চার মাসের মাথায় শিশু মারজান হত্যার আরেক আসামি গ্রেফতার

আশিক বিন রহিম :
মাত্র ৪ মাসের মাথায় চাঁদপুর হাইমচরের আলোচিত শিশু মারজান হত্যা মামলার আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ৭জুন সোমবার দুপুরে টঙ্গী গাজীপুর থেকে সোহাগ বেপারী (২২) নামের এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল ইসলাম। আটক সোহাগ ইশানবালার শফিউল্লাহ বেপারীর পুত্র। সে মারজানা হত্যা মামলার এজহারভুক্ত ৩ নং আসামী।

শিশু মারজানের ঘাতকরা। ইনসেটে শিশু মারজান।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়ুয়া তার ফেসবুক আইটিতে আটকের ছবি দিয়ে
বিষটি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মামলার আরেক আসামি নান্নু চৌকিদারকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, ঘটনার তারিখ ও সময় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর। স্থান চাঁদপুরে হাইমচরের দুর্গম চর ঈশানবালা গ্রাম। ওই গ্রামের মোকশেদ হাওলাদারের কন্যা মারজানা (৯) স্থানীয় চর কোড়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মারজানারর মা মেয়েকে ১০০ টাকা দিয়ে বাজারে পাঠায়। বাজারে যাওয়ার পথে স্থানীয় নান্নু মিয়া মারজানের মুখ চেপে ধরে জনৈক নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে সে সহ ৪ জন নর পশু জোড় পূর্বক পালা ক্রমে ধর্ষন করে। মারজানের গোপনাঙ্গে রক্তের ধারা বয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মারজান। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে এ কারনে ৪ পাষন্ড নরপশু গলা টিপে হত্যা করে মারজানকে। পরে পাশের একটি ডোবা মারজানার লাশ ফেলে রাখে।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরু হলেও মেয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় সবাই এদিক সেদিক খুঁজাখঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত মারজানের উলঙ্গ প্রাণহীন দেহ পাওয়া যায় হাইমচর থানার ঈশানবালা এলাকায় মারজানের বাড়ীর অদুরে নদীর পাড়ে। ধর্ষক ও হত্যাকরীরা এলাকার সুবিধাবাদী মহলের যোগসাজসে সুকৌশলে মারজানকে জ্বীনে মেরেছে বলে প্রচার করে মারজানের মৃতদেহ দাফন করা হয় স্থানীয় কবর স্থানে।
কিন্তু হতভাগী মারজনের মা- বাবার মন কিছুতেই সায় দেয়না যে, মেকে জ্বীনে মেরেছে। ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারী মারজানার বাবা বাদি হয়ে দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে জালাল মিয়া হাওলাদার (২১) , কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম গং দের আসামী করে মামলা করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুর এর আদালতে। আদালত ওসি হাইমচর থানাকে সরাসরি মামলা রজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানার মামলা নং ০৪ তারিখ ১৬/০১/১৮ ইং ধারা -৩০২/৩৭৬/২০১/৩৪/১০৯ দ: বি রজু হয়। তদন্ত ভার দেয়া হয় হাইমচর থানার এস আই সুমন মিয়াকে। ১ বছরে ও মামলাটির তদন্তে উল্লেখ যোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপার চাঁদপুর মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। আই ও নিয়োগ করা হয় ডিবির এস আই শামীম আহম্মদকে। এস আই শামীম বদলী সুত্রে অন্যত্র গেলে ১০ফেব্রæয়ারি ২০২০ ইং এস আই রেজাউলকে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়। এক মাসের মাথায় এস আই রেজাউল মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদার কে গ্রেফতার করেন শরিয়তপুর থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু সে নিজে সহ এজাহার নামীয় ৩ আসামী মারজানকে নারকীয় ভাব ধর্ষন ও হত্যার লোমহর্ষক বিবরন দেয় এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়।
এদিকে ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া ডিবি চাঁদপুরের দায়িত্ব গ্রহনের পর এ মামলাটির তদন্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আই ও কে বিশেষ দিক নির্দেশনা দেন।
ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মাহবুবুর রহমান পিপি এম (বার) এর দিক নির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জনাব মিজানুর রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭ জুন বেলা ২ টার সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন এর টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় এস আই রেজাউল করিম সহ সঙ্গীয় ফোর্স এজাহার নামীয় অন্যতম আসামী মোঃ সেলিম বেপারী (২২) , পিতা- শফিউল্লাহ বেপারী, সাং-সুরুজ সরকার কান্দি, চরবাও, ঈশানবালা , থানা- হাইমচর জেলা- চাঁদপুরকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে শিশু সন্তান মারজান হত্যার ২ আসামী গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দর্জি দোকানী অসহায় মকসুদ হাওলাদার। তার এখন একটাই প্রত্যাশা, অভিযুক্তের যেনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
প্রসঙ্গত, ঈশানবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল নিহত মারজান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিল সে।
ওসি ডিবি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, আসামি সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন সহ আদালতে প্রেরণ হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply