করোনাকালে চাঁদপুরে অসহায়দের আতঙ্কের আরেক নাম কিস্তি
আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুরে অসহায় দরিদ্র মানুগুলোর কাছে করোনার পাশাপাশি আরেক আতঙ্কের নাম এখন কিস্তির টাকা। কর্মহীন ঘরবন্ধি প্রায় এই মানুষগুলোর মাথার উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির চিন্তা। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে মানবিকতা দেখালেও জুনের শুরুতে সরকারি ছুটি উঠিয়ে নেবার সাথে সাথেই এনজিও কর্তৃপক্ষ তাদের মাঠকর্মীদের ঋণের টাকা আদায়ে মাঠ নামিয়ে দিয়েছেন। এতে করে মাঠকর্মীরাও চাকরি বাঁচাতে কিস্তির টাকার জন্যে গ্রহকদের চাপ প্রয়োগ করছেন।
এর থেকে উত্তোরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে শহরের বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। ২ জুন চাঁদপুর শহর এলাকার প্রায় ১০/১২ জন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীর পক্ষে অবু সুফিয়ান নয়ন নামের এক ব্যক্তি চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয় যে, শক্তি ফাউন্ডেশন, আশা সমিতি, গ্রামীন ব্যাংক ও আপ সমিতির সদস্য হিসেবে আমরা দীর্ঘ বছর ধরে টাকা লেনদেন করে আসছি। পাশাপাশি সমিতির সদস্য হিসেবে ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাতো কিস্তিতে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। যা নিয়মিতভাবে আমরা পরিশোধ করে আসছি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে আমাদের দোকানপাট বন্ধ থাকায় অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন আর আমরা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে সরকারও এনজিওগুলোকে কস্তি না নিতে নির্দেশ দিয়েছে। অথচ উল্লেখিত এনজিও
প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে আমাদের কিস্তি দিতে চাপ দিচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দিবো।
চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, গুনরাজদিসহ বেশ কিছু এলাকার ঋণ গ্রহিতা কাউছার, তৌহিদ, ইয়াসিন, দাদন, রাব্বি, নিয়াজ ও হাকি প্রমুখরা জানায়, প্রতিদিনই এসব এনজিও মাঠকর্মীরা আমাদের কাছে কিস্তির চাকার জন্যে চাপ দিচ্ছেন। আমনা জানি যে এই দুর্যোগে কিস্তির টাকা না নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষিত করা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে শক্তি ফাউন্ডেশনের চাঁদপুর শাখার ম্যানাজার শহিদুল ইসলাম বলেন, এমন অভিযোগ সত্যি নয়। গ্রাহকদের খোঁজ খবর নেয়া এবং তাদের স্বাস্থবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে মাঠকর্মীরা কাজ করছে। ৫০ টাকার মাস্ক ৫টাকা মূল্যে বিক্রি করছি। তবে কিস্তির টাকা দেয়ার জন্যে গ্রাহকদের কোনো চাপাচাপি করছি না। যারা স্বেচ্ছায় দিতে চায় তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে।
আশা সমিতির ম্যানাজার বিল্লাল হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি তাকে স্পস্ট উল্লেখ আছে যে, জোর করে কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা যাবেনা। গ্রাহক নিচের ইচ্ছায় দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে পারব। বর্তমানে ২০% গ্রাকের কাছ থেকেও কিস্তির টাকা পাওয়া যচ্ছে না। তুই আরও জানান এদিকে আমরা জনপ্রশাসনে তন্ত্র বিলে অর্থসহায়তা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত : চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়র চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাতদিন মাঠে কাজ করছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া সারাদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেও তাদের চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই যখন বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করছে, ঠিক তখনই ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির চিন্তা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে দরিদ্র মানুষের মাথায়। এসব দরিদ্র মানুষের কাছে করোনার পাশাপাশি আরেক আতঙ্কের নাম কিস্তি।
একাধিক ঋণগ্রহীতারা জানান, করোনা আতংকিত হয়ে কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এসব মানুষের। এরপরও এনজিওগুলো আমাদের কোনও সাহায্য সহযোগিতা না করে উল্টো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব মানুষের মধ্যে আছে দিন মুজুর, রিকশাচালক, অটো চালক, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী।