চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়!

ডিসিকে আদালতের সার্টিফাইড কপি পাঠানোর দ্বিতীয়বার নির্দেশ
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
উচ্চ আদালত কর্তৃক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় কারাগারে থাকা বিতর্কিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে মামলার সার্টিফাইড কপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে অফিসিয়ালি দু’বার চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু মামলার সার্টিফাইড কপি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক না পাঠানোর কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে থেকেও সেলিম খান এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০ নভেম্বর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে দেয়া মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য দায়েরকৃত মামলার সার্টিফাইড কপি প্রেরণের জন্য গত ২ নভেম্বর ৮২৮নং স্মারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিষয়টি জরুরী হওয়ায় দায়েরকৃত মামলার সার্টিফাইড কপি দ্রুত প্রয়োজন। তাই মামলার সার্টিফাইড কপি দ্রুত প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে সেলিম খান এখনো চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকায় বিস্মিত স্থানীয় লোকজন। তারা মনে করছেন, প্রভাবশালী চক্র নানামুখী তদ্বিরের মাধ্যমে সেলিম খানকে এখনো চেয়ারম্যানের পদে বহাল রেখেছেন।
এর আগে সেলিম খানকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গত ১৬ অক্টোবর চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গত ১২ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সেলিম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় এবং অপরাধ আদালত কর্তৃক আমলে নেয়ায় স্থানীয় সরকার আইনের (৩৪)১ ধারা অনুসারে উক্ত চেয়ারম্যান কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থি এবং প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় বিধায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসক বরাবর। আর ওই প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন যে চিঠিটি প্রেরণ করেছে, তা মূল কপি ছিলো না। এটি ছিলো ছায়া কপি। কিন্তু এ ধরনের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের স্বাক্ষরিত মূল কপিটি প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান বলেছিলেন, নথিটি চলমান আছে। যখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত দিবেন তখন আমরা জানাতে পারবো। এর আগে কিছু বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা লোপাট চেষ্টাকাণ্ড এবং বহু বছর ধরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে বিপুল সংখ্যক ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করে অবৈধ বালু ব্যবসার সূত্র ধরে আলোচনায় আসেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। তার অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে প্রশাসন। বন্ধ করা নদী থেকে বালু উত্তোলন। ঠেকিয়ে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের নামে ৩৫৯ কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টা। এরই মধ্যে এসব বিষয়ে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। সেলিম খানের অঢেল অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়ে মামলা দায়ের করা হয়। অপরদিকে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তাদের তৎপরতায় বিজ্ঞ উচ্চ আদালত থেকে সেলিম খানের বিপক্ষে একাধিক রায় আসে। তাকে হাইকোর্ট ঘৃনিত ব্যক্তি হিসাবে আখ্যয়িত করে এবং রিট করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ে কাল ক্ষেপন করায় আদাল তাকে অর্ধকোটি টাকা জরিমানা করে। সে জরিমানার টাকাও সে জমা দেয়। এছাড়া তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। তাছাড়া তার বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। পরে উচ্চ আদালতের ২টি রায়েই সেলিম খানের অবৈধ বালু উত্তোলন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে দুর্নীতি ও অপকর্ম চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। সবশেষ দুদকের মামলায় গত ১২ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, সেলিম খান অবৈধ উপায়ে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতি পূর্ণভাবে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন। এছাড়া তিনি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। সেলিম খান যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন, তা যাচাই-বাছাই করে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন