অভিযানের সময় মাছ শিকারে নদীতে নামলেই আইনি ব্যবস্থা

* নভেম্বর মাসের মধ্যে নতুন করে জেলেদের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে
আশিক বিন রহীম :
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, আমাদের জেলেরা বড় ধরনের অপরাধী নয়। ওদের চোর ডাকাতের পর্যায়ে চিন্তা করা যাবে না। তারা অপরাধ করে, কারন সে নিষিদ্ধ সময়ে জাটকাসহ মাছ শিকার করে। অন্তত তাদের এই কাজটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমি সেই জেলেদের পক্ষে যারা জাটকাসহ এই অভয়াশ্রমে আগামী ২ মাসে কোন রকম মাছ ধরার চেষ্টা করবে না বা ধরবে না। তিনি বলেন, তারা ভুল করে নিষিদ্ধ সময়ে (অভিযানের সময়) মাছ ধরে থাকে। অভিযানের সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে কি কি সুবিধা পাবে তা তাদেরকে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। আমরা সবসময়ই জেলেদের স্বার্থে তথা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থেই কাজ করে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জাটকা রক্ষা কার্যক্রমে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক জেলেদের প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে নতুন করে জেলেদের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। সে তালিকায় যেন মৃত জেলে বা পেশা পরিবর্তন করা জেলের নাম না থাকে। যেন জেলেদের বাইরে অন্য কেউ বরাদ্দকৃত চাল না পায়। আমি সবসময়ই জেলেদের পক্ষে। তবে দূর্বত্ত্বায়ন জেলেদের পক্ষে নেই। একটা জেলে ভুল করে অভিযানের সময় যখন নদীতে নামে তখন তাকে আইনের ব্যবস্থায় আনা হয়। আর একটি জেলে যখন জেল হাজতে যায়, তখন তার পুরো পরিবারই সেই শাস্তি ভোগ করে। তাই তাদের ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে যেন অভিযানের সময় নদীতে নামলেই আইনি ব্যবস্থায় আনা হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, কোন একটা কাজ করতে প্রথমেই প্রচারনার দরকার পড়ে। সেই প্রচারনার প্রচেষ্টা আগেই করতে হবে। তিনি মৎস কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন,আজকের এই প্রস্তুতিসভা আরো আগে করার দরকার ছিলো। জেলা প্রশাসক বলেন, বড় ধরনের কার্যক্রম করতে গেলে পরিকল্পনার দরকার পড়ে, পর্যালোচনা করে আমরা সে ধরনের একটি অ্যাকশন পরিকল্পনা করবো। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সমন্বিতভাবে একহয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, অভিযান চলাকালীন সময়ে নদীপথে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে জেলা প্রশাসক বলেন, সদিচ্ছা সবচেয়ে বড় জিনিস। ইচ্ছা থাকতে হবে যেন কাউকে যেন জাটকা ধরতে না দেয়া হয়। এ কার্যক্রমে আপনাদের সহায়তা অনেক বেশি দরকার। জেলেদের সচেতন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, সচেতনতামূলক কয়েকটি সভায় আমিও যাবো। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেন,এসময়ে শুধু জাটকাসহ পদ্মা মেঘনার অভয়াশ্রমে মাছ ধরাই নয়, এই পোনামাছ বা পরিপক্ক ইলিশ মাছ পরিবহন, বিক্রি করা যাবে না। আমরা কাউকে এসব বিষয়ে ছাড় দেয়া হবে না।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন শিকদার, কোস্ট গার্ড এর প্রতিনিধি মোঃ আসাদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী, আলগী দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জলিল মাষ্টার, জেলা আওয়ামী মৎসজীবি সমিতির সভাপতি মালেক দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান প্রমূখ।
এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনা করেন জেলা মৎস কর্মকর্তা আসাদুল বাকী। সভায় হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ডের করা একটি অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই না, এমনটা হোক। সরকারের নিয়মিত বাহিনী তার মতো করে কাজ চালিয়ে যাবে, আপনারা তাদের সহযোগিতা করবেন। হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আমি সব সময়ই জাটকা নিধনরোধে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি এবং ভবিষ্যতে করে আসবো। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। আর বাড়ার পেছনে কারণ, গত ক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারনের আন্তরিকতা ও কঠোর মনোভাব।
আরো উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী, কচুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা দিপায়ন দাস, মতলব দক্ষিনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুশরাত শারমিনসহ সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যবৃন্দ।
প্রসঙ্গত : আগামী ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার ৭০ কিলো নদী অন্চল তথা অভয়াশ্রমে জাটকাসহ সকল ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এছাড়াও দেশের আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় ইলিশ অভয়াশ্রমে মাছ শিকার নিষিদ্ধ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply