চাঁদপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যদিয়ে চলছে ১০ ইউপি নির্বাচনের প্রচারণা

আশিক বিন রহিম :
আগামি ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে চাঁদপুর সদরের ১০টিসহ দেশের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ১০ ইনিয়নে মোট প্রার্থী ৪০৮ জন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৯৮ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৬ জন। আর দুটি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইতিমধ্যেই বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।


এ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। গত ২৭ অক্টোবর প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। তারা ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে ভোটারদেন নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। হাটে-ঘাটে, চা স্টলে চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরাও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। সব মিলিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
এদিকে বরাবরের মতো এবারও নির্বাচরে আচরণবিধি নিয়ে সরকারে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা লঙ্ঘনের হিড়িক থেমে নেই। মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে মিছিল-শোডাউন করছেন। দেয়ালে পোস্টার স্যাঁটানো নিয়ম না থাকলেও সেটি মানছেন না চেয়ারম্যান প্রার্থরাও। খোদ ইউনিয়ন পরিষদ ভনের দেয়ালেও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো দেখা গেছে। আবার কোন কোন ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। অথচ নির্বাচনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেও যেন দেখাছে না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন জানান, আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। চাঁদপুরের ১০টি ইউনিয়নে মোট ১০৫ টি কেন্দ্র এবং ৫৭১ বুথ রয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়নি। আহাগী ৫/৬ তারিখের মধ্যে তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
নির্বাচনী আচড়ণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের পোস্টার দঁড়িতে ঝুলাতে পারবেন। দেয়াল কিংবা কোথায় পোস্টার লাগানো যাবে না। উঠোন বৈঠক করা যাবে, তবে কোন শোডাউন কিংবা মিছিল করা যাবে না। কেউ আচরণবিধি না মানলে তাদের তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে সাধারণ ভোটাররা জানান, ‘বিগত দিনে যারা এলাকায় উন্নয়ন করেছে এবং সুখে-দুঃখে যারা তাদের পাশে ছিল, তাদের তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তবে এবছরও দেশের আরেকটি বড় রাজনীতিক দল বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তাদের শীবিরে এ নির্বাচন নিয়ে খুব একটা উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়নি। যদিও চাঁদপুর সদরের ১০টি ইউনিয়নের বেশ ক’টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলটির পদ পদবী ধারী অনেকেই অংশ নিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদরের ১০ ইনিয়নে মোট প্রার্থী ৪০৮ জন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৯৮ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৬ জন।
চাঁদপুরে ১০ ইউনিয়নের ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪শ’ ৯৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১হাজার ৮৪ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৯২ হাজার ৪শ’ ৫১ জন।
১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ১নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন থেকে মোট ৩৪ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিকে বর্তমান চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন খান শামীম, (হাতপাখা) প্রতিক অজিউল্লাহ সরকার, স্বতন্ত্র খোরশেদ আলম (আনারস) প্রতীক পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ২৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬ জনের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সংরক্ষিত সদস্য (৪,৫ ৬) রহিমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
২নং আশিকাটি ইউনিয়ন থেকে মোট ৪৪ জন প্রার্থীর প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিকে বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী, (হাতপাখা) প্রতীক মো. মাসুদ গাজী, স্বতন্ত্র দেলওয়ার হোসেন খান (চশমা) প্রতিক পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ৩৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৫ জনের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়। এদের মধ্যে সংরক্ষিত সদস্য (৭,৮,৯) পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় আয়শা বেগম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন থেকে মোট ৫১ জন প্রার্থী প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিক মাসুদুর রহমান নান্টু, (হাতপাখা) প্রতীক মো. শাহ জামাল গাজী, স্বতন্ত্র মোঃ রফিকুল ইসলাম ( আনারস) প্রতিক, স্বপন মাহমুদ ( টেলিফোন) প্রতীক পেয়েছেন।।সাধারণ সদস্য ৩৭জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১০জনের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়।
৫নং রামপুর ইউনিয়ন থেকে মোট ৪৩ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় (নৌকা) প্রতিকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।সাধারণ সদস্য ৩৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৮জনের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
৬নং মৈশাদী ইউনিয়ন থেকে মোট ৪৫ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতীক মো. নুরুল ইসলাম, (হাতপাখা) প্রতীক আজহারুল ইসলাম, স্বতন্ত্র আবু জাফর মোঃ সালেহ (আনারস) প্রতীক পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ৩৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৮জনের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৭নং ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী না থাকায় মোঃ রাশেদ আহম্মদ ঢালী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৭নং তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন থেকে মোট ২৭ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় (নৌকা) প্রতিকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাম হাসান রাসেল গাজী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে সাধারণ সদস্য ১৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৮জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সাধারণ সদস্য ১নং ওয়ার্ড আরশ্বাদ মোল্লা, ২নং ওয়ার্ড হাচানাত হাজী, ৪ নং ওয়ার্ড সোবহান গাজী ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৮নং বাগাদী ইউনিয়ন থেকে মোট ৪৫ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিক বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল, (হাতপাখা) প্রতীক মো. নেয়ামত উল্লাহ, স্বতন্ত্র (চশমা) প্রতিক মোঃ বরকত উল্ল্যাহ খান, (আনারস) প্রতীক মানিক মিয়া, জাকের পার্টির মুনসুর বেপারী (গোলাপ ফুল) প্রতিক পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ৩৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৫ জনের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়। এদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী না থাকায় সংরক্ষিত আসনে (১,২,৩) পারুল আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৯নং বালিয়া ইউনিয়ন থেকে মোট ৩৭ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিক রফিক উল্যাহ মাস্টার, (হাতপাখা) প্রতীক মো. নুরুদ্দিন খান, স্বতন্ত্র (টেলিফোন) প্রতীক হাফিজুর রহমান, (আনারস) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন তফাদার, (মটর সাইকেল) মোঃ কামরুল হাসান খান, (চশমা) প্রতীক গাজী মোঃ মাসুদ রায়হান, বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম (টেবিল ফ্যান) পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ১৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১১জনের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সাধারন সদস্য পদে ১নং ওয়ার্ডের কাদির গাজী,২ নং ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিন খান, ৫ নং ওয়ার্ডের নেছার তালুকদার, ৯ নং ওয়ার্ডের কাদির গাজী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
১২নং চান্দ্রা ইউনিয়ন থেকে মোট ৪৮ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতিকের বর্তমান চেয়ারম্যান খান জাহান আলী কালু পাটওয়ারী, (হাতপাখা) প্রতিক মাও. মো. মজিবুর রহমান মিয়াজী, স্বতন্ত্র (ঘোড়া) প্রতীক মুকবুল, আব্দুর রহমান বেপারী (আনারস) প্রতিক পেয়েছেন। সাধারণ সদস্য ৩৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৯জনের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
১৩নং হানারচর ইউনিয়ন থেকে মোট ৩২জন প্রার্থীর ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। তারা হলেনঃ (নৌকা) প্রতীক মো. মুকবুল হোসেন মিয়াজী, (হাতপাখা) প্রতিক মো. মনির হোসেন, স্বতন্ত্র মোজাম্মেল হোসেন গাজী আনারস প্রতীক। সাধারণ সদস্য ২৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৬ জনের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply