চাঁদপুরে রেকর্ড বৃষ্টিপাতে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা

হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকা পানি আটকে জনদুর্ভোগ

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :

চাঁদপুর জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে জেলা সদর, হাজীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর ২৭ মে জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৫৭ মিলিমিটার।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত। শহর ঘুরে দেখাগেছে অধিকাংশ মহল্লা সড়কে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে শহরের নাজির পাড়া, মিশন রোড আশ্রম এলাকা, প্রফেসর পাড়া, মমিন পাড়া, গুয়াখোলা, চিত্রলেখা মোড়, পালপাড়া, আলিম পাড়া, আদালত পাড়া, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, গাজী সড়ক, মাদ্রাসা সড়কে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা। এসব এলাকার সড়কের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
মিশন রোড এলাকার অটোরিকশা চালক রেদওয়ান ইসলাম বলেন, ভোর ৬টায় সড়কে নেমেছেন। বৃষ্টির কারণে লোকজন বাসাবাড়িতে থেকে নামেনি। যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। সড়কে যানবাহন সংখ্যা খুবই কম জানালেন তিনি।
শহরের নাজির পাড়ার মামুনুর রশিদ বলেন, বৃষ্টির পানি তাদের বাসার নীচতলায় হাঁটু পরিমান। গতকাল রাত থেকেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পালপাড়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর টানা বৃষ্টি হলেও গতকাল রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ছিলো অনেক বেশী। তাদের বাসায়ও পানি হাঁটু পরিমান।
শহরের শপথ চত্বর এলাকায় মাঠা বিক্রি করেন বিকাশ। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় এসে মাঠা বিক্রির জন্য বসেছেন। বৃষ্টির কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত কোন ক্রেতা আসেনি। মাঠা বিক্রিতেই তার সংসার চলে। যে কারণে বৃষ্টিতেও ঘরে বসে থাকতে পারেননি।
সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সড়কেরও বেহাল অবস্থা।
এর আগে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। থেমে থেমে সারা রাত বৃষ্টি ও বজ্রপাত অব্যাহত ছিলো। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবহন চলাচল কমে যায়। অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাসাবাড়িতে চলে যায়।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মো. শোয়েব বলেন, ৪ অক্টোবর সকাল ৯টা হতে ৫ অক্টোবর সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫০ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা হতে ৯টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ২৪ ঘন্টা হিসেবে এই বছর জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৭৭ মিলিমিটার। এর আগে গত ২৭ মে জেলায় ২৫৭ মিলিমিটার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
এদিকে হাজীগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এই বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আর এতে করে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার অলিগলিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে এ অবিরাম বৃষ্টিপাতে হাজীগঞ্জ শহরের রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যায়। নিচ তলার বাড়িঘরে পানি ঢুকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক শহরবাসী। তাতে পথচারীসহ স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে বড় মসজিদ মাঠ, হাজীগঞ্জ বাজারের দুই পাশ, আবাসিক এলাকা, মডেল কলেজ মাঠ ও তার চারপাশে পানি থই থই করছে। বাজারের ৫নং ওয়ার্ড ট্রাক রোড হয়ে মন্দির এলাকা, ৪নং ওয়ার্ডের বেপারী বাড়ীর রোড হয়ে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি নিষ্কাশনের জটিলতা দেখা যায়। এভাবে পৌরসভার টোরাগড় এলাকার হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে চাঁদপুর কুমিল্লা সড়কের উপর পর্যন্ত পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এভাবে পুরো পৌর এলাকার অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমরসমান পানি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ইতিপূর্বেও এমন বৃষ্টি হলে প্রায় ৭/৮ দিন জলবদ্ধতার মাঝে চলতে হয়। এখন আবার শুক্রবার ও শনিবারের অভিরাম বৃষ্টিপাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাজীগঞ্জ পৌরসভা থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক তাফস শীল বলেন, জলাবদ্ধতা কি কারণে হচ্ছে তা ক্ষতিয়ে দেখবো তবে অতিবৃষ্টির কারণে যদি কোন বাসিন্দা কাজকর্মে ফেরার অসুবিধা হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

শেয়ার করুন