ১০ মামলায় আসামী ৫ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, পুলিশ এসল্ট ও থানায় অ্যাটাকের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫ হাজার জনকে। ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হাজীগঞ্জের জামায়েত নেতা ও সাবেক শিবির সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আব্বাসি (৪০)।
এদিকে এ ঘটনা তদন্তে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আরও সময় চেয়েছে ওই তদন্ত দল।
২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটিকে এক সপ্তাহের সময় দেয়া হয়েছিল। তবে তারা আরও সময় চেয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে আরও ৫/৭ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ও পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ইব্রাহীম খলিল জানান, মন্দিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২ হাজার থেকে ২২শ’ জনকে আসামী করে ২টি করে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে গত কয়েকদিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আরও ৮টি মামলা দায়ের করেছেন। সর্বশেষ মামলা হয়েছে ২০ অক্টোবর বুধবার। এর প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩শ থেকে ৪শ’ জনকে আসামী করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ২৯ জনকে।
এদিকে জেলা পুলিশ জানায়, চাঁদপুর জেলার সম্প্রীতি পূজা মন্ডপ ভাংচুর ও পুলিশ এসল্ট মামলায় চাঁদপুর জেলা পুলিশ কর্তৃক ২৯ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জের জামায়েত নেতা ও সাবেক শিবির সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আব্বাসি (৪০) ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। আসামী মোঃ কামাল উদ্দিন আব্বাসি পূজামন্ডপ ভাংচুরসহ পুলিশ এসল্টের ঘটনায় অংশগ্রহণ করেছে, যা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় শনাক্ত হয়। উক্ত আসামী মামলার ঘটনায় জড়িত আছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। ভিডিও ফুটেজে যাচাই-বাছাই করে এবং গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ আরো অনেক অভিযুক্তের নাম পাওয়া গেছে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় মিছিল বের করে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় হামলা চালানো হয়। এ সময় তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে ৩ জন, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর একজন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জনসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন : টাইলস মিস্ত্রি চাপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর বাগডাঙা এলাকার শামসুর রহমানের ছেলে মো. বাবলু (৩৫), হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রান্ধনী মোড়ার তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮), একই এলাকার মো. ফজলুর ছেলে ইয়াছিন হোসেন হৃদয় (১৪) ও পৌরসভার রান্ধনী মোড়ার বাচ্চুর ছেলে মো. শামীম (১৯) ও ট্রাকচালক সাগর (২৫)। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ আরও ৩০ জন।
মন্দিরে হামলা ও সংঘর্ষের পর হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। মোতায়েন করা হয় বিজিবি। ৩ দিন পর প্রত্যাহার করা হয় ১৪৪ ধারা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply