এবার মেঘনায় বালু উত্তোলনে সেলিমের ভাইয়ের আবেদন শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ হাইকোর্টের
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে মেঘনা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বালি উত্তোলনের সুযোগ উচ্চ আাদালতের আদেশে বন্ধ হয়েছে আগেই। এবার তার ভাই বোরহান খানের বালি উত্তোলনের অনুমতির আবেদন শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার আবেদন শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করে তা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। আদালতে বোরহান খানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমির এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান।
পরে মাঈনুল হাসান জানান, বোরহান খান মেঘনা নদী থেকে বালি উত্তোলনের অনুমতির জন্য একটা আবেদন করেছিলেন। আবেদনে বালি উত্তোলনের অনুমতির পাশাপাশি যাতে কেউ বালি উত্তোলনে বাধা না দেয় সেই আবেদনও জানিয়েছিলেন। আদালত তার আবেদন শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করে তা আউট আব লিস্ট করেছেন। ফলে সে তার ব্যবসার জন্য কোন বালি তুলতে পারবেন না।
এর আগে গত চার এপ্রিল আপিল বিভাগ চাঁদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানকে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন তা স্থগিত করেন। বালু তোলার অনুমতি বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের (লিভ টু আপিল) পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এমনকি অনুমতি ছাড়াই চেয়ারম্যান বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘদিন বালু ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদীভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। নদীভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙনকবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রæয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডবিøউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
ওই চিঠির পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদফতর, বিআইডবিøউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত নৌযান জব্দ ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নদীপাড়ের ভাঙনকবলিত মানুষ।