চাঁদপুরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে ২৬ লক্ষাধিক টাকা ও ৮২ টন চাল বরাদ্দ

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুরে কোভিড -১৯ এর কারনে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তার জন্যে ২৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার নগদ অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৮২ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জেলার ৮ টি উপজেলা এবং ৭ টি পৌরসভার জন্যে এই বরাদ্দ দিয়েছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়।
এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পত্রে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে এই বিশেষ বরাদ্দগুলো উপ-বরাদ্দ বা ছাড় দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ৮ উপজেলা এবং ৭টি পৌরসভায় ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার নগদ অর্থের চেক এবং বরাদ্দকৃত ৮২ মে. টন চাল পৌঁছে গেছে।
এর মধ্যে ২৬ জুলাই কোভিড-১৯ এবং বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্যে জেলার ৭ পৌরসভার প্রত্যেক পৌরসভাকে নগদ দেড় লাখ টাকা করে সর্বমোট সাড়ে ১০ লাখ টাকা এবং ১২ মে. টন করে সর্বমোট ৮২ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলাকে ১০ মে. টন চাল দিয়েছে। বাকি ৬ উপজেলাকে ১২ মে.টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৬ জুলাই জেলার ৮ উপজেলার প্রত্যেক উপজেলাকে ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করে অনুরােধকারীদের জন্যে ২ লাখ টাকা করে সর্বমোট ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৬ জুলাই ৫১.০১.১৩০০.০০০.৪১.০০২.২১- ৩৭০ নং স্মারক এবং ৫১.০১.০০০০.০১৫. ২০. ০৬৭.২১- ০৯ নং পত্রে জেলার ৭টি পৌরসভার প্রত্যেক পৌরসভাকে দেড় লাখ টাকা করে সর্বমোট ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত এই অর্থ কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্যে বিতরণের কথা বলা হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্ত ৭টি পৌরসভা হলো চাঁদপুর পৌরসভা, হাজীগঞ্জ পৌরসভা, কচুয়া পৌরসভা,
মতলব উত্তর ছেংগারচর পৌরসভা, মতলব পৌরসভা ও শাহরাস্তি পৌরসভা।
এ পত্রে বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়ে উল্লেখিত শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে, (ক) পৌরসভার মেয়রগণ উপ-বরাদ্দকৃত ত্রাণ কার্য (নগদ) অর্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকসহ কর্মহীন ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করবেন। (খ) ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার যােগ্য ব্যক্তিদেরকে এ বরাদ্দ থেকে খাদ্য সহায়তা (চাল, ডাল, লবন, তেল, আলু ইত্যাদি) প্রদান করবেন। (গ) মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০১২-২০১৩ অনুসরণপূর্বক এ বরাদ্দ বিতরণ করবেন এবং নিরীক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন। (ঘ) পৌরসভারগণ বরাদ্দপত্রটি তাঁর ওয়েবসাইটে আপলােডকরাসহ উপ-বরাদ্দপত্রও তাঁর ওয়েব সাইটে আপলােড করবেন। এছাড়া
উপজেলার তথ্য বাতায়নে সকল বরাদ্দপত্র আপলােড করবেন। (ঙ) উপ-বরাদ্দকৃত নগদ অর্থের ক্রসড চেক এ কার্যালয় হতে তার একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে গ্রহণ করবেন। (চ) উপ-বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যয় বিবরণী অত্রাফিসে/দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে প্রেরণ করবেন এবং নিরীক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন।
২৬ জুলাই ছাড় পাওয়া আরেকটি পত্রে উপরোক্ত জেলার ৭টি পৌরসভার প্রত্যেক পৌরসভাকে ( শুধু ফরিদগঞ্জ পৌরসভাকে ১০ মে.টন) ১২ মে. টন করে সর্বমোট ৮২ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। যার স্মারক নং : ৫১.০১.১৩০০.০০০.৪১.০১১.২১- ৩৬৮ এবং পত্র নং ৫১.০১.০০০০.০১৫.২০.০৬৭.২১- ০৯। বরাদ্দকৃত এই চাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে
ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
এ পত্রে বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়ো উল্লেখিত শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে (১) উপ-বরাদ্দকৃত ত্রাণ কার্য (চাল) বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকসহ কর্মহীন ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করবেন। (২) ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার যােগ্য ব্যক্তিদেরকে এ বরাদ্দ থেকে খাদ্য সহায়তা (চাল, ডাল, লবন, তেল, আলু, ইত্যাদি) প্রদান করবেন ।
(৩) মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০১২-২০১৩ অনুসরণপূর্বক এ বরাদ্দ বিতরণ করবেন এবং নিরীক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয়
হিসাব সংরক্ষণ করবেন। (৪) প্রতিমাসে ব্যয় বিবরণী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে/দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে/অত্রাফিসে প্রেরণ করতে হবে। (৫) মঞ্জুরীকৃত চাল ব্যয় চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১৪৯০১০১-১২০০০১৯০৪-৩৭২২১০১ ত্রাণ কার্য (চাল) খাত হতে নির্বাহ করবেন। (৬) উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ বরাদ্দপত্রটি তাঁর ওয়েবসাইটে আপলােডকরাসহ ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে জারীকৃত উপ-বরাদ্দপত্রও তার ওয়েব সাইটে আপলােড করবেন। এছাড়া উপজেলার তথ্য বাতায়নে সকল বরাদ্দপত্র আপলােড এর প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা করবেন। (৭) উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ পৌরসভাওয়ারী উপ-বরাদ্দকৃত ত্রাণ কার্য (চাল) অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়রগণের অনুকুলে হস্তান্তর করবেন।
এর আগে গত ১৫ জুলাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ৫১.০১.০০০০.০১৫.২০.০৬৭.২১-১৫ নং পত্রে এবং৫১.০১.১৩০০.০০০.০৫.০০২.২১- ৩৬৯ নং স্মারকের একটি পত্রে জেলার ৮ উপজেলার প্রত্যেক উপজেলার জন্যে ২ লক্ষ টাকা করে সর্বমোট ১৬ লাখ টাকার বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়েছে।
বরাদ্দকৃত এই টাকা প্রতিটি উপজেলায় শুধুমাত্র ৩৩৩ ফোন নম্বরে অনুরােধকারীদের বরাদ্দ পত্রের শর্তানুযায়ী খাদ্য সহায়তা ত্রাণ কার্য (নগদ) প্রদান করা হবে। ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ পাওয়া ৮টি উপজেলা হলো, চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিল, শাহরাস্তি।
এ পত্রে উল্লেখিত শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে, (ক) কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে শুধুমাত্র ৩৩৩ ফোন নম্বরে অনুরােধকারীদের এ সহায়তা প্রদান করবেন। (খ) উপ-বরাদ্দকৃত এ অর্থ দ্বারা কি পরিমাণ উপকারভােগীকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে তার একটি সমন্বিত প্রতিবেদন অত্র কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন। (গ) এ বরাদ্দ বিতরণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রচলিত আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে প্রতিপালন করবেন এবং নিরীক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন । (ঘ) উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ বরাদ্দপত্রটি তাঁর ওয়েবসাইটে আপলােডকরাসহ উপজেলার অনুকূলে জারীকৃত উপ-বরাদ্দপত্রও তাঁর ওয়েব সাইটে আপলােড করবেন। এছাড়া উপজেলার তথ্য বাতায়নে সকল বরাদ্দপত্র আপলােড করবেন । (ঙ) উপ-বরাদ্দকৃত নগদ অর্থের ক্রসড চেক এ কার্যালয় হতে তার একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, সরকার লকডাউনে এবং অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারা বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার ন্যায় চাঁদপুরেও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তায় এই টাকা ও খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছে। ঈদের আগে এবং ঈদের পরে লকডাউন চলাকালেই এই বরাদ্দ এসেছে। আমি জেলা ত্রান ও দুর্যোগ দপ্তর থেকে এই বরাদ্দের সবটুকুই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়ে দিয়েছি। এখন তারা এই টাকা এবং চাল কর্মহীন বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে খুব দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে দিলে ঐসব মানুষের কষ্ট লাঘব হবে বহুলাংশে।
তিনি বলেন, ঈদের আগেও সরকার বরাদ্দ দিয়েছে, এবং সেসবও সংশ্লিষ্টদের বন্টন করে দিয়েছি। সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাততে খাদ্যে কষ্ট না পায়। এখন সবাই যেন এই চাল এবং টাকা দুর্ভোগি মানুষের হাতে সময়মত পৌছান।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন যেন তাদের নামে বরাদ্দকৃত সহায়তা ৩৩৩ এর মাধ্যমে বন্টন করেন, সেই নির্দেশানা তাদের দিয়ে দিয়েছি। আর যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো চাল ও টাকা পেয়েছেন, তারাও নিয়মত খাদ্য সহায়তা এবং এবং দুঃস্থ্য, কর্মহীন, অসহায় মানুষদের পৌঁছে দেবেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply